ছোটবেলা থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ণ দেখতেন পার্থ৷ দুর্ঘটনার পর ছবিটা পুরো বদলে যায়৷ তবুও মনের জোরে ১২ বছর বয়সে হাতে তুলে নেন ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট৷ লড়াইটা সহজ ছিল না মোটেই৷ তখন তাঁর বয়স ৭-৮ বছর৷ একটি পথ দুর্ঘটনায় শরীরের বাঁ দিকটা অকেজো হয়ে যায়৷ সাড় চলে যায় বাঁ পা ও বাঁ হাতে৷ সোজা হয়ে হাঁটতেও সমস্যা দেখা দেয়৷ সেই প্রতিবন্ধকতা এখনও বয়ে চলেছেন তিনি৷ তবে কঠোর অনুশীলন ও অধ্যাবসায় থাকলে যে কোনও প্রতিকূলতাই বড় নয়, তা প্রমাণ দিলেন বাগদার হেলেঞ্চার বাসিন্দা পার্থ কীর্তনীয়া (টপি)৷ এ বছর বেঙ্গল প্যারা স্টেট গেমসে ব্যাডমিন্টন সিঙ্গেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি৷ তাঁর সাফল্যে খুশি এলাকাবাসী৷ গত ২ থেকে ৪ সেপ্ঢেম্বর সল্টলেকের সাইতে আয়োজিত হয়েছিল রাজ্য প্যারা গেমসের আসর৷ আয়োজক বেঙ্গল প্যারা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন৷ ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে বছর তেতাল্লিশের পার্থ স্ট্রেট সেটে হারিয়ে দেন প্রতিদ্বন্দ্বী রাহুলরাম রজতকে৷
ছোটবেলা থেকে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ণ দেখতেন পার্থ৷ দুর্ঘটনার পর ছবিটা আমূল বদলে যায়৷ তবুও মনের জোরে ১২ বছর বয়সে হাতে তুলে নেন ব্যাডমিন্টনের র্যাকেট৷ লড়াইটা সহজ ছিল না মোটেই৷ প্রথমত, বাগদা-সহ গোটা বনগাঁ মহকুমায় ব্যাডমিন্টন শেখার কোনও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আজও নেই৷ বাইরের কোনও ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য পার্থর পরিবারের ছিল না৷ কার্যত প্রশিক্ষক ছাড়াই নিজেকে তৈরি করেছেন পার্থ৷ বনগাঁয় কয়েকজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়ের সঙ্গে অনুশীলন করতে করতেই খেলা শেখেন তিনি৷ তবে সেখানে খুব সহজে জায়গা মেলেনি৷ প্রথমদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে তাঁর সঙ্গে কেউ খেলতে চাইত না৷ পরে অবশ্য তাঁর প্রতিভা দেখে পরিস্থিতি পাল্টায়৷ পার্থ জানান, তপন ও দিলীপ নামে দুই খেলোয়াড় তাঁকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন৷ শুধু প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেই নয়, ছোট থেকেই পারিবারিক নানা প্রতিকূলতার সঙ্গেও যুঝতে হয়েছে তাঁকে৷ তিন ভাইয়ের মধ্যে পার্থ মেজো৷ বাবা প্রয়াত নিকুঞ্জ কীর্তনীয়ার ছিল চায়ের দোকান৷ সেই আয়ের টেনেটুনে সংসার চলত৷ আর্থিক অসঙ্গতির কারণে কারণে অষ্টম শ্রেণিতেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় পার্থর৷ সেই জীবনযুদ্ধ এখনও চলছে৷
পার্থ জানান, এর আগেও তিনি রাজ্য জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন৷ তবে চ্যাম্পিয়নের শিরোপা পেলেন এই প্রথম৷ এর আগে ২০১৩ সালে তামিলনাড়ুতে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ডবলসের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গিয়েছিল৷ তিনি জানান, বিদেশ থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ আসলেও টাকার অভাবে যেতে পারেন না৷
তবে জীবন নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেই পার্থর৷ তিনি বলেন, ‘‘ভালমন্দ নিয়েই মানুষের জীবন৷ ছোট থেকে বহু অপমান যেমন সহ্য করেছি, তেমনই বহু মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷’’ পার্থ আরও জানায়, তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার অনেকটা কৃতিত্ত্বই তাঁর চিকিৎসক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলের৷ পাশাপাশি খেলাধূলোর ক্ষেত্রে নানাভাবে সাহায্য করেছেন তিনি৷ পার্থ বলেন, ‘ইন্দ্রজিৎবাবু আমার রাজ্য জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার খরচ বহন করে আসছেন৷ তাঁর সাহায্য ছাড়া আমি পারতাম না৷