প্রথম ভারতীয় হিসেবে জুডোয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হয়েছে লিনথোই চানাম্বাম

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

প্রথম ভারতীয় হিসেবে  জুডোয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হয়েছেন মণিপুরের লিনথোই৷ মহিলাদের ৫৭কেজি বিভাগে লিনথোইয়ের কীর্তি গড়ার পিছনে রয়েছে এক মজার গল্প৷

মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মায়াংয়ে বাড়ি লিনথোইয়ের৷ ছোট থেকেই জুডোর প্রতি আগ্রহ তার৷ কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে লড়াই পছন্দ ছিল না লিনথোইয়ের৷ পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে লড়াই করত৷ ছোট্ট লিনথোইয়ের সঙ্গে জুডোর লড়াইয়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনও ছেলে চোট পেত৷

ছেলেদের সঙ্গে খেলা কেন পছন্দ ছিল? লিনথোই হাসতে হাসতে বলেছে, ‘‘ছোট থেকেই জুডো খেলতে ভাল লাগত৷ তখন ভাবতাম বড় হয়ে ছেলে হব৷ বড় হলেও যে মেয়েই থাকব, এটা বুঝতে পারতাম না৷ তাই ছেলেদের সঙ্গেই খেলতাম৷ আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই ছেলে ছিল৷ দু’এক জন ছিল মেয়ে৷ সে জন্য ছেলেদের সঙ্গেই খেলতাম৷ অনেকেরই চোট লেগে যেত৷ তারপর ওদের নিয়ে বাবা-মাকে ছুটতে হত স্থানীয় হাসপাতালে৷’’

ছোট থেকে  যে খেলার প্রতি আকর্ষণ, সেই জুডোয় প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতে উচ্ছ্বসিত ১৬ বছরের কিশোরী৷ লিনথোই বলেছে, ‘‘দারুণ লাগছে আমার৷ ঠিক বলে বোঝাতে পারব না৷ মন থেকে যেতে চাইতাম, ঠিক সেটাই করতে পেরেছি৷’’

লিনথোইয়ের লক্ষ্য ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিক্সে বাল ফল করা৷ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলেছে, ‘‘প্যারিসে সোনা জিততে চাই৷ তার জন্য নিজের সেরাটাই দেব৷ ২০২৪ সালে যদি নাও পারি, ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সে সোনা জিতবই৷’’

সাত বছর বয়স থেকে জুডো শুরু  করে লিনথোই৷ বাবা কৃষিজীবী৷ মা সংসার সামলান৷ এক দিদি ও এক বোন আছে তার৷ লিনথোই বলেছে, ‘‘২০১৪ সাল থেকে জুডো খেলতে শুরু করি৷ ২০১৭ সালে কর্ণাটকের বেল্লারির ইন্সপায়ার ইন্সস্টিটিউট অব স্পোর্টসে ভর্তি হই৷ খেলার জন্য ছোট থেকে সকলের খুব সাহায্য পেয়েছি৷ যদিও বাবাই সব থেকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন আমায়৷’’ লিনথোই আরও বলেছে, ‘‘বেল্লারির আগে বাড়ির কাছেই একটা ছোট অ্যাকাডেমিতে জুডো শিখতাম৷ বাবাই নিয়ে যেতেন৷ সারাক্ষণ থাকতেন৷ বক্সিং ও ফুটবলও আমার প্রিয়  খেলা৷ আসলে বাড়ির কাছে কয়েকটা জুডো অ্যাকাডেমি থাকায় এই খেলাটাই বেছে নিয়েছি৷ বাবা সব সময় আমাকে কাছে রাখতেন৷ যেদিন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে একা তেলেঙ্গানার ট্রেনে উঠলাম, সে দিন বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন৷

লিনথোইয়ের কোচ মামুকা কিজিলাশিলি জানান--- ‘‘ওর সব কিছুই বাবা৷ বাবাকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না লিনথোই৷ ওদের বাবা-মেয়ের সম্পর্ক সত্যিই দুর্র্দন্ত৷’’ তেলেঙ্গানার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেই  প্রথম দেখেন তিনি৷ তখনই বুঝতে পারেন, মণিপুরের ছোট্ট মেয়েটার প্রতিভা রয়েছে৷ বলেছেন, ‘‘জুডো নিয়ে ওই বয়সে ওর আবেগ আমাকে অবাক করেছিল৷ ভাল অ্যাথলিট হওয়ার সব গুণই লিনথোইয়ের ছিল৷ মাত্র ১৩ বছর বয়সেই স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ায় (সাই) ওকে ভর্তি নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলাম৷ সকলেই দেখতে পাচ্ছেন তার সুফল৷’’