দীর্ঘ ৪৮ বছর প্রতীক্ষার পর অবশেষে গত ১৫ই জানুয়ারী ভারতের প্রথম লোকপাল নিয়োগের সিদ্ধান্ত পাকা হ’ল৷ প্রথম লোকপাল নির্বাচিত হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী বিচারপতি পিনাকিচন্দ্র ঘোষ৷
কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও আমলাদের দুর্নীতি ব্যাপারে তদন্তের জন্যে এই লোকপাল নিয়োগ৷
১৯৬৩ সাল থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্যে লোকপাল নিয়োগের দাবী নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছিল, কিন্তু বাস্তবে এই প্রস্তাব কার্যকর করার জন্যে কোনো সময়ই সরকার আগ্রহী হননি৷ অবশেষে সমাজকর্মী আন্না হাজারের অনশন আন্দোলনের পর সরকার নড়ে চড়ে বসেছিলেন৷ তাও আন্না হাজারের চাপে ২০১৪ সালের ১৬ই জানুয়ারী লোকপাল আইন পাশ হলেও লোকপাল নিয়োগের ব্যাপারটা ঝুলেই ছিল৷ পুনর্বার আন্না হাজারে সম্প্রতি অনশন আন্দোলনে বসেন৷ তারপর প্রশান্ত ভূষণের সংস্থা ‘কমন কজ’ এই লোকপাল নিয়োগ ব্যাপারে টালবাহানার অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে সুপ্রিম কোর্টের চাপে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়৷
১৫ই মার্চ লোকপাল নিয়োগ কমিটির এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ,লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন ও আইনজীবী মুকুল রোহতগি৷ বিরোধী দলনেতা হিসেবে কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়গেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি বৈঠকে হাজির হননি৷ এই বৈঠকে সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পিনাকিচন্দ্র ঘোষকে লোকপাল পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হ’ল৷
সপ্তাহখানেকের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে ভারতের ১ম লোকপাল রূপে নিয়োগ করা হবে৷
লোকপাল নিয়োগ ব্যাপারে আন্না হাজারের প্রতিক্রিয়া ঃ ‘‘লোকপাল নিয়োগ হচ্ছে শুণে আমি খুব খুশি৷ ৪৮ বছর পর জনতার আন্দোলন সফল হয়েছে৷ লোকপালের কাছে কোনো একজন সাধারণ মানুষও দুর্নীতির প্রমাণ দিলে প্রধানমন্ত্রী বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী বা আমলার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে৷’’ আন্না হাজারে আরও বলেন, ‘‘অচিরেই মানুষ এর শক্তি বুঝতে পারবেন৷’’
প্রাক্তন বিচারপতি পিনাকিচন্দ্র ঘোষ ২০১৭ সালের মে মাসে বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন৷ বর্তমানে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য৷
বলা বাহুল্য বাঙালী বিচারপতি হিসেবে পিনাকি চন্দ্র ঘোষ কর্মজীবনে অনমনীয়, আপোষহীন মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিলেন৷ দুর্নীতিরোধে তা সে যে কেউ হোক না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হননি৷ ২০১৫ সালে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি মামলায় তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন তিনি৷
দুর্নীতি বর্তমান দেশের বোধকরি সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ বিশেষ করে প্রশাসনের শীর্ষে৷ তাই লোকপাল কতটা দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারবে, সেদিকে উৎসুকভাবে তাকিয়ে থাকবে দেশের জনসাধারণ৷
বলাবাহুল্য, কেন্দ্রে যেমন লোকপাল নিয়োগের কথা,তেমনি প্রতিটি রাজ্যেই সরকারের ওপর মহলের দুর্নীতিরোধের জন্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে৷