দিল্লী ঃ গত ১৬ই এপ্রিল পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে (পঞ্জাব) ‘শিক্ষা ও নব্যমানবতাবাদ বিষয়ে মহান্ দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের অবদানে’র ওপর এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়৷ এই আলোচনা সভায় উপরিউক্ত বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখতেআনন্দমার্গের প্রবীণ সন্ন্যাসী আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূতকে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷
পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপিকা ললিতা শর্র্ম ও আধ্যাপিকা নন্দিতা সিংএর উদ্যোগে এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়৷
এই আলোচনাসভায় আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংকীর্ণ সেন্টিমেন্ট সমাজে প্রভাব বিস্তার করেছে বা এখনও করে থাকে৷ এগুলি মানবসমাজের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে৷
যেমন ‘জিও সেন্টিমেন্ট’ অর্থাৎ কোনো বিশেষ স্থানকেন্দ্রিক সেন্টিমেন্ট৷জি ও-সেন্টিমেন্টের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ অন্য স্থান বা এলাকার মানুষের ক্ষতি সাধন করেন ৷ তাতে পারস্পরিক সংঘর্ষে দুইপক্ষেরই ক্ষতি হয়৷তেমনি সোসিও-সেন্টিমেন্ট বা গোষ্ঠীগত সেন্টিমেন্ট (যেমন জাতপাত, সম্প্রদায় কেন্দ্রিক সেন্টিমেন্ট) বা এইধরনের সেন্টিমেন্টও মানব সমাজের অশেষ ক্ষতিসাধন করেছে ও বর্তমানেও করছে৷ এইসব সংকীর্ণ সেন্টিমেন্ট থেকে মানুষকে মুক্ত হতে হবে৷ এর পর আছে তথাকথিত মানবিক সেন্টিমেন্ট৷ এতে মানুষকে ভালবাসার কথা বলা হলেও পশুপক্ষী-তরুলতা---এসবের মান্যতা দেওয়া হয় না৷ এই পৃথিবীতে মানুষের ও যেমন অধিকার আছে, তেমনি অন্যান্য পশুপক্ষী তরুলতারও অধিকার আছে৷ মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, মানবতার যে মাধুর্য--- যে সর্বমানবের প্রতি ভালবাসা--- এই মাধুর্যকে বিশ্বের সর্বজীব-সর্বপ্রকার উদ্ভিদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে হবে,--- এই হ’ল নব্যমানবতাবাদ৷
বিশ্বকে পরমব্রহ্মের বিকাশ হিসেবে জেনে সবার প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ববোধকে জাগাতে হবে৷আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মধ্য দিয়ে মানুষ তিনটি ধাপে এগিয়ে এই নব্যমানবতায় প্রতিষ্ঠিত হবে৷
আধ্যাত্মিকতার নিত্য অভ্যাসের ফলে মানুষ আধ্যাত্মিক সূক্ষ্মানুভূতি লাভ করবে, তখন সর্বজীবের প্রতি ভালবাসা জাগবে৷ তারপরের ধাপে সবকিছুই পরমপুরুষের বিকাশ এইবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বসত্তার প্রতি ভালবাসা ও সর্বসত্তার প্রতি দায়িত্ববোধে অভিষিক্ত হবে৷ সে তখনসমগ্র বিশ্বকে এক আনন্দপরিবার রূপে ভাববে৷ এই নব্যমানবতাবাদই সমগ্রবিশ্বকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করবে৷