পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চাশটি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হল ৫ম বর্ষ গল্প বলা প্রতিযোগিতা

সংবাদদাতা
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়
সময়

গল্প শুনতে ভালোবাসে না এমন শিশু খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ বাবা- মা,দাদু - দিদার হাতে এত সময় নেই তাদের গল্প শোনানোর৷ আগেকার দিনে গুরুজনেরা ছোটদের গল্পের মাধ্যমে অনেক কিছু জানিয়ে বা শিখিয়ে দিতেন৷ আর এজন্য তাঁরা বেছে নিতেন খাওয়ানো বা ঘুম পাড়ানোর সময়৷ এসময় মা - ঠাকুমারা গল্পের পাশাপাশি অনেক রকম ছড়াও বলতেন৷ সেসব দিন হারিয়ে যাচ্ছে৷ এখন সবাই ব্যস্ত৷ ছোটদের শান্ত রাখতে তাদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন বড়োরা৷ তার থেকে ছোটোরা বিভিন্ন ধরনের গেম বা কার্টুন ছবি দেখে সময় কাটাচ্ছে৷ প্রথম প্রথম গল্প শুনে ও পরবর্তী সময়ে বই পড়ে তাদের অজানাকে জানার বা কল্পনা করার যে ক্ষমতা গড়ে ওঠার কথা তা হারিয়ে যাচ্ছে৷ অতিরিক্ত যান্ত্রিকতার এই যুগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার রেণেশাঁ আর্টিস্টস এণ্ড রাইটার্স এ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করেছে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে গল্প বলা প্রতিযোগিতা৷ নামে প্রতিযোগিতা হলেও মূল উদ্দেশ্য কিন্তু শিশুদের মধ্যে গল্প শোনা,গল্পের বই পড়ার সুভ্যাস গড়ে তোলা৷ কাজটা কঠিন হলেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা গণের সহযোগিতায় ২০২৪ সালে ৫ম বর্ষ গল্প বলা প্রতিযোগিতা ও উৎসব সুসম্পন্ন হয়েছে৷ দেড় হাজারের অধিক প্রতিযোগী ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ করেছে৷ ৫ম বর্ষে শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘অনুনাসিকতা’ গল্পটি প্রতিযোগিতার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল,যা ছোটদের যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছে৷ ছোটদের উৎসাহিত করতে সকল প্রতিযোগীকেই পুরস্কার ও শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে৷ মেদিনীপুরের স্বনামধন্য বাচিক শিল্পীগণ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত থেকে গল্প বলা প্রতিযোগিতার গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ স্কুল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে আগামী বছর থেকে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা জুড়ে গল্প বলা প্রতিযোগিতার প্রসার ঘটাতে৷ এরফলে আরও বেশিসংখ্যক শিশুকে এই মহতী উদ্যোগে সামিল করা সম্ভব হবে৷ ২০২৫ সালে ষষ্ঠ বর্ষ গল্প বলা প্রতিযোগিতায় আরও বেশী সংখ্যক শিক্ষার্থী যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে এজন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা গণের সহযোগিতা আরও বেশি করে কামনা করা হয়েছে স্কুলের তরফে৷ গল্প বলা প্রতিযোগিতার পাশাপাশি পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গাছ লাগানোর বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা না থাকায় সব বিদ্যালয়ে এবছর গাছের চারা লাগানো সম্ভব হয় নি৷ এই বছর কয়েকটি বিদ্যালয়ে বত্রিশটির মত ফল ও ফুল গাছের চারা লাগানো হয়েছে৷ আগামী বছর থেকে আরও বেশিসংখ্যক গাছের চারা প্রদান ও লাগানোর উপর জোর দেওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ শিশুরা জ্ঞানার্জনের সাথে সাথে পরিবেশ বিষয়েও ভাবনা চিন্তা করুক স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই আশা রাখে৷ একারণেই গল্পের সাথে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