প্রত্যাশামতই পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামের দখল নিল তৃণমূল৷ নির্বাচনের সময় বা বলা যায় নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে তা না ঘটলেও এই ফলের বিশেষ কোন হেরফের হতো না৷ তবু নির্বাচন কলঙ্ক মুক্ত হলো না৷ ঘটনার পেছনে যে বা যারাই থাক, প্রশাসনের ব্যর্থতার দিকটাও অস্বীকার করা যাবে না৷ আর প্রশাসনের ব্যর্থতার দায় শাসক দলকেই নিতে হয়৷ তাই এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতগুলো প্রাণ গেল এর একটা দায় শাসকদলের ঘাড়ে চাপেই৷ তার অর্থ এই নয় যে বিরোধী দলগুলো সব ধোয়া তুলসী পাতা৷ বরং এই অপ্রীতিকর ঘটনার পেছনে থাকতে পারে কোন সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র৷ হতে পারে সেটা শাসক দলকে হেয় করার জন্য৷ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই রক্তের স্রোত, এই মৃত্যুর মিছিল এই প্রথম নয়৷ বরং এর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর মিছিল আরো অনেক গুণ বেশি লম্বা ছিল৷ কিন্তু সংখ্যা দিয়ে বিচার করে গণতন্ত্রের বেদীতে রক্তের হোলি খেলাকে ছোট করে দেখানোর প্রয়াসও অপরাধ তুল্য হবে৷ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ধরনের ঘটনা যে ঘটতে পারে এ আশঙ্কা সাধারণ মানুসেরই ছিল,তাই শাসক দল ও প্রশাসনের এ ব্যাপারে আরো অনেক বেশি সজাগ সতর্ক থাকা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল৷ তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এতগুলো প্রাণ বলির দায় শাসকদল কে নিতেই হবে৷ কিন্তু গণতন্ত্রের বেদীতে এই ফ্যাসিস্ট সাপের ছোবলের নিন্দা সেভাবে হলোনা৷ বরং একশ্রেণীর গণমাধ্যম থেকে নেতা ও তথাকথিত এলিট ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা শাসক দলকেই দোষী সাব্যস্ত করে আত্মতৃপ্তি লাভ করল৷ যেন তারা ওত পেতে বসেছিল এই চরম একটা ঘটনা ঘটবে আর শাসক দলকে বাগে পাওয়া যাবে৷
ভারতীয় রাজনীতিতে ফ্যাসিস্টের ছোবল বহু আগে থেকে, সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলি থেকে৷ গান্ধীজির অমতে কংগ্রেস সভাপতির নির্বাচনে গান্ধী মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জয় লাভ করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু৷ সুভাষচন্দ্রের স্বয়ং গান্ধী ও তার অনুগামীরা কেউ মেনে নিতে পারেনি৷ সেদিন গণতন্ত্রের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধা ও সৌজন্য দেখায়নি গান্ধী ও তার অনুগামীরা৷
তাই সুভাষ বিরোধিতায় ও যে কোন প্রকারেই সুভাষকে হেও প্রতিপন্ন করে কংগ্রেস থেকে তাড়াবার নিকৃষ্ট ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল কংগ্রেসের ভেতর থেকেই৷ সেদিন এক সভায় দাঁড়িয়ে গান্ধী অনুগামী নেতা গোপাল দাস শেঠ বলেছিল কমিউনিষ্টদের মধ্যে স্ট্যালিন,ফ্যাসিষ্টদের মধ্যে হিটলার ও নাৎসিদের মধ্যে মুসোলিনির যে স্থান কংগ্রেসের মধ্যেও গান্ধীর সেই স্থান৷ সভা থেকে স্লোগান উঠেছিল ‘‘হিন্দুস্তান কা হিটলার গান্ধিজি কি জয়৷’’ না, কোন কংগ্রেস নেতা সেদিন এর প্রতিবাদ করেনি, স্বয় গান্ধীও কোন প্রতিবাদ করেনি! বরং মৌন থেকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে হিটলারের নীতিকেই সমর্থন জানিয়েছিল সেদিন গান্ধী ও তার অনুগামীরা৷ প্রতিবাদে এগিয়ে গেলেন স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তিনি এক পত্র লিখলেন ‘অবশেষে স্বাধীনতার জন্য উৎকৃষ্ট বেদীতে ফ্যাসিস্টের সাপ ফোঁস করে উঠেছে৷
ভারতীয় রাজনীতিকে সেদিনই গ্রাস করেছে হিটলার স্ট্যালিন মুসোলিনি৷ তারই বিষময় ফল এই রক্তের রাজনীতি৷ স্বাধীনতার পর ভারতের রাজনীতিকে এই ফ্যাসিষ্টের গ্রাস থেকে মুক্ত করার কোন চেষ্টাই হয়নি৷ কারণ কংগ্রেস কমিউনিষ্টদের ঘৃণ্য সুভাষ বিরোধিতা ইতিহাস গুপ্ত করতে গিয়ে সেই ফ্যাসিস্ট রাজনীতিরই আশ্রয় নিয়েছে কংগ্রেস কমিউনিষ্ট৷ তৃণমূল সেই রক্তের ধারা থেকে এসেছে৷ তাই তাঁর পক্ষেও সম্ভব নয় এই রক্তের রাজনীতি বন্ধ করা৷ কারণ তিনিও এই রক্তের রাজনীতির ফসল৷ তাই শুধু তৃণমূলকে দায়ী করে বিরোধী দলের নেতারা, গণমাধ্যম, তথাকথিত এলিট সমাজ ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও এই রক্তের রাজনীতির দায় অস্বীকার করতে পারে না৷