শোষণ বিরোধী আন্দোলনকে যদি আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ করা না হয় তা হলে শুধু ভারতে কেন সারা পৃথিবীর কোটি কোটি শোষিত ও নিপীড়িত হতভাগ্য জনগণ, জীবজন্তু, ও গাছপালা বাঁচবে না ঐ সব গদ্দার শোষক শ্রেণীর হাত থেকে৷ তবে একটা কথা সকল সচেতন জনগণকে স্মরণে রাখতেই হবে যে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেই রয়ে গেছে সেই গদ্দারী পণা সুপ্রাচীন কাল থেকেই৷ যারা লোভী, প্রতিষ্ঠামান যশের কাঙ্গাল তারাই অল্পবিস্তর গদ্দারই হয়৷ তারাই দলছুট হয়৷ সেই অপ্রিয় সত্য, কথাটা স্বার্থান্ধ কোন রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রী সেটাকে মেনে নিতে পারেই না৷ যদি তা না হতো তাহলে সর্বভারতীয় দলগুলো এতো অল্প সময়ে টুকরো টুকরো হলো কেন? এতো দলছুট দলের জন্ম হলো কেন? আজও যাঁরা গত ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টের সময় কাল থেকেও তার আগে থেকে বেঁচে আছেন এই ভারতের মাটিতে তাঁরা জীবিত অবস্থায় সব দেখছেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর কথা নয় ছেড়েই দিলুম৷ কিন্তু আজও কিছু যা নীতিবাদী মানুষতো আছেন তাঁরা কেন নীরব হয়ে সব দেখছেন! কোন প্রতিবাদ প্রতিরোধ তো নেই তাদের৷ দেখা যাচ্ছে সবাই যেন নানাভাবেই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবেই ঐসব ভ্রান্ত দলছুট মাতববরদের নীরব সমর্থন জানাচ্ছেন৷ মনে রাখা দরকার অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী৷ তাই ভারতের এই দুর্দ্দশা৷ গণতন্ত্রের নামে শুধু চলছে ধান্দাবাজি ও গদীর লড়াই৷ কিন্তু সেই ঈশ্বরের নামে প্রায় সকল জনপ্রতিনিধি কি কেন্দ্রে ও রাজ্যের শপথ নিচ্ছে সংবিধান মেনেই জনসেবা করবেন কিন্তু বাস্তবে দেখা দলবাজিটাই মুখ্য আর দলীয় ব্যষ্টি স্বার্থেই রাতকে দিন ও দিনকে রাত করেই চলেছেন শাসকগণ৷ ইতিবৃত্তে সবচেয়ে বড়ো গদ্দার হলো শেষ বাংলার নবাবমাত্র ১৭/১৮ বছরের সিরাজদৌল্লার সিপাই সালার মীরজাফর কোরান শরীফ স্পর্শ করে শপথ নেন নবাব আলিবর্দ্দীর সম্মুখে যে সিরাজকে সে শেষদিন পর্যন্ত পাশে থেকে রক্ষা করে যাবেন কিন্তু পলাশী আম্রকাননে যুদ্ধের প্রহশনে পঞ্চাশ হাজার প্রদাতিক সৈন্য কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে রহিলো আর রবার্ট ক্লাইভ ইংরেজ সেনাপতি মাত্র ৫০০ সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে প্রহসন করেই জয় লাভ করলো৷ প্রতিদানে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর বাঙলা বিহার অধিপতি হয়ে বসলো! এই মীরজাফর তো সবচেয়ে বড়ো গদ্দার বাঙলার বুকে! তাই বলি গদ্দাররাই তো এদেশের ভাগ্যবিধাতা! কালকের গদ্দাররাই হলো আজকের ভাগ্যবিধাতা প্রসঙ্গত বলি নেতাজী কংগ্রেসের বেইমানী বুঝে কংগ্রেস ত্যাগ করেন ও ফরোয়ার্ড ব্লক ঘটন করেন৷ সেই ফরোয়ার্ড ব্লক নিজেদের অস্তিত্বটা বিকিয়ে দিল বামফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে৷ আর সেই বামফ্রন্টের সিপিআইএম আবার কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গত ২০২১ এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে দুটো দলই এম.এল.এ শূন্য হয়ে সেই গদ্দারীর শিরোপা পেল গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতির পটভূমিকায়! তাই গদ্দারিটা কোথায় নেই? তাই বলা হয় যে কোন দলের দলীয় মানসিকতাটাই শেষ পর্য্যন্ত মারাত্মক ক্ষতিকারক! আবার সেই মীরকাসেম মীরজাফরের জামাতা একজন গদ্দার সেই মীরকাসেম বটে কিন্তু সেই গদ্দার দিল্লির রাজপথে ভিখারীর মতো মারা পড়ে৷ ভারত এর বুকে বহুভাষাভাষীর কোটি কোটি অতিসাধারণ নরনারী ও শিশুদের বাস৷ আজও অনেকের অক্ষরজ্ঞান হয়নি৷ জীবন জীবিকা অতিনিম্ন মানের৷ অধিকাংশ লোকের বাসস্থান বলতে যা বোঝায় সেটাই নেই৷ লজ্জা নিবারণের পোষাক আজও অনেকের কাছে দুষ্প্রাপ্য! এই তো দশা ভারতের৷ পানীয় জলটুকুও অনেকেই পায় না৷ পথে জন্ম ও পথেই মৃত্যু৷ আহার অনেকেরই দিনান্ত আধপেটা অতি সাধারণ খাবার কোনদিন জোটে তো আবার কোনদিন জোটেই না৷
