আধুনিকতার নামে বর্তমানে শিশু, বালিকা, কিশোরী ও যুবতীদের বেশভূষায় যেভাবে পরিবর্ত্তন আনা হচ্ছে তা অতীব নিন্দনীয়৷ কিন্তু যাঁরা এই পরিবর্ত্তন আনছেন তাঁরা কি সত্যিই মানুষ পদবাচ্য? অর্থকরী দিকটাই তাঁরা ভেবে এ কাজে নেমেছেন, কিন্তু এর মন্দ প্রতিফলন সমাজের মানুষকে কতখানি অধোগতির পাঁকে নিমজ্জিত করছে সে খেয়াল তাঁদের আছে কি? তাঁরাও তো মানুষ? তাঁদেরও বিবেক চেতনা থাকা উচিত নয় কি? অর্থের হাতছানি দিয়ে কতকগুলো মানুষকে কতখানি পশুত্বে পর্যবসিত করতে পারে তার নজির এঁরা রেখেই চলেছেন.....৷ বেশভূষার ওপরে এক জন মানুষের মানসিকতার অনেকটাই নির্ভর করে৷ তাই নয় কি?
যাঁরা প্রতিবাদ করলে কাজ হবে তাঁরা নারীদের পোষাকের ব্যাপারে নিশ্চয় মাথা ঘামাচ্ছেন বা ঘামাবেন, আমার ধারণা৷ ঘরে ঘরে পত্র–পত্রিকা (বিভিন্ন), দূরদর্শন৷ অশ্লীল পোষাক–পরিচ্ছদ পরিহিত প্রায় নগ্ণ নারীদের ছবি সহ বিজ্ঞাপন৷ অশ্লীল পোষাক–পরিচ্ছদ পরিধান করে দাপিয়ে বেড়ানোর মধ্যে যেন বাহাদুরি দেখানোর মনোভাব৷ এই সমস্ত প্রায় নগ্ণ পোষাক পরে উদ্ধত ভাবভঙ্গী দেখানোর অপচেষ্টা সে তো নির্লজ্জ–বেহায়াপনা ছাড়া আর কি হতে পারে? যাঁরা জ্ঞান–গরিমায় সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন ও তাঁদের প্রতিবাদী পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের বিবেক–চেতনায় আঘাত দেবে ও ওই সব মানুষ ফিরে দেখায় চিন্তাশীল করে তুলবে বলে আমার মনে হয়৷ পোষাকের ব্যাপারে অবিলম্বে সচেতনার প্রয়োজন নইলে চারিত্রিক অধোগতি কেউ ঠেকাতে পারবে না৷ দৃষ্টিকটু পোষাক বর্ত্তমানে ছুঁচ থেকে চালুনির আকার ধারণ করেছে৷ অনেকেই নারীদের পোষাক নিয়ে সমালোচনা করছে কিন্তু সংসৃক্তিমনস্ক্ মানুষেরা দৃৃ পদক্ষেপ না নিলে অসহায়ভাবে সাধারণ মানুষ দর্শক হয়েই থাকবে৷ সমাধান হবে না৷ মানুষ যদি জেগে ঘুমোয় তাহলে তাদের জাগানো কি সম্ভব?
পৌরাণিক যুগ থেকে বর্ত্তমান যুগ পর্যন্ত নারীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় অনেকটাই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে, তার অর্থ এই নয় যে নারীরা যথার্থই প্রগতি বা শুভের পথে হাঁটছে৷ আন্তরিকভাবে চিন্তা করলে বোঝা যাবে নারীর প্রগতি তেমন কিছু হয়নি৷ কতিপয় নারী তো বেশভূষায়, প্রসাধনে, বিলাস–ব্যসনে (জিন্সের প্যাণ্ঢ, টপ ও শার্ট)–এ আটকে আছে অতি দ্রুতগতিতে এদের যে অধোগতি হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আচার–আচরণই বলে দিচ্ছে রমনীর কমনীয় ভাব প্রায় অস্তমিত৷ আধুনিক পোষাক পরলেই স্মার্ট হওয়া যায় না৷ স্মার্টনেসের যথার্থ অর্থ তা নয় এটা জানা প্রয়োজন৷ শিখে বুঝে সেইমত চলাতেই আনন্দ৷ না জেনে বুঝে চলাটাই তো অধোগতির লক্ষণ৷ মানুষ বলেই তো আমরা ভেবেচিন্তে পোষাক পরবো৷ পোষাকে মানুষের ব্যষ্টিত্ব ফুটে ওঠে চেহারায়৷ পশুপাখী অর্থাৎ জীব–জন্তুরা তো পোষাক পরেনা, কই তাদের নগ্ণরূপ দেখে কেউ বিকৃত রুচীর পরিচয় তো দেয় না৷ কারণ তাদের সেটাই স্বাভাবিক৷ যত ধ্বংস ও অধোপাতে যাওয়ার মূলে কিন্তু নারীরাই (কতিপয়) কার্যতঃ দায়ী৷ পরিশেষে বলি, শুভের পথে প্রকৃষ্টরূপে প্রগতির অর্থই হচ্ছে আধ্যাত্মিকতা৷
শ্রদ্ধেয় কল্যাণীদি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই৷ সম্প্রতি বাঙালী মহিলা সমাজের একটি ব্যানার নিয়ে পোষাক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এই লেখাটি এখানে প্রকাশ করা হ’ল৷ তিনিও বাঙালী মহিলা সমাজের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন৷
- Log in to post comments