বিশিষ্ট প্রাউটতাত্ত্বিক শ্রীপ্রভাত খাঁ রামপুরহাটের অখ্যাত বগটুই গ্রামের দানবীয় গণহত্যার নিন্দা করে এই নারকীয় ঘটনার জন্যে রাজ্যের রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও বুদ্ধিজীবীদের দায়ী করেন৷ শ্রী খাঁ বলেন বগটুই-এর নারকীয় ঘটনা রাজ্যে এই প্রথম নয়৷ আজ বিরোধীরা যেভাবে প্রতিবাদের নামে লম্ফ-ঝম্ফ করছে সব দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তা অতি হাস্যকর৷ ১৯৬৭ সালে যখন বর্ধমানে সাঁইবাড়ীতে, পুরুলিয়া আনন্দনগরে নৃশংস গণহত্যা করেছিল কম্যুনিষ্ট ঘাতক বাহিনী তখন প্রতিবাদের এই বিবেক কোথায় ছিল, কোথায় ছিল বিজন সেতুতে সন্ন্যাসীদের যখন পুড়িয়ে মারা হয়েছিল৷ শিল্প-সাহিত্য-সংসৃকতির পীঠস্থান কলিকাতা থেকে আজ দানবীয় বর্বরতা রামপুরহাটের এক গণ্ডগ্রামে পৌঁছে গেছে৷
বর্ধমানের সাঁইবাড়ীতে সন্তানকে খুন করে সন্তানের বুকের রক্ত মায়ের মুখে তুলে দিয়ে যে পাপ সেদিনের ঘাতক বাহিনী করেছিল সেই পাপই বিজন সেতু৷ বানতেলা, সূচপুর নন্দীগ্রাম হয়ে বগটুই-এ পৌঁছে গেছে৷ এই পাপের দায় কি শুধু আজকের শাসক দলের৷ এই পাপ বগটুই এ শেষ হবে কি? ফ্যাসিষ্ট শোষকের সযত্নে পালিত এই পাপ সমাজের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দেবার দায় যেমন রাজনৈতিক নেতাদের তেমনি কবি সাহিত্যিক শিল্পীরাও এর দায় অস্বীকার করতে পারেন না৷
শ্রী খাঁ বলেন জেনে বা না জেনে এরা সবাই ফ্যাসিষ্ট শোষকের তল্পিবাহক হয়ে গেছেন৷ ফ্যাসিষ্ট শোষক বাঙলার খনিজ সম্পদ, কৃষিজ সম্পদ অবাধে লুন্ঠন করার জন্যে পলিটিক্যাল মাতববর থেকে শিল্প সংসৃকতি জগতের কুশিলব সকলকেই নিজেদের কালো হাতের মুঠোয় এনেছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে সাংসৃকতিক জগতের ও শিল্পী সাহিত্যিকরা দূরে ছিলেন না৷ কিন্তু তাঁরা কখনই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেননি৷ আজতো সাহিত্য, সংসৃকতি, ক্রীড়া সবজগতের মানুষই রাজনীতির খেলায় নেমে পড়েছে৷ বলা যায় শোষকের চতুর চালে নামতে বাধ্য হচ্ছে৷ আর এঁদের কে ঢাল করে বাঙলার উন্নত সংসৃকতিকে ধবংস করে অসংসৃকতির স্রোত বহিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাহায্যে৷ এইভাবে যুব সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবার কুটকৌশল নিয়েছে ফ্যাসিষ্ট শোষক৷
কোন জাতির সাংসৃকতিক মেরুদণ্ড যদি ভেঙে যায় তাহলে তার আর কিছুই থাকে না, সেই জাতি একটা মেরুদণ্ডহীন প্রাণীতে পরিণত হয়৷ সোজা হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা তার থাকে না৷ তাই সেখানে সাঁইবাড়ী---বিজন সেতু বগটুই আরো কত দেখতে হবে কে জানে৷ যে হাতগুলো সেদিন দরজা বন্ধ করে নিষ্ঠুর হত্যালীলা চালাল, শুধু তারাই অপরাধী নয়, এদের মাথার ওপর যে রাজনৈতিক দাদারা আছে তারাও নয়, মঞ্চের বহুদূর থেকে যে কালো হাত এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এবার সেই কালো হাতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে হবে৷ নতুবা এ জাতির অস্তিত্ব থাকবে না৷