সত্যিই কি ভিন্গ্রহীদের কোনও অস্তিত্ব রয়েছে? এ ব্যাপারে কী বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা? ভিন্গ্রহ নিয়ে যখন আমজনতার মধ্যে উৎসাহ বাড়ছে, তখনই চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব প্রকাশ্যে আনলেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ভূবিজ্ঞানী কিয়ান ইউয়ান৷ পৃথিবীর মধ্যেই নাকি রয়েছে ভিন্গ্রহের ধবংসাবশেষ৷ আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় ইউয়ানের তত্ত্ব৷ তাঁর দাবি, ভিন্গ্রহটির ধবংসাবশেষ ভূপৃষ্ঠের উপরে পাওয়া যাবে, এ কথা ভাবলে ভুল হবে৷ সেগুলি রয়েছে ভূগর্ভের অনেক গভীরে৷ আরও স্পষ্ট করে বললে, সেগুলির হদিস পেতে নাকি পৌঁছতে হবে পৃথিবীর কেন্দ্রে৷ পাশাপাশি, নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে চাঁদের সৃষ্টিরহস্য উল্লেখ করেছেন ভূবিজ্ঞানী ইউয়ান৷ তাঁর দাবি, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি ভিন্গ্রহেরই অংশবিশেষ৷ কয়েক কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে ওই গ্রহের ধাক্কার লাগার ফলে জন্ম হয়েছে তার৷ এই সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ হাতে রয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক৷
ইউয়ানের তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে একটি ভিন্গ্রহের সংঘর্ষ হয়৷ যার আকার ছিল মঙ্গল গ্রহ বা তার থেকে সামান্য বড়৷ আমেরিকার গবেষক ওই ভিন্গ্রহটিকে ‘থিয়া’ বলে চিহ্ণিত করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, ওই সময়ে আজকের তুলনায় আকারে কিছুটা ছোট ছিল পৃথিবী৷
বিজ্ঞানীদের দাবি, কয়েকটি টেকটনিক প্লেট দিয়ে তৈরি হয়েছে ভূপৃষ্ঠ৷ এর মধ্যে যখনই একটির সঙ্গে অপরটির ধাক্কা লাগে, তখনই কাঁপতে শুরু করে মাটি৷ যাকে আমরা ভূমিকম্প বলে থাকি৷
পৃথিবীর কিছু কিছু জায়গায় আবার দুই প্লেটের ধাক্কায় বেরিয়ে আসে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা৷ তখন সেখানে হয় অগ্ণুৎপাত৷ ভূমিকম্প গবেষকের দল দেখেছিল, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে জীবন্ত আগ্ণেয়গিরির সংখ্যা অনেক বেশি৷ যার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিলেন তাঁরা৷ এর পরেই পৃথিবীর ওই অংশে ‘পৌঁছনোর’ চেষ্টা শুরু করে দেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা৷ এর জন্য ভূমিকম্পের সাহায্য নেন তাঁরা৷ ভূকম্পনের সময়ে মাটি কাঁপতে থাকায় তৈরি হয় তরঙ্গ৷ যা দিয়ে ম্যান্টলের কাছের দুই ব্লবের কাছে ‘পৌঁছে যান’ বিজ্ঞানীরা৷ পরবর্তী কালে ভূমিকম্পের তরঙ্গের উপর নির্ভর করে পৃথিবীর ভিতরের অংশের একটি মানচিত্র তৈরি করেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা৷ ভূমিকম্পের তরঙ্গ সাধারণত পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতে পারে৷ কিন্তু গবেষকেরা দেখেছিলেন, যে তরঙ্গগুলি আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার নীচের অংশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, সেগুলিই ধাক্কা খেয়ে বার বার ফিরে আসছে৷
আর ঠিক তখনই আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন পৃথিবীর ম্যান্টল অংশে ওই দুই জায়গায় মহাদেশের আকারের দু’টি ব্লব রয়েছে৷ যা ভিন্গ্রহ থিয়ার অংশ বলে বর্তমানে দাবি করছেন গবেষকেরা৷