‘‘আধ্যাত্মিক সাধনা প্রতিটি মানুষের অবশ্য করণীয়, সাধনা ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোন বিরোধ নেই’’
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ১৭ ও ১৮ই মার্চ রাঁচীর হার্মু রোডে অবস্থিত দিগম্বর জৈন ধর্মশালাতে মহাসমারোহে আনন্দমার্গের দু’দিনের ধর্মমহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হল৷ এই ধর্ম মহাসম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার ও ওড়িশা থেকে তিন হাজারের বেশী আনন্দমার্গী যোগদান করেছিলেন৷ এছাড়াও প্রায় ৫০০ আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী উপস্থিত ছিলেন৷ এই ধর্ম- মহাসম্মেলনে আনন্দমার্গের পুরোধা প্রমুখ আচার্য কিংশুকরঞ্জন সরকার দু’দিন ধরে আধ্যাত্মিক প্রবচন দিয়ে সমবেত আনন্দমার্গীদের নিষ্ঠার সঙ্গে সাধনা ও সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেন৷
আচার্য কিংশুকরঞ্জনজী বিশেষ ভাবে মানবজীবনে আধ্যাত্মিক সাধনার গুরুত্বের ওপর বিশেষ আলোকপাত করেন৷ তাছাড়া মার্গগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী কীভাবে অধ্যাত্মবিজ্ঞানের সঙ্গে ভৌতবিজ্ঞানের সমন্বয় সাধন করেছেন তাও বুঝিয়ে বলেন৷ প্রকৃতপক্ষে অধ্যাত্ম বিজ্ঞান ও ভৌত বিজ্ঞানের কোনও বিরোধ নেই৷
তিনি বলেন, আধ্যাত্মিক সাধনা ছাড়া মানুষ জীবনের পরম লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না৷ তাই মানবজীবনে আধ্যাত্মিক সাধনা অত্যাবশ্যক৷ তাই বাবা চরম নির্দেশেও দুবেলা সাধনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন৷
কিংশুকরঞ্জনজী বলেন, মানুষকে পশুভাব থেকে দেবভাবে উত্তরণ করতে হবে৷ মানুষ যেমন চিন্তা করে, তেমনি হয়৷ ‘যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী’’৷ তাই মনকে সবসময় স্থূল ভাবনা থেকে মুক্ত রেখে পরমপুরুষের ভাবনা দিতে হবে৷ তিনি বলেন, মনকে ইন্দ্রিয়ের বশীভূত হতে দিলে চলবে না৷ ‘Subjective approach through objective adjustment’’--- অর্থাৎ জাগতিক বিষয় সমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে মনকে পরমপুরুষের দিকে চালিত করাই মানুষের আদর্শ৷
সাধনার ক্ষেত্রে জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তির মধ্যে ভক্তির স্থান সর্বোচ্চ৷ ভক্তিই সাধকের শ্রেষ্ঠ সম্পদ৷ কিন্তু তা বলে জ্ঞান ও কর্মেরও প্রয়োজন আছে৷ জ্ঞান প্রয়োজন কেননা জ্ঞান চর্র্চ করলে সাধক অন্য কারুর দ্বারা বিপথে পরিচালিত হবে না৷ আর, এ জগৎ পরমপুরুষের সৃষ্ট৷ জগতের সবাই পরমপুরুষের সন্তান৷ পরমপুরুষের সন্তানদের সেবা করলে পরমপুরুষ তৃপ্ত হবেন৷ এখানেই কর্ম সাধনার গুরুত্ব৷ কিন্তু সব সময় মনে রাখতে হবে আমাদের ভক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে৷ মূলতঃ ভক্তির দ্বারাই সাধক পরমপুরুষের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে৷
দু’দিনের ধর্মমহাসম্মেলনে মার্গগুরুদের রচিত প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে প্রতিদিনই মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল৷ এই অনুষ্ঠানে আচার্য চিরাগতানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দকীর্ত্তিলেখা আচার্যা, শ্রীমতী শুভ্রদীপা গরাঞ ও আরও বহু ‘রাওয়া’ শিল্পী প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করে এক সুন্দর নান্দনিক ও ভক্তিমূলক পরিবেশের সৃষ্টি করেন৷ আনন্দনগর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের নৃত্যশিল্পীরা সহ অন্যান্য ‘রাওয়া’ শিল্পীরাও নৃত্যও পরিবেশন করেন৷ এই সাংসৃকতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে নৃত্যনাট্য ‘শত শত প্রণাম তুম্হে’৷ এই নৃত্যনাট্যটির গ্রন্থনায় ছিলেন শ্রী বকুল রায় ও পরিবেশনায় টাটার রাওয়া শিল্পীগোষ্ঠী৷
২৪ঘন্টাব্যাপী ‘বাবা নাম কেবলম্ অখন্ড কীর্ত্তনের পরেই ধর্মমহাসম্মেলন শুরু হয়৷ তাছাড়া প্রতিদিন হরিপরিমণ্ডল গোষ্ঠীর উদ্যোগে প্রভাত ফেরী ও নগর কীর্ত্তনও হয়৷
১৮ই মার্চ আনন্দমার্গের এক বিশাল বর্ণাঢ্য মিছিল রাঁচী শহর পরিক্রমা করে ৷ আনন্দমার্গীদের মুখে শ্লোগান ছিল ‘সব মানুষকা ধর্ম এক’ ‘মানব মানব এক হ্যায়, (সকল মানুষের ধর্ম এক, মানুষ মানুষ ভাই-ভাই) ‘মানব সমাজ এক আউর অবিভাজ্য’ ইত্যাদি৷ এই মিছিলে আনন্দমার্গের পাঁচ শতাধিক সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী ও বেশ কয়েক হাজার আনন্দমার্গী যোগ দেন৷