পরমপুরুষ-সবকিছুর-প্রাণকেন্দ্র

Baba's Name
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী

কেউ কেউ পরমপুরুষকে চিতিশক্তি বলে অভিহিত করেন কিন্তু বাস্তবে পরমপুরুষ হলেন তার অতিরিক্ত কিছু। দর্শণের বড় বড় পন্ডিতেরা বলে থাকেন যে পরমপুরুষ হলেন জ্ঞাতৃসত্তা ও পরমাপ্রকৃভি হলেন ক্রিয়াশক্তি। তোমরা জানো যে ক্রিয়াশক্তি হ’ল একটা অন্ধাশক্তি মাত্র, এর পেছনে চৈতন্যশক্তির সমর্থন থাকতেই হবে। যখন পরমাপ্রকৃতি কাজ করা শুরু করেন, ক্রিয়াশক্তি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করেন বা পালন করেন বা ধংস  করেন, সৃষ্টি-স্থিতি-ধ্বংসমূলক তিনি যা কিছু করেন বা তাঁর যা কিছু বাস্তব ক্রীয়াশীলভা তার সবই কিন্তু ভূমা চৈতন্যের অনুমতিসাপেক্ষ।

সত্যিকথা,  বলতে কী, পরমপুরুষ প্রত্যক্ষভাবে নিজে কিছুই করেন না। তিনি তাঁর সব কাজই প্রাকৃত গুনত্রয়ের দ্বারা করিয়ে নেন।  যদি দর্শণে বলা হয়ে থাকে যে  পরমপুরুষ অকর্তা কিন্তু এই অকর্তা মানে এই নয় যে তিনি কিছুই করছেন না। বাস্তবে পরোক্ষভাবে তিনি সব কিছুই করিয়ে নিচ্ছেন।  তাঁরই ইচ্ছায় পরমা প্রকৃতি সবকিছুই করে চলেছেন। তাই আমরা এ কথা বলতে পারিনা যে পরমপুরুষ হলেন কেবল জ্ঞাতৃ-শক্তি, তিনি কেবলমাত্র সাক্ষীসত্তা। --- না,  তিনি তাঁর চেয়েও অনেক বেশী।

বস্তুতঃ তিনি সব কিছুকে সৃষ্টি করেন, তিনি সব কিছু পালন করেন  ও  যথাকালে সৃষ্ট সব কিছুকে নিজের বিড়াট দেহে সংহার করে নে্‌ন, অবশ্য পরমা প্রকৃতির সাহার্য নিয়ে। পরমাপ্রকৃতি স্বেচ্ছায় কোন কিছু করতে পারেন না। তাই মুনি ঋষিরা বলে থাকেন যে এই পরমপুরুষই জীবের একমাত্র পুজনীয় , একমাত্র ধ্যেয়—মানব জীবনের ঢরমও পরমলক্ষ্য। মানব জীবনের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এই পরম সত্তাকে জীবনের পরম তথা চরম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহন করতে হবে। তাই জাগতিক বা অতি জাগতিক কোনো কিছু করতে গিয়ে মানুষকে সেই জাগতিক বা অভিজাগতিক  সত্তাগুলোর ওপর ব্রহ্মভাবের অধ্যারোপ করতে হবে।

যদি পরমপুরুষ ব্যতিরেক অন্য কোনো বস্তুকে, অন্য কোনো তত্ত্বকে প্রমাদবশতঃ আলম্বন  হিসেবে মেনে নেওয়া হয় তাহলে কি হবে? সেক্ষেত্রে সমগ্রমানব সত্তাই ঋণাত্মক প্রতিসঞ্চারের পথে স্থুলত্বে পর্যবসিত হবে ও সার্বভৌমিক মানবপ্রগতি অনিবার্যভাবে রুদ্ধ হবে। তাই মাবসত্তার সার্বভৌমিক কল্যাণের জন্যেই এটা মেনে নিতেই হবে।

যে আমাদের অস্তিত্বের প্রারম্ভিক বিন্দু হলেন যেমন পরমপুরুষ তেমনি আমাদের সকল গতির চরমতম বিন্দু হলেন এই পরমপুরুষই। মানবের যাত্রাপথের তিনি হলেন প্রাথমিক বিন্দু আবার তিনি হলেন অন্তিম লক্ষ্য। পরমপুরষ ব্যতিরেকে আমাদের অস্তিত্ব সর্বাংশে নিরর্থক। অর্থাৎ তিনি আছেন, ভাই আমিআছি ---এই যে একটা ধারনা এটাই নিহিত রয়েছে সংস্কৃত মূল ধাতু ‘কৃষ’-এর মধ্যে। তাই যে সত্তার অস্তিত্বের ওপর সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অস্তিত্ব নির্ভর করছে সেই সত্বাই হলেন কৃষ্ণ। তাই কৃষ্ণ হলেন আমাদের অস্তিত্বের প্রারম্ভিক বিন্দু তথা শেষ বিন্দু। আমরা যেন কখনও এই চরম সত্যকে ভুলে না যাই।            

–(এরণাকুলাম,১৪ইজুলা্ই ‌১৯৭৯)