পশ্চিমবঙ্গ ভেঙ্গে পৃথক রাজ্য নয় - অর্থনৈতিক অঞ্চলই সমস্যার সমাধান

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শাসক দলের দুই সাংসদ পশ্চিম বাঙলার উত্তরে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণে জঙ্গল মহল নামে দুই পৃথক রাজ্যের দাবী তুলেছে৷ এর বিরুদ্ধে রাজ্যে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট তাত্ত্বিক শ্রী প্রভাত খাঁ এক সাক্ষাৎকারে বলেন--- পৃথক রাজ্য কোন সমস্যার সমাধান নয়৷ এতে বরং রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরী হবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে৷ বর্তমানে কেন্দ্রের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কোভিড পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে৷ বহু মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ৷ এই অবস্থায় পৃথকরাজ্যের দাবী কোন সুস্থ মস্তিষ্কের রাজনৈতিক নেতারা করতে পারেন না৷ হতে পারে হারের জ্বালা মেটাতে তারা এইসব আবোল তাবোল বকে চলেছে৷ কারণ অর্থনীতির এই বেহাল দশা থেকে ত্রাণের পথ পুঁজিবাদ পুষ্ট কোনদলের নেতা মন্ত্রীদের জানা নেই৷ তাই তারা মানুষকে নানা রকম সংকীর্ণ ভাবাবেগে উৎসাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে চায়৷

শ্রী খাঁ বলেন---প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্ব তথা প্রাউটের পথেই সকল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ পৃথক রাজ্য নয়, প্রত্যেকটি জনগোষ্ঠীর জন্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সব সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ প্রত্যেকটি অঞ্চল অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী ও  স্বনির্ভর হবে৷ প্রাউট প্রণেতা অর্থনীতির সেই বাস্তব সম্মত পথ দেখিয়েছেন৷ তিনি তাঁর সন্তুলিত অর্থনীতিতে দেখিয়েছেন কীভাবে ব্লক-ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনগুলি তথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকবে৷ প্রাউটিষ্টরা এই দাবীতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে৷ কিন্তু পুঁজিবাদের অর্থে পুষ্ট কোন রাজনৈতিক দল অর্থনীতির সুষ্ঠ সমাধান চায় না৷ তাই ভারতের আজ দেউলিয়া অবস্থা৷ ভারতে সম্পদের অভাব নেই, অভাব শুভবুদ্ধির ও সুষ্ঠ পরিকল্পনার৷ প্রকৃতি ভারতবর্ষকে অঞ্জলি ভরে দিয়েছে৷ কিন্তু নেতৃবৃন্দের অনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ফলে সেই সম্পদ ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায়নি৷ মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনকুবেরফুলে ফেঁপে উঠেছে৷ এমনকি কোভিড পরিস্থিতিতে লক্‌ডাউনের কারণে যখন দেশে কয়েক কোটি মানুষ কর্মহীন হয় বে-রোজগারী হয়ে গেছে তখনও এই ধনকুবেরদের সম্পদ কয়েকশো কোটি টাকা করে বেড়ে গেছে৷ এই অবস্থায় সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষকে স্বস্তি দিতে হলে যত দ্রুত সম্ভব প্রাউটের বিকেন্দ্রিত পথে ব্লক-ভিত্তিক কৃষিনির্ভর ও কৃষিসহায়ক শিল্প গড়ে স্থানীয় মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কৃষির বাইরেও অকৃষি শিল্প ও শিক্ষা, প্রতিরক্ষা প্রভৃতি সংস্থায় মানুষের কর্মের সংস্থান করতে হবে৷

শ্রী খাঁ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন---স্বাধীনতার পর ৭০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে৷ কেন্দ্রে ও রাজ্যে সরকারের রদ বদল হয়েছে৷ এক এক সময়ে এক একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় বসেছে৷ ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে, কিন্তু জনসাধারণের হাল বদল হয়নি৷ বিধানসভা নির্বাচনে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেও ব্যর্থ হয়ে হতাশ নেতারা বাঙলা ভাগের আওয়াজ তুলছে৷ ১৯৪৭-এর বাঙলা ভাগের ক্ষত আজও শুকায়নি, আবার বাঙলা ভাগের আওয়াজ উঠলে রাজ্যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হবে যা রোখার ক্ষমতা এই সব বেয়াক্কেলে রাজনৈতিক নেতাদের নেই৷