গত ১২ই মার্চ উত্তর কলকাতার বিশিষ্ট আনন্দমার্গী শ্রী সত্যনারায়ণ গুপ্তা সানফ্লাওয়ার নার্সিং হোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন৷ বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন৷ সবশেষে তাঁর কিড্নি কাজ করা বন্ধ করে দেয়৷
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর৷ তাঁর আকস্মিক মৃত্যুসংবাদ পেয়ে এই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে৷ তিনি তো আনন্দমার্গের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেনই, তাছাড়াও তিনি উল্টাডাঙ্গা ডাল মিল এ্যাসো- সিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ৷ এই এলাকায় বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন৷
১৩ই মার্চ তাঁর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দলে দলে তাঁর আত্মীয়, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও গুণগ্রাহীরা তাঁকে দেখতে আসেন৷ ওই দিন নিমতলা শ্মাশান ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷
১৯ শে মার্চ আনন্দমার্গীয় সমাজশাস্ত্রানুসারে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়৷ খান্না সিনেমার নিকটে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা পুত্রবধূ, দৌহিত্রাদি ও স্থানীয় আনন্দমার্গীদের উপস্থিতিতে তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত৷ শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অবধূতিকা আনন্দরেখা আচার্যা, স্থানীয় বিশিষ্ট আনন্দমার্গী স্বপন সাহা, ডাঃ লক্ষ্মীকান্ত মান্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷ পরমপুরুষের নিকট সবাই তাঁর আত্মার সদ্গতির জন্যে প্রার্থনা করেন৷
শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত তাঁর বক্তব্যে বলেন, মানবজীবনের লক্ষ্য পরমপুরুষের সঙ্গে মিলিত হওয়া অর্থাৎ মোক্ষলাভ৷ সাধনা, সদ্গুরুর কৃপা ও সৎকর্মের ফলে মানুষের মোক্ষলাভ হলে স্বাভাবিকভাবে বিদেহী মন স্থূল শরীর ত্যাগ করে আত্মায় সমাহিত হয়ে যায় আর আত্মা পরমাত্মার সঙ্গে মিলে একাকার হয়ে যায়৷ এ জন্মে মোক্ষলাভ হলে জন্মান্তরের আর প্রশ্ণ ওঠে না৷ অন্যথায় মৃত্যুর পর বিদেহী মন শরীর ত্যাগ করে মহাশূন্যে ভাসতে থাকে৷ পরে প্রকৃতির রজোগুনী শক্তির সাহায্যে বিদেহী মনের সংস্কার (পূর্বজন্মের কর্র্মনুসারে প্রতিকর্মের বীজ) অনুসারে উপযুক্ত দেহ পেয়ে আবার নবজন্ম লাভ করে৷
মৃত্যুর পর স্থুল শরীর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিদেহী মন বা বিদেহী আত্মার জন্যে তণ্ডুল, বস্ত্রাদি স্থূল ভোগ্যবস্তুর কোনোমাত্র প্রয়োজনই পড়ে না৷ বিদেহী মন তথা বিদেহী আত্মার কল্যাণার্থে মানুষ কেবল পরমপুরুষের কাছে প্রার্থনা করতে পারে মাত্র৷
এরপর অবধূতিকা আনন্দরেখা আচার্যা , স্বপন সাহা প্রমুখ সত্যনারায়ণজীর স্মৃতিচারণায় তাঁর ভক্তি, আদর্শনিষ্ঠা ও সেবাভাবের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