ভারতের মতো জনবহুল দেশে দরিদ্র মানুষের বাসই সংখ্যাধিক৷ কর্মসংস্থান দিন দিন ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হচ্ছে৷ ভারতের জনগণের চরম দুর্দ্দশা৷ কিন্তু সংবাদে প্রকাশ দেশে যারা শাসক তাদের অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা কোটি কোটি টাকার উপর৷ আর হতদরিদ্র মানুষদের দৈনিক আয় অনেকের ২০টাকার নিচে! রেশনের অবস্থা তথৈবচ৷ অনেকের কার্ড নেই৷ রেশনে দেওয়া হয় মাত্র কিছু চাল ও গম তাও অধিকাংশ নিম্নমানের পোকায় খাওয়া৷ যদিও সেটা কোন কোন রাজ্যে বিনামূল্যে৷ কেন্দ্র সরকারও নভেম্বর পর্য্যন্ত বিনামূল্যে কয়েক লক্ষ মানুষকে মাসে পাঁচকেজি করে খাদ্যশস্য দিয়ে চলেছেন৷
করোনার মহামারিতে এই ব্যবস্থা৷ লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে ঘরেই আটকে পড়েছেন৷ ডিজেল,পেট্রোল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসের দাম মাসে চার পাঁচবার করে বাড়ছে৷ রান্নার গ্যাসতো বর্ত্তমানে প্রায় ৯০০ টাকায় পৌঁছে যাচ্ছে৷ এ কেমন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো! নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসব্জি, চাল,ডাল,রান্নার তেল ও মশলাপাতির দাম বেড়েই চলেছে৷ প্রাণদায়ী ওষুধের দাম এতো বেড়েছে যা সাধারণের পক্ষে কেনা কঠিন৷ জি.এস.টি এমন বেশী যার দরুণ সাধারণ মানুষের প্রাণান্ত৷ এই কি স্বাধীনদেশ! এইকি গণতন্ত্র! গদ্দারদের গদ্দারীপনাটা তো সব ক্ষেত্রেই জোর কদমেই চলছে৷ জোর যার মুলুক তার এটাই তো গদ্দারদের মস্তানীর মূল হাতিয়ার! এদেশে সর্বক্ষেত্রেই চলছে ভয়ঙ্কর শোষণ! দুর্নীতিটা এদেশের হাটে বাজারে যেন একটা ডাল ভাতের মতো সর্বস্তরে চলছে৷ আতঙ্কে মানুষ দিন কাটাচ্ছে৷ বর্তমানে গণতন্ত্র এমনই দেশটাকে অধঃপতিত করে তুলেছে৷ সব জিনিসে ভেজাল৷ দেশের ডাক্তার, পুলিশ, শিক্ষক, এমন কোন পদ নেই যেখানে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে হতভাগ্য দেশের নাগরিকদের ঠকানো হয় না৷ এর মূল কারণ কিন্তু চরম বেকারত্ব৷ এদেশ কতটা যে স্বাধীন তা আলোচনার বিষয়৷ সবচেয়ে মজার কথা ইংরেজ আমলে আমরা সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগ করে যে স্বাধীনতা পাই তার শাসক হয়ে বসেছেন সেই অতীতের রাজা মহারাজদের বংশোধরগণই৷ সাধারণ যাঁরা নাগরিক তাঁরা একটি বোটমাত্র দিতে পারেন তাও যদি ঐ দাদারা, দলের ক্যাডাররা সুযোগ দেন৷ সেই একটাই কারণ তা হলো বোটে যে দল শক্তিশালী তারাই তো ভাগ্যবিধাতা৷ যারা আজ দলবাজি করে গদ্দারী করে শাসনব্যবস্থাকে কব্জায় করে পদে পদে দেশের বোটারদের রক্তচক্ষু দেখিয়ে চলেছে আর নির্মমভাবে শোষণ করেই চলেছে৷ এর পরিবর্ত্তন যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বোটারগন না আনতে পারেন তা হলে দেশটা বিকিয়ে যাবে ধনীদের কাছে৷ তখন গণতন্ত্র বলে কিছুই থাকবে না৷
স্বৈরাচারদের এক মারাত্মক দেশ হবে ভারত আের নাগরিক হবেন ক্রীতদাস বিশেষ৷ তাই প্রয়োজন তীব্র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রাউটের প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়৷ তাই তরুণদের আহ্বান দেয় প্রাউট দর্শন৷
- Log in to post comments