শান্তিনিকেতনে অশান্তির আগুন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

বিচার বিভাগ থেকে প্রশাসন, গণমাধ্যম থেকে শিক্ষাঙ্গন--- সর্বস্তরে দলীয়করণের যে ঘৃণ্য রাজনীতি দিল্লির শাসক শুরু করেছে তার স্পর্শ বিষে সংক্রমিত বিশ্বকবির বিশ্বভারতী মুক্ত শিক্ষার অঙ্গনে । যে খোলা ময়দান তাকে হঠাৎ ইটের প্রাচীরে আবদ্ধ করার করার কি প্রয়োজন হল  । উত্তর যাইহোক---মতলব বদ, উদ্দেশ্য খারাপ শক্তিদম্ভ আর স্বার্থ লোভ মহামারীর মত গ্রাস  করছে ভুবন ডাঙ্গার মাঠ ।শান্তিনিকেতন আরএসএস দ্বারা পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন সেই সুযোগ পেয়ে শান্তিনিকেতনের মত পবিত্র শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতির আখড়া বানাতে চাইছে দিল্লীর শাসকবর্গ ও তাদের বশংবদ । বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দিল্লীর বর্তমান শাসকদল যে রবীন্দ্র বিদ্বেষী একথা তাদের অনেক নেতারাই কথাবার্র্তয় প্রকাশ পায় । খোলা আকাশের নীচে উন্মুক্ত পরিবেশ উদার হৃদয় ও সবুজ মনের উপযুক্ত আধার বিশ্বকবি সেই সবুজ মনের সঙ্গে বিদ্যার তত্ত্বকে মিলিয়ে সবরকম গণ্ডীমুক্ত উদার হৃদয়ের মানুষ করতে চেয়েছিলেন । বর্তমান শাসকবর্গ ছাত্র-ছাত্রাদের সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক ও দলদাসে পরিণত করতে চায় । গণ্ডীবদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার ছাঁচে ফেলে তারই কালো ছায়া বিশ্বভারতীতে পড়েছে ।

কি করতে চেয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে । বিশ্বকবি কবির কথায় উত্তর এই আশ্রমের মধ্যে থেকে দুটি সুর উঠেছে একটি বিশ্বপ্রকৃতির সুর, একটি মানবাত্মার সুর । এই দুটি সুরধারার সঙ্গমের মুখেই এই তীর্থটি স্থাপিত ইটের প্রাচীর তুলে বিশ্বপ্রকৃতির সুর রুদ্ধ  করার চেষ্টা চলছে  ।মানবাত্মার সুর গো হনু জাত পরিচালন কমিটির কাছে আশা করাই বৃথা।

আমি বলছি যে, এ আশ্রম--- এখানে কোন দল নেই, সম্প্রদায় নেই মানস-সরোবরে যেমন পদ্ম বিকশিত হয় তেমনি এই প্রান্তরের আকাশে এই আশ্রমটি জেগে উঠেছে, একে কোন সম্প্রদায়ের বলতে পারবে না  ।এখানে আমরা যে ধর্মের দীক্ষা পাবো সে দীক্ষা মানুষের  সমস্ত  মনুষ্যত্বের দীক্ষা ।

শান্তিনিকেতনকে আজ সাম্প্রদায়িকতা গ্রাস করতে চাইছে, সাম্প্রদায়িকতা আর মনুষ্যত্ব একসঙ্গে থাকতে পারে না ।

এই আশ্রমে আছে কি মাঠ ও আকাশ আর ছায়াগাছগুলি, চারদিকে  একটি বিপুল অবকাশ  ও নির্মলতা । এখানকার মেঘের বিচিত্র লীলা ও চন্দ্রসূর্যগ্রহতারা আবর্তন কিছুতেই আচ্ছন্ন হয়ে নেই।

নির্মলতা বিলীন মাঠ, আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা সব কিছুকেই আচ্ছন্ন করার অপপ্রয়াস  চল।

কবির প্রার্থনা আমরা যারা এই আশ্রমে বাস করছি, হে শান্তিনিকেতনের অধিদেবতা আজ উৎসবের শুভদিনের তোমার কাছে আমাদের এই প্রার্থনা, তুমি  আমাদের সেই চেতনাটি সর্বদা জাগিয়ে রেখে দাও । যাতে আমরা যথার্থ তীর্থ বাসী হয়ে উঠতে পারি ।নিজেদের  অসংযত প্রবৃত্তি সকল নিয়ে এই আশ্রমের মধ্যে  কেবল ছিদ্র বিস্তার করতে না থাকি ।

সংকীর্ণ রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতা আজ শত ছিদ্র সৃষ্টি করছে । তবু কবির কথাই বলি, সমস্ত দিন সংসারের ক্ষেত্রে  দুঃখ দৈন মৃত্যুর  আলোড়ন চলেইছে, কিন্তু রোজ সকাল বেলায় একটি বাণী আমাদের এই কথাটিই বলে যায় যে, এই সমস্ত  অকল্যাণই চরম নয়, চরম হচ্ছেন শিবম্ ।

শুধু বাঙালীর গর্বের  । প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতন নয়, বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতি অর্থনীতি ধর্মনীতি  শিল্প সম্পদ সব আজ সংকীর্ণ । ভাতৃঘাতি রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতারস্পর্ বিষে জর্জরিত ।তবু শাসকের শক্তির দম্ভ  আর একটা বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করছে কবির কথায় শেষ করি---জগতে যত-কিছু বিপ্লব সে এমনি করেই হয়েছে । যখনই প্রতাপ এক জায়গায় পুঞ্জিভূত হয়েছে---যখনই বর্ণের, কুলের ধনের, ক্ষমতার ভাগ-বিভাগ ভেদ-বিভেদে পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান কে একেবারে দুর্লঙ্ঘ্য করে তুলেছে তখনই সমাজে ঝড় উঠেছে । সেই ঝড় উঠবেই, বাঙলা আবার তার হৃত গৌরব ফিরে পাবে ।