শহীদ ক্ষুদিরাম স্মরণে --- আমরা বাঙালী

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

১১ই আগস্ট যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বীর বিপ্লবী, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম আত্মবলিদানকারী ক্ষুদিরাম বসুর ১১৭তম আত্মবলিদান দিবস পালন ও স্মরণসভা আয়োজন করেছিল ‘আমরা বাঙালী’৷ সংঘটনের পক্ষ থেকে কলকাতা,বারাসাত, কাঁকিনাড়া, বনগাঁ, মেদিনীপুর,পুরুলিয়া,মুর্শিদাবাদ,জলপাইগুড়ি, আলিপুরদোয়ার সহ জেলায় জেলায় ও ত্রিপুরা,ঝাড়খণ্ড,অসমেও ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস পালন করা হয়৷ সংঘটনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে বাগবাজার বাটার মোড়ে ক্ষুদিরাম বসু আত্মবলিদান দিবস স্মরণসভার আয়োজন করা হয়৷ উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বাঙালী’ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব তপোময় বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব উজ্জ্বল ঘোষ, কেন্দ্রীয় অর্থসচিব ড: মোহনলাল অধিকারী প্রমুখ৷ এছাড়াও সাংস্কৃতিক প্রকোষ্ঠ ‘স্পান্দনিক শিল্পীগোষ্ঠী’র পক্ষের স্মরণ সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুপ্রিয়া ভৌমিক,শঙ্কর সরকার,শুভ্রা ভৌমিক সঙ্গতে তবলায় প্রতীম দাশ, কালীপদ মণ্ডল প্রমুখ৷

স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ‘আমরা বাঙালী’ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সচিব তপোময় বিশ্বাস বলেন১১ই আগস্ট এক শপথের দিন, এক অপরাজেয় সংগ্রামীর চিরভাস্বর হওয়ার দিন৷ অত্যাচারী বিট্রিশ প্রশাসক কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ক্ষুদিরাম ভুল করে অন্য গাড়ীতে বোমা ছোড়েন ও দুজনের প্রাণ যায়৷ ১৯০৮ সনের ১১ই আগস্ট, মুজাফফরপুরে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রথম ও সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি দেয় ব্রিটিশ পুলিশ৷ তাঁর ১১৬তম আত্মবলিদান দিবসে তাঁর প্রতি সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই৷ ১৯০৮ সনের ১১ই আগস্ট নাবালক ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দিয়ে ব্রিটিশ পুলিশ ভেবেছিল ক্ষুদিরামকে হত্যা করলেই স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্ধ করা যাবে, কিন্তু এই ঘটনাই বুমেরাং হয়ে দাম্ভিক,অত্যাচারী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাছে ফিরে তাদের সূর‌্যাস্তের সূত্রপাত করে৷ ফাঁসি দিয়ে ক্ষুদিরাম বসুকে হত্যা করলেও তাঁর বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড ও দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নিজের জীবন-স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়া- দেশের হাজার হাজার তরুণের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্পৃহা অগ্ণিস্ফুলিঙ্গের মতন ছড়িয়ে দিয়েছিল৷ তার আকার নিয়েছিল অগ্ণিযুগের বিপ্লব, জন্ম দিয়েছিল অরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, প্রফুল্ল চাকী, বিনয় - বাদল - দীনেশ, মাস্টার দা সূর‌্য সেন,প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দার,মাতঙ্গিনী হাজরার মতন শত শত বিপ্লবীদের৷ ক্ষুদিরামের ফাঁসি মনে দাগ কেটেছিল ছোট্ট সুভাষচন্দ্রের মনেও৷ পরবর্তীতে সেই সুভাষচন্দ্র বসুর আপোষহীন সংগ্রাম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসান ঘটায়৷ আজকের এই দিন প্রত্যেক বাঙালী তথা ভারতবাসীর স্মরণের দিন, শপথের দিন৷

