শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, অসম এর পক্ষ থেকে ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত অসমের বিধানসভা ও লোকসভা আসনের সীমানা পুননির্দ্ধারণের খসড়া বাতিলের দাবিতে গণ ধর্ণার আয়োজন করা হয়৷ সংঘটনের কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্ত ও সম্পাদক মধুসূদন করর পরিচালনায় গণ ধর্ণার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক, নাগরিক সংঘটনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷ ধর্ণা চলাকালে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন এই খসড়া জনগণের সুবিধার জন্য তৈরি হয়নি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শাসক দলের নেতাদের ভোটে জেতার লক্ষ্যে তা তৈরি হয়েছে৷ তিনি বলেন বরাক উপত্যকাকে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ তিনি অযৌক্তিক, বিভ্রান্তিকর ও বিভাজনবাদী খসড়ার বিরুদ্ধে দশহাজার লোকের গণ মিছিল আয়োজনের আহ্বান জানান৷ প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চের অন্যতম কার্যকর্তা, বিজেপি নেতা বাসুদেব শর্মা বলেন দলীয় রাজনীতির ঊধের্ব উঠে জনগণের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে৷ অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না পর্যন্ত খসড়া বাতিল হচ্ছে৷ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির কুচক্রান্তকে ভেস্তে দেওয়া যাবে না৷ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি বিশ্বজিত দাস বলেন তার সংঘটন এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে৷ ফোরাম ফর স্যোস্যাল হারমনির অরিন্দম দেব বলেন একজোট হয়ে লড়াই ছাড়া দাবি আদায় সম্ভব হবে না৷ সংঘটনের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার ভট্টাচার্য বলেন এই খসড়া প্রকাশের পিছনে রয়েছে গভীর চক্রান্ত৷ তিনি ২০২৬ সালে গোটা দেশের সাথে অসমেও বিধানসভা ও লোকসভার সীমানা পুনঃনির্ধারণের দাবিতে সি.আর.পি.সি.সি অসম আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানান৷ এস.ইউ.সি.আই (সি) দলের নেতা অধ্যাপক অজয় রায় বলেন মুখ্যমন্ত্রীর খিলঞ্জীয়ার রাজনৈতিক স্বার্থে খসড়া প্রকাশ হয়েছে বলে যে বার বার করা দাবি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক৷ কারণ সংবিধানে খিলঞ্জয়া শব্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ হয়নি৷ রাজ্যের জনগণের ঐক্য ও সংহতিকে ধবংস করতেই মুখ্যমন্ত্রী এসব বলেছেন৷ সিপিএম জেলা সম্পাদক দুলাল মিত্র বলেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার নীল নক্সা এই খসড়া৷ ফলে ভবিষ্যতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি পাঠানোর ক্ষমতা হ্রাস পাবে৷ এছাড়াও সেখানে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভূঁইয়া, সংঘটনের কো চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থ, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের গৌতম প্রসাদ দত্ত, ফোরাম ফর ডেমোক্রেটিক রাইটাস এর চয়ন ভট্টাচার্য, মনিপুরী চেম্বার অফকমার্সের সাধারণ সম্পাদক ওক্রাম লক্ষ্মীকান্ত সিংহ, হিন্দি ভাষী ছাত্র পরিষদের দিলীপ সিং, ইয়াসির সভাপতি সঞ্জীব রায়, জেলা কংগ্রেস নেতা সীমান্ত ভট্টাচার্য সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা৷
বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ধর্ণা প্রদর্শনের পর সংঘটনের একপ্রতিনিধি দল জেলা শাসক মারফত অসমের চিফ ইলেক্টরেল অফিসারকে একটি স্মারকপত্র প্রদান করে ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত অভিযোগ প্রদানকারী সংঘটন ও নাগরিকদের হিয়ারিং শিলচরে করতে জোরালো দাবি উত্থাপন করে৷ স্মারকপত্র প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সংঘটনের কাছাড় জেলা সভাপতি নিরঞ্জন দত্ত,সম্পাদক মধুসূদন কর সহ কো চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থ, কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, ডা এম শান্তি কুমার সিংহ, সুব্রত চন্দ্র নাথ, নির্মল কুমার দাস, হিল্লোল ভট্টাচার্য প্রমুখ৷
ধর্ণায় উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন পৌর সভাপতি তমালকান্তি বনিক, শিলচর নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন পৌর কমিশনার অতনু ভট্টাচার্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি বাবুল হোড়, প্রস্তাবিত ডিলিমিটেশন প্রতিবাদী মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক আশু পাল, লেখিকা আদিমা মজুমদার হিউম্যানিটি ফাউণ্ডেশন এর সভাপতি সিহাব উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ দীপঙ্কর চন্দ, প্রাক্তন অধ্যক্ষা বনানী রায়চৌধুরী, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি অরূপ বৈশ্য ও মানস দাস, মার্চ ফর সায়েন্স এর কমল চক্রবর্তী ও বরাকের বহু বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ বক্তব্য রাখেন৷
এছাড়াও এদিন সি আর পি সি সি, অসম এর ধোয়ারবন্দ শাখার উদ্যোগে ধোয়ারবন্দ বাজারে ডিলিমিটেশন খসড়ায় ধোয়ারবন্দ, বড়জালেঙ্গা, ছোটজালেঙ্গা এলাকাকে বড়খলার সাথে যুক্ত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়৷ বিক্ষোভ চলাকালে সেখানে বক্তব্য রাখেন সংঘটনের জেলা কমিটির সদস্য পরিতোষ ভট্টাচার্য, দিলীপ রী, সুজিত আকুড়া প্রমুখ৷