রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ধাপ্পাবাজি নয়, চাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্র---শোষণমুক্ত সমাজ

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের নামে যা চলছে তা একটি শোষণমূলক ব্যবস্থা৷ এই রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে৷ ধূর্ত লোভী রাজনৈতিক নেতারা পুতুল মাত্র৷ পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ে মুষ্টিমেয় শোষক পুঁজিপতি গোষ্ঠী৷ তাদের  অঙ্গুলী হেলনেই নেতারা নড়াচড়া করে৷ তাই স্বাধীনভাবে  জনগণের কল্যাণ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা কোনটাই নেতা মন্ত্রীদের নেই৷ অনেকক্ষেত্রেই জনগণও স্বাধীনভাবে মত দান করতে পারে না৷  বিশ্বের বহু গণতান্ত্রিক দেশেই রাজনৈতিক গণতন্ত্রের আড়ালে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পেশীশক্তি ও আর্থিক শক্তির রমরমা চলে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগেই এটা প্রমাণিত৷ সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও এ ধরণের অভিযোগ উঠেছে৷

স্বাধীনতার পর ৭৩টা বছর চলে গেল৷ কাগজে কলমে বোটাধিকার পেলেও সেই অধিকারের সদ্‌ব্যবহার করতে পারে না৷  দেশীয় পুঁজিপতি ও তাদের অর্থেপুষ্ট রাজনৈতিক দল শাসন ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করে জালিয়াতি করে বার বার নির্বাচনে জিতে যায়৷ তারপর পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ স্বাধীনতার ৭৩ বছরের ফল---ধনী দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে৷ বেকার সমস্যা, খাদ্য ঘাটতি, দারিদ্র্য সামাজিক সুরক্ষার অভাব৷ এই ধরণের গণতান্ত্রিক  ব্যবস্থাকে প্রহসন ছাড়া কিছু বলা যায় না৷ এই রাজনৈতিক গণতন্ত্র জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজিতে পরিণত হয়েছে৷ নির্বাচনের সময় কেবল স্তোকবাক্য ও প্রতিশ্রুতির ফাঁকাবুলি শোনান হয়৷ নির্বাচনে জিতে একবার ক্ষমতায় বসতে পারলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায় থাকে না৷ বর্তমান পৃথিবীতে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশের একই হাল--- সে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র হোক, আর উদারনৈতিকগণতন্ত্র্ হোক৷ সাধারণ মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক রাজনৈতিক অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে গণতন্ত্রের নামে রাজনীতির ব্যবসা চলছে৷

গণতন্ত্রকে স্বার্থক রূপ দিতে হলে প্রাউটের পথ ছাড়া অন্য কোন রাস্তা নেই৷ প্রাউট আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে দুইভাগে ভাগ করেছে৷ প্রাউটের নীতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হবে৷ অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকবে, সৎ নীতিবাদী মানুষের হাতে, কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষমতা থাকবে সাধারণ মানুষের হাতে৷ প্রাউট এই ব্যবস্থার নাম দিয়েছে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র৷

প্রাউটের নীতি অনুযায়ী গণতন্ত্র সফল হবার প্রাথমিক শর্ত হল---নৈতিকতা, শিক্ষার প্রসার ও মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক  রাজনৈতিক সচেতনতা৷ যারা নেতৃত্বের পদে থাকবে ক্ষমতায় আসীন হবে তাদের নৈতিকতায় দৃঢ় হতেই হবে৷ নতুবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সার্বিক কল্যাণ কিছুতেই সম্ভব নয়৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক চেতনা না থাকলে উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও কায়েমী স্বার্থবাদীরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেবে৷ আর এই ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত কায়েমী স্বার্থবাদীরা পুঁজিপতিদের হাতের পুতুল হয়ে যায়৷ এদের শিখণ্ডি করে পুঁজিপতিরা অবাধে শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এদের মাধ্যমেই শোষকগোষ্ঠী প্রচার মাধ্যম (রেডিও, টি.ভি, পত্র-পত্রিকা) শাসন বিভাগ এমনকি বিচার বিভাগকেও কুক্ষিগত করে  নেয়৷ তাই এই অসার রাজনৈতিক গণতন্ত্রের হাত থেকে মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ প্রাউট৷

প্রাউটের দাবী হচ্ছে---রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয়, অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা৷ আর্থিক ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত করতে হবে তাদের সর্বনিম্ন প্রয়োজন পূর্তিকে সুনিশ্চিত করতে হবে৷ অর্থনৈতিক ক্ষমতা ক্রমবৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে হবে৷ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের  ক্ষমতা স্থানীয় মানুষের হাতে থাকবে ও স্থানীয় অর্থনীতিতে বহিরাগতের কোন  অধিকার থাকবে না৷ তাই প্রাউটের শ্লোগান ‘‘রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ধাপ্পাবাজি নয় আমরা চাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্র,শোষণমুক্ত সমাজ৷