আজকের এই দিনে জাতির প্রতি আহ্বান যে জাতি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝড়ালো, যে ক্ষুদিরাম বসু, বিনয় বাদল দীনেশ, সূর্য সেনের প্রমুখের মতন শত-সহস্র জানা অজানা বাঙালী বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ ব্রিটিশদের ভারত ছাড়া করলো৷ স্বাধীন ভারতবর্ষে সেই বাঙালী জাতির করুণ পরিণতির কথা কাউরই অজানা নেই৷ ক্ষুদিরামের মাতৃভাষায় (বাংলা ভাষায়) কথা বললে বিদেশী, ঘুসপেটিয়া এইসব শুনতে হচ্ছে আজ ক্ষুদিরামের স্বজাতির উত্তরসূরীদের! রাষ্ট্রীয় মদতে বাঙালীদের বিদেশী চিহ্ণিত করে আবার দেশছাড়া করার নীলনকশা ছকা হচ্ছে! বর্তমান প্রজন্মের মন থেকে ক্ষুদিরাম বসুকে সরিয়ে দিতেও দেখা যায়৷ মূলত দিল্লী বোর্ড সহ বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমে স্কুল গুলতে ক্ষুদিরাম নিয়ে কোন চর্চা নেই, কে ক্ষুদিরাম বসু? এখনকার প্রজন্ম জানেই না তাঁর অবদান৷ ‘ধন-ধান্যে-পুষ্পে ভরা’ স্বাধীন ভারতে দেশবাসীকে কেন বেকারত্বের জ্বালায় জ্বলতে হবে? অপুষ্টি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আর্থিক কেলেঙ্কারি, ধনী-দরিদ্র চরম আর্থিক বৈষম্য, বিপুল আর্থিক মন্দা.... কেন? আসলে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পেলেও তা কেবল ভোটাধিকারের স্বাধীনতা৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যাতিরেকে রাজনীতি স্বাধীনতা ‘ফুলোক্রেসী’তে পর্যবসিত হতে বাধ্য৷ ভারতবর্ষও এই ফুলোক্রেসীর শিকার৷ তদানীন্তন দেশীয় সাম্রাজ্যবাদ মদতপুষ্ট শক্তি নেতাজীকে ভারত ছাড়া করার পর, দেশ ভাগের (পড়ুন বাঙলা ভাগের) রক্তাক্ত পরিবেশের সূত্রপাতের মধ্যে দিয়ে একদল ক্ষমতালোভী অবাঙালীনেতা স্বাধীনতার নামে রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তর করেন মাত্র৷ মানুষের জন্মসিদ্ধ অধিকার ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’৷ সেই অর্থনৈতিক কার্যকলাপের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মুনাফাখোর,সাধারণ মানুষের রক্তচোষা দেশীয় অবাঙালী বেনিয়াদের হাতে৷ পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীকৃত করে নিয়ন্ত্রণ করছে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিরা৷ সম্প্রতি কোন এক শিল্পপতির ছেলের বিবাহ অনুষ্ঠান চলল কয়েক মাস ধরে! লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হল তাদের বিনোদনের জন্য, অথচ এই দেশেই পুষ্টির অভাবে, খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ, বেকারত্বের জ্বালায় ভুগছে দেশের যুব সমাজ৷ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে তারা৷ আর অন্যদিকে পুঁজির পাহাড় তৈরী হচ্ছে, দেশের মোট অর্থের ৮৫ শতাংশ অর্থ-সম্পদ মাত্র দু-চারজনের হাতে!! মুনাফাবাজ এই অবাঙালী পুঁজিপতিরাই ফান্ডিং করছে রাজনৈতিক দলগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি৷ অসাংবিধানিক ইলেক্টোরাল বন্ডের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা পেয়েছে বর্তমান রাজ্য, কেন্দ্র শাসকদল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল৷ ঘুষ দিয়ে এদের মুখ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে, শুধু তাই নয় রেল, বিমানের মতন দেশের জাতীয় সম্পদকেও এই শোষকদের হাতে তুলে দিতে পিছপা হয়নি বর্তমান কেন্দ্রের শাসকদল৷ এই স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু?? পাঠকবর আপনারাই বিচার করুন৷ এসবের বিরুদ্ধে ও খাদ্য - বস্ত্র - বাসস্থান - শিক্ষা-চিকিৎসার মতন মৌলিক অধিকারের নিশ্চিততা, ক্রয়ক্ষমতার গ্যারান্টি, সার্বিক কর্মসংস্থানের দাবীতে আজকের এই ১১ই আগস্ট সকল ভারতবাসীর উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরব হওয়া৷ ডাক দিতে হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার৷

শেষে চারণ কবি নিত্যসতানন্দের ভাষায় বলি--- ‘কত ক্ষুদিরাম কত বিনয়-বাদল/ দিল প্রাণ কতশত মুক্তিপাগল/ প্রতিদানে হায় তারা কিছু নাহি পায় /বঞ্চিত বাঙালী ধূলায় লুটায়৷৷’