প্রাউটের দৃষ্টিকোন থেকে বাঙলায় শোষণের স্বরূপ

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসানের পর ১৯৪৭ সালে ৰাঙলা বিভাগের মধ্য দিয়ে এল ভারতীয়–সাম্রাজ্যবাদ্ শোষণের যুগ৷ স্বাধীনতা লাভের প্রথম পর্বে ক্ষুদ্র পশ্চিমবঙ্গ ছিল ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে সবচেয়ে বেশী অগ্রসরমান রাজ্য৷ পশ্চিমবঙ্গের আঞ্চলিক আয় ছিল অন্যান্য রাজ্যের আঞ্চলিক আয় অপেক্ষা বেশী৷ বহু ৰাঙলার শিল্পপতি তখনও পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বিরাজ করত৷ বহিরাগত শোষকেরা তাদের পরিকল্পনা মাফিক পশ্চিম ৰাঙলার শিল্প ও বাণিজ্যের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে থেকে ৰাঙলার শিল্পপতিদের উৎখাত করতে শুরু করে৷ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গেই ৰাঙলা–বঞ্চনার কাজ নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক শুরু হয়ে যায়৷ স্বাধীনতা লাভের পরে পরেই পাটের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গের কৃষিজমি পাটচাষের জমিতে রূপান্তরিত হয়ে গেল৷ এর ফলে চাষীরা দু’দিক থেকে মার খেল৷ ধানজমি থেকে তাদের আয় বন্ধ হয়ে গেল৷ অন্য দিকে পাটের উৎপাদন খরচ বা বাজারদরও ৰাঙালী চাষীরা পেল না৷ বহিরাগত শোষকেরা কিন্তু দু’ তরফা লাভ করল৷ এক, সমুদয় পাট তারা বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রার সবটুকু আত্মসাৎ করল৷ আর দুই, নিজস্ব এলাকায় উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় ধান তারা পশ্চিমবঙ্গে ঢ়েলে দিল৷ অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে মোট আশিটি পাটকল৷ ওই সমুদয় পাটকলগুলির মালিক হ’ল বহিরাগত পুঁজিপতি৷ এরা কোটি কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করত৷ কেন্দ্রীয় সরকার ৰাঙলার পাট বিদেশে রপ্তানী করে বছরে আয় করে কোটি কোটি টাকা আর পাটজাত দ্রব্যের ওপর নানাবিধ ট্যাক্স, শুল্ক ইত্যাদি বাবদ আয় করে আরও অনেক কোটি টাকা৷ কেন্দ্রের কুড়ি শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আসে ৰাঙলার পাট থেকে৷ ৰাঙলার পাট চাষীরা তাদের উৎপাদিত সম্পদ থেকে তাদের পরিশ্রমের ফসল থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত৷ পশ্চিমবঙ্গও তার নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বিন্দুমাত্র লভ্যাংশও পায় না৷ কেন্দ্রীয় সরকার কম দামে মহারাষ্ট্র–গুজরাটক্ তুলা বিক্রয় করে৷ ৰাঙলার চাষীদের তার চেয়ে অনেক বেশী দামে কিনতে হয়৷ ফলে ৰাঙলার সুতি ও তাঁতবস্ত্রের উৎপাদন খরচ বেশী পড়ে৷ চীনীর ক্ষেত্রেও সেই একই ব্যাপার৷ ৰাঙলার খনিজ সম্পদ লোহা, কয়লা ইত্যাদি যখন অন্য রাজ্যে বিক্রী করা হয় তখন ৰাঙলাকে বিনালাভে তা দিতে হয় কিন্তু অন্য রাজ্য থেকে ৰাঙলাকে তেল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হলে অধিক মূল্য দিতে হয়৷

বহিরাগতদের শোষণে ৰাঙলার ৯০ শতাংশ মানুষ আজ দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে এসেছে৷ ৰাঙলার অর্থনৈতিক কাঠামো আজ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ৰাঙলা থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি টাকা বহিরাগত শোষকদের মারফৎ ৰাঙলার বাইরে চলে যাচ্ছে৷ ৰাঙলার নিজস্ব শিল্প–উদ্যোগগুলি আজ প্রায় নির্মূল৷ ব্যবসা–বাণিজ্য সমেত বাঙলার গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলগুলিও বহিরাগত শোষকদের হাতে৷ ৰাঙলার এক কোটিরও বেশী কর্মক্ষম যুবক কর্মহীন, অন্যদিকে চাকুরী ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ লোককে ৰাঙলার বাইরে থেকে আনা হয়৷