সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখে বলছেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সবার উন্নয়নই তাঁর তথা তাঁর পার্টির লক্ষ্য৷ এই শ্লোগান দিয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন৷  জনগণ তাঁর কথার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে যে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ ছিল জনগণ সেই অতীতের ঘটনাকে আমল দেননি৷

ক্ষমতায় এসে প্রথম প্রথম তিনি তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করেছিলেন৷ কিন্তু গত কয়েকটি রাজ্যের নির্র্বচনে তাঁর দলের অভূতপূর্ব সাফল্য দেখে এখন ঝুলি থেকে বেড়াল বার করছে৷ বিশেষ করে পেছন থেকে আর এস এস তার কাজ পুরোদমে শুরু করে দিয়েছে৷ আর এস এস-এর ঘোষিত নীতিই হল হিন্দুরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা৷ অর্র্থৎ এদেশে মুসলীম বা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকারকে তাঁরা আমল দিতে চান না৷

তাই বিভিন্ন সময়ে মাংস ভক্ষণ নিয়ে বা গবাদি পশুর কেনা বেচা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নোতুন নোতুন আইন পাশ করছেন ও দেশে স্বাভাবিক ভাবে অশান্তির সৃষ্টি করছেন অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকা দিতে৷ ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হচ্ছে৷ হঠাৎ যদি এই পুঞ্জীভূত বারুদস্তুপ বিস্ফোরণের  রূপ নেয় তাহলে দেশ জুড়ে বহু রক্তপাত হবে৷ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিজ্ঞতা দেশবাসীর  আছে৷ স্বাধীনতার অব্যহিত পূর্বে এমনি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দু’দেশের মাটি রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল৷ এই দাঙ্গায় কেবল যে সাম্প্রদায়িক মনোভাবপন্ন মানুষ হতাহত হন তা নয়, বরং বেশিরভাগ নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ এই দাঙ্গার শিকার হন৷

এই ধরণের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দেশের উন্নয়নের পক্ষে চরম বাধা৷ দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে চাই ঐক্য ও সুবুদ্ধি৷  এছাড়া কখনই উন্নয়ন সম্ভব নয়৷

তাই মোদী সরকার যদি সত্যই দেশের উন্নতি চান অবিলম্বে যে সমস্ত কর্মসূচী সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে, সে কর্মসূচী পরিত্যাগ করুন৷ দেশের যথার্থ উন্নতির জন্যে, দেশের ঐক্যের জন্যেও,দেশের জাত-পাত সম্প্রদায় নির্বিশেষে যারা দরিদ্র তারা অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ে রয়েছেন তাদের উন্নতির জন্যে পরিকল্পনা নিন৷ এতে দরিদ্র হিন্দু, মুসলীম, খ্রীষ্টান, জৈন--- যে মানুষ হোক না কেন তারা উপকৃত হবেন৷

হিন্দু ধর্মমতের তথাকথিত ব্রাহ্মণ গোষ্ঠীর মধ্যেও এমন অনেকে আছেন তাঁরা অতি দরিদ্র, তথাকথিত হরিজন ও আদি সম্প্রদায়ের মধ্যে তো ব্যপক ভাবেই দারিদ্র রয়েছেন৷  আবার এই তথাকথিত হরিজন বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের  মানুষের মধ্যেও কিছু অবস্থাপন্ন বা ধনী ব্যষ্টি আছেন৷ তাই জাত-পাত সম্প্রদায় ধরে উন্নয়ন বা ‘সংরক্ষণ’ নীতিও  অনৈতিক৷ দরিদ্র মানুষের মধ্যে যে ব্যবস্থা নেওয়া  হবে, সেই সুবিধা যেন সমস্ত সম্প্রদায়ের সমস্ত গোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছায়৷

দেশের যেকোন যথার্থ কল্যাণকামী সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত, দেশের প্রতিটি মানুষের ক্রয়ে ক্ষমতা অর্জন৷  অর্র্থৎ দেশের প্রতিটি মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা৷ সরকার তো দেশের কর্মসংস্থানের জন্যে মুখ্যত নির্ভর করছেন দেশী ও বিদেশী পুঁজিপতিদের ওপর৷

কিন্তু পুঁজিপতিরা  সর্র্বধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমেই কলকারখানা গড়ে তোলেন৷ এইসব শিল্পে অত্যন্ত অল্প মানুষেরই কর্মসংস্থান হয়৷ আর বেশিরভাগ তারাই সুযোগ পায় তাদের প্রযুক্তির জ্ঞান আছে৷

কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক ভাবে অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া মানুষ--- যাদের কথা আগেই বলেছি--- তাদের মধ্যে শিক্ষিত মানুষ খুবই কম৷ এক্ষেত্রে পুঁজিপতিদের শিল্পে ওই দেশের দরিদ্র মানুষদের কতটুকু উপকার হবে?

তার চেয়ে বরং দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপরই সর্র্বধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ যা নেতারা মোটেই দেন নি ৷ মুখে নিজেদের জনগণের সেবক বললেও কার্যত: তাঁরা পুঁজিপতিদের সেবাতেই সদাব্যস্ত৷

আজ মূলতঃ দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বিরোধী সংগ্রাম দিয়েই  সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে৷ কোন জাত-পাত সম্প্রদায়ের ভেদ করলে চলবে না৷ বিজেপি এপথে না চললে দেশের ও যেমন বিপদ তেমনি বিজেপি’র চরম বিপদ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজী এই সত্যকে যথার্থভাবে উপলদ্ধি করে যদি  দলের বা তাঁর গোষ্ঠীর  অনেকেরই মনে যে  নানা ধরণের  ভেদবুদ্ধি বাসা বেঁধে আছে--- তা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ না করেন, তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য৷