প্রাউটের দৃষ্টিকোন - সাম্প্রদায়িকতার ভয়াবহতা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

মানুষ যে জাতপাত ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায় সেটা কি স্বাভাবিক, না কৃত্রিম? স্বাভাবিক বিভাজন কোষ বিভাজনের মত – একটা  কোষ যেমন দু’টো কোষে বিভাজিত হয়৷ কৃত্রিম বিভাজন এরকম নয়৷ কাজেই, মানুষের জাতি ও সম্প্রদায়গত ভেদকে কী বলা যাবে–স্বাভাবিক বিভাজন, না কৃত্রিম বিভক্তিকরণ? বৈরী শক্তিগুলির মধ্যে কিছু দল আছে যেগুলো বিচ্ছিন্নতার মতাদর্শে চালিত হয় ও কিছু লোকও আছে যারা এই সব বিভেদকামী দলগুলির দ্বারা চালিত হয়৷ এই সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব হবে? কীভাবে আমরা এই সব যুযুধান দলগুলিকে একটা অচল সেকেলে ভাবাদর্শকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা থেকে নিবৃত্ত করতে পারব যা দেশকে খণ্ড বিখণ্ড করে দিতে পারে? কী করা উচিত? আমাদের স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিগুলি কী হওয়া দরকার? ব্যবস্থাটা দু’রকমই হতে হবে–ভৌতিক •psychical— ও মানসিক •physic—৷ শুধুমাত্র কি অর্থনৈতিক তত্ত্বেই এর সমাধান হবে, না আরও কিছু করার দরকার? শিক্ষা একটা দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম •programme—৷ কিন্তু ভৌতিক •physical— ও মানসিক •psychic— ক্ষেত্রে আশু কর্ত্তব্য কী হওয়া উচিত? দেশ একটা চরম সংকটকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ তাই তোমাদের সবকিছু ভালভাবে জেনে নিতে হবে৷

রাজনীতিতে ভেদনীতি অর্থাৎ ‘বিভেদ সৃষ্টি কর ও শাসন কর’ •divide and rule— বলে একটা তত্ত্ব আছে৷ শুধুমাত্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে হীনবল করতে ব্রিটিশ সরকার সম্প্রদায়গত বিভাজনকে উৎসাহ দিয়ে ভারতীয় জনগণকে মুসলমান অমুসলমান এইভাবে বিভক্ত করার কর্মসূচী নিয়েছিল৷ তারা চেয়েছিল যে দেশের জনগণকে জাতি, তপশীলভুক্ত জাতি, উপজাতি , মুসলমান–মুসলমা ও সাধারণ জাতি এইভাবে বিভক্ত হয়ে থাকুক৷ আমাদের নেতাদের এই ধরনের বিভাজন মেনে নেওয়া উচিত হয় নি৷ বরং সেই সময় তাঁদের বলা উচিত ছিল যে জাতি বা সম্প্রদায়গত ভিত্তিতে নয়, অগ্রাধিকার হ্মব্জন্দ্বন্দ্রন্দ্বব্জ্ দিতে হবে সামাজিক–আর্থিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতার ভিত্তিতে ৷ কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জাতপাতের গোঁড়ামি অথবা সাম্প্রদায়িক সেন্টিমেন্টের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছিল৷ সেইজন্যই তারা ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করেছিল৷

(ভারতের) স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে মহাত্মা গান্ধী একটা বিরাট ভুল করেছিলেন৷ নিজের নির্দোষিতার ভাবমূর্ত্তি বজায় রাখতে তিনি বলেছিলেন যে তিনি সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা সমর্থনও করবেন না, কিন্তু তার বিরুদ্ধে বোটও প্সব্ধন্দ্বগ্গ  দেবেন না৷ অর্থাৎ কিনা, তিনি এটাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করলেন৷ এর পরে দেশে যা ঘটল সেটা মহাত্মা গান্ধীর হিমালয়সম ভ্রান্তির ফলেই ঘটল৷ সেই সময় এটা বলা যথার্থ হত – ‘‘না, আমি সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা সমর্থন করি না৷’’ না, সেটা কিন্তু তিনি বলেন নি কারণ তাঁর দলীয় কর্মীরা ও নেতারা মন্ত্রী হবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল, আর সেইজন্য তারা তাঁকে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের জন্যে চাপ দিচ্ছিল৷ মহাত্মা গান্ধী এটাকে মানলেনও না, কিন্তু বিরুদ্ধেও গেলেন না৷ এরপরে দেশে যা ঘটে গেল সেটা মহাত্মা গান্ধীর কৃতকর্মের ফল৷ সেই সময়ে তাঁর (স্পষ্ট) বলা উচিত ছিল যে দেশকে বিভক্ত করে তার সংহতি আমরা নষ্ট করতে পারি না৷ সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারার পরিণতি হ’ল দেশটা পাকিস্তান, ভারত ও ৰাঙলাদেশ এই তিন টুকরোয় বিভক্ত হয়ে গেল৷ এটা হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীর মহাভুলের ফলে আর সেই ভুলটা তিনি করেছিলেন দলীয় নেতাদের চাপে পড়ে৷ তারা মন্ত্রীত্ব পেতে তৎপর হয়ে উঠেছিল কারণ সেই সময় ভারত সরকারে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন আদায়, মন্ত্রীত্ব পাওয়া, দু’টো নূতন প্রদেশ সৃষ্টি (ওড়িশা ও সিন্ধু) ও সিংহল (শ্রীলঙ্কা) ও ব্রহ্মদেশকে (মায়ানমার) ভারত থেকে আলাদা করা, এই সব সুযোগ এসেছিল৷

১৯৩৫ সালে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন ঘোষিত হয়েছিল কিন্তু সেটা কার্যকরী হয়েছিল ১৯৩৭ সালে৷ সিন্ধু স্বায়ত্বশাসনে সম্মত হয়েছিল কারণ ভারতের কোনো একটি সংখ্যালঘু দল সেখানে সংখ্যাগুরু ছিল৷ আর ওড়িশা সৃষ্ট হয়েছিল তার প্রাকৃতিক অবস্থানগত প্রয়োজনে৷ কোনো মানসিক ভাবাবেগের জন্যে নয়৷ সেই সময় ওড়িশার লোকদের রাজধানী পটনায় যেতে খুবই অসুবিধা হত কারণ তাদের কলকাতার ওপর দিয়ে পটনায় যেতে হত৷ এই জন্য তারা দাবী করল যে হয় ওড়িশাকে ৰাঙলার সঙ্গে যুক্ত করা হোক নতুবা ওড়িশাকে একটা আলাদা প্রদেশ করা হোক৷ তাদের দাবী ছিল যে ওড়িশাকে বিহারে রাখা চলবে না কারণ পটনায় যেতে হলে তাদের কলকাতার ওপর দিয়ে যেতে হয়৷ ওড়িশার সৃষ্টি খারাপ ছিল না কিন্তু সিন্ধুপ্রদেশের সৃষ্টি খারাপ হয়েছিল৷ এগুলি ছিল ১৯৩৫ সালে ভারত সরকার প্রবর্ত্তিত প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের বিষাক্ত ফল৷