রামপুরহাটে দানবীয় হত্যাকাণ্ড : দায়ী বিকৃত ধর্ম সংস্কৃতি ও মূল্যবোধহীন রাজনীতি

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন---ধর্মের ধবজাধারী, সংস্কৃতি জগতের কুশীলব ও রাজনীতির ধারক-বাহকরা কেউই এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না৷ ধর্মের নামে ব্যাভিচার, হিংসা ও যৌনতা মার্র্ক চলচিত্র-নাটক ও মূল্যবোধহীন রাজনীতি মানুষকে মানব আধারে দানব করে তুলছে৷ তারই ভয়ঙ্কর  দানবীয় এক টুকরো ঘটনা রামপুরহাটের বগটুই৷ পশ্চিমবঙ্গে  এই ধরণের ঘটনা এই প্রথম নয়৷ বাম আমলে ১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল কলিকাতার বুকে প্রকাশ্য দিবালোকে আনন্দমার্গের ১৭জন সন্ন্যাসী সন্ন্যাসিনীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল তৎকালীন শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে৷

সেই ঘটনার অপরাধীরা আজও সাজা পায়নে, তারও আগে ১৯৬৭ সালে সাঁইবাড়ীর নারকীয় ঘটনা, যেখানে সন্তানকে খুন করে তার বুকের রক্ত মায়ের মুখে তুলে দিয়েছিল জল্লাদরা৷

ওই সব দানবীয় হত্যাকাণ্ডের অপরাধীরা সাজা তো পায়নি বরং শাসন ক্ষমতার মাথায় বসে অপরাধের প্রমাণ লোপাট করেছে৷

শ্রী খাঁ আক্ষেপ করে বলেন--- আজ রাজ্যে একটা ঘটনা ঘটলে রাজভবন থেকে পাড়ার চায়ের দোকান ঘোলা জলে মাছ ধরতে সবাই নেমে পড়ে, অপরাধীর পরিচয় খুঁজতে ব্যস্ত হয়৷ কোন দলের কোন সম্প্রদায়ের৷ কিন্তু একবারও কেউ ভাবে না মানুষ মানুষকে মারছে৷ মানুষ কেন দিন দিন এত পাশবিক হয়ে উঠছে! শ্রী খাঁ বলেন এই দানবীয় নিষ্ঠুরতা  যদি রামপুরহাটই শেষ করতে হয় তবে অপরাধীর রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক রং না খুঁজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তো দিতেই হবে, সেই সঙ্গে অপরাধের উৎস খুঁজে সেই উৎসকে নির্মূল করতে হবে৷ নতুবা সাঁইবাড়ী মরিচঝাঁপি, বিজনসেতু, বগটুই দানবীয় নিষ্ঠুরতার শেষ নেই৷

শ্রী খাঁ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির মদতে ধর্ম ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতি জগতের কুশীলবরা যুবসমাজের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা, আদিম প্রবৃত্তি জাগিয়ে তুলছে৷ নীলদর্পন,পথের দাবী,  আনন্দমঠ যদি যুব সমাজকে দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করে তবে আজকের বিপরীত ধর্মী শিল্প সাহিত্য চলচিত্র যুব সমাজকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে৷ আর রাজনীতির কারবারীরা সেই বিপথগামী যুব সমাজকে মূলধন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায়৷ তারই বিষময় ফল সাঁইবাড়ী....বিজনসেতু.....বগটুই৷

শ্রী খাঁর কথায় আম গাছের চারা আম গাছই, ছাগলের  বাচ্চা ছাগলই কিন্তু মানবশিশু জন্ম নিলেই মানুষ হয় না৷ দুঃসাধ্য সাধনায় মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়৷ বিশ্বকবির কথায় ‘‘পশু বলছে ‘সহজ ধর্মের পথে ভোগ কর’ মানুষ বলছে মানব ধর্মের সাধনা কর৷’ আজ মানুষ সেই মানবধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের আবর্জনায় ভরা ধর্মমত নিয়ে আত্মঘাতী লড়াই-এ মগ্ণ৷ অপরদিকে শিল্পের স্বাধীনতার নামে একদল কবি সাহিত্যিক শিল্পী অশ্লীলতা ও অপরাধমূলক সাহিত্য চলচিত্র সৃষ্টি করে যুব সমাজকে বিপথগামী করছে৷ তাই মানুষের সমাজ থেকে এই দানবীয়তা শেষ করতে হলে মানুষকে মানধর্মের সাধনা করতেই হবে৷ বিশেষ করে যুব সমাজকে মানবধর্মের পথে  ফিরিয়ে আনার দায় ধর্মনীতি,অর্থনীতি,রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সমাজের প্রতিটি স্তরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে নিতেই হবে৷ নতুবা সমাজ গোল্লায় যাবে৷ এই দানবীয়তার শেষ হবে না৷