রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিকৃতির প্রতিবাদে রাজপথে নামল ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটন৷ গত মঙ্গলবার কলকাতার নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে ২৯তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বলিউডি তারকাসহ দর্শকদের সামনে রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটির বাংলার জল’ ঐতিহাসিক গানটি গাওয়ার সময়েই গানের শেষ দুটি স্তবকে ‘বাঙালির পণ, বাঙালির আশা’ ও ‘বাঙালির প্রাণ’ অংশটিতে ‘বাঙালী’র পরিবর্তে ‘বাংলা’ করে গাওয়ানোয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিকৃতি ও কবিগুরু তথা সমগ্র বাঙালী জাতির অবমাননায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে শুক্রবার ৮ই ডিসেম্বর কলকাতার হাজরা মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটনের সদস্য-সদস্যাবৃন্দ৷ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বাঙালী’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংঘটনিক সচিব জয়ন্ত দাশ, কেন্দ্রীয় যুব সচিব তপোময় বিশ্বাস, মহিলা সচিব প্রণতি পাল, কলকাতা জেলা সচিব হিতাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শুভজিৎ পাল, মিন্টু বিশ্বাস, সুবোধ কর, সুশীল জানা, ছাত্র নেতা কৃষানু ব্যানার্জী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ৷
‘রবীন্দ্রগানের বিকৃতি বাঙলার বুদ্ধিজীবীদের শীতঘুম ভাঙাচ্ছে না কেন?’ এই বলে কটাক্ষ করেন ‘আমরা বাঙালী’র কেন্দ্রীয় যুব সচিব তপোময় বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, গত কয়েক মাস আগে নবান্ন সভাঘরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে রবি ঠাকুরের ঐতিহাসিক ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি ধার্য করার পর যখন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ভোটের রাজনীতির চালে অবাঙালী তোষামোদের কথাটি মাথায় আসে তখন থেকেই তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায় কাঁচি চালিয়ে বলেছিলেন ‘বাঙালী’র পরিবর্তে ‘বাংলা’ ব্যবহার করলে অবাঙালীরা কষ্ট পাবে না! যদিও তখন নানা মহলের আপত্তি থাকায় সরকার এই সিদ্ধান্তে আসে যে, রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিকৃতি করা হবে না, কথা পাল্টানো হবে না৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের সঙ্গে আমরা দেখলাম নেতাজী ইন্ডোরে রবীন্দ্রগানের কথা পাল্টে বিকৃতি ঘটল৷ ছিঃ ছিঃ এ লজ্জা কবিগুরুর অপমান, সমগ্র বাঙালী জাতির অপমান৷ ২১০ সংখ্যকের উপর বিধায়ক নিয়ে মাননীয়া নিজেকে ভগবান মনে করবেন না, মনে করিয়ে দি, একটা সময় বামফ্রন্টের বিধায়ক সংখ্যা ছিল ২৩৫৷ আর এখন? শূন্য৷ অহমিকা পতনের মূল কারণ৷ ভুলে গেছেন ২০১৯ লোকসভা ভোটে অবাঙালী প্রাধান্য অঞ্চলগুলিতে হেরে বাঙালী বাঙালী করে ‘বাঙালী ভাবাবেগ’কে কাজে লাগিয়ে আবার ২০২১ বিধানসভা ভোটে জিতে সেই জায়গা পূরণ করেছেন৷ আজ ক্ষমতা আস্ফালনে যে সমস্ত অবাঙালীরা পশ্চিমবাঙলায় থেকে প্রতিনিয়ত বাঙালীদের অপমান, বাঙলার অর্থনৈতিক ক্ষমতা দখল করে বাঙালীদের নিজভূমে কোনঠাসা করছে সেই অবাঙালীদের তোষণে আপনি নিজ জাতি বাঙালীদেরই অপমান করলেন৷ আমরা মানবো না৷ অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গান থেকে ‘বাঙালী’ শব্দটি পরিবর্তন করার জন্য বাঙালী জনগোষ্ঠীর কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে ও মূল রবীন্দ্রসঙ্গীতটিই গাইতে হবে৷