গত ৫ই নভেম্বর সোনারপুর রেলষ্টেশনের নিকটে সত্যজিৎ রায় ইনষ্টিটিউট হলে জি.পি., (গার্ল্স্ প্রাউটিষ্ট)-এর পক্ষ থেকে এক সিম্পোসিয়ামের আয়োজন করা হয়৷ সিম্পোসিয়ামের বিষয় ছিল ‘নারীর মর্যাদা’৷ বর্তমান সমাজে যে নানানভাবে নারী নির্যাতন চলছে তার প্রতিবাদে ও এই সমস্যার সমাধান কোন্ পথে---মূলত এই বিষয়ে বিভিন্ন বক্তা আলোকপাত করেন৷ এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নেতাজী ভাবনা মঞ্চের প্রেসিডেণ্ট ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপিকা ডঃ পূরবী রায়৷
এই আলোচনা সভায় বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশুতোষ কলেজের মনোবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা ডঃ তিন্নি দত্ত, এই কলেজের ইংরেজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডঃ রাইকমল দাশগুপ্ত ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডঃ উমা চট্টোপাধ্যায়৷ গার্ল্স্ প্রাউটিষ্ট-এর আদর্শের ওপর বক্তব্য রাখেন সংস্থার কেন্দ্রীয় সচিব অবধূতিকা আনন্দ গতিময়া আচার্যা৷ স্বাগত ভাষণ দেন গার্ল্স্ প্রাউটিষ্ট-এর জেলা সচিব সাগরিকা পাল৷
প্রাউট-প্রবক্তা শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়৷ এরপর প্রাউট-প্রবক্তা রচিত প্রভাতসঙ্গীত দিয়ে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন তৃণা চট্টোপাধ্যায়৷
অধ্যাপিকা তৃণা দত্ত তাঁর ভাষণে সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর অধিকারকে অবদমিত করার ও নারী নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানান৷ তিনি বলেন, প্রাউট-প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর রচিত প্রভাতসঙ্গীতের মাধ্যমে নারীর স্বাধীনতা তথা নারীর স্বাধিকারকে সুন্দরভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন৷
ডঃ রাইকমল দাশগুপ্ত বলেন, আজকের বঞ্চিত, নির্যাতিত নারী সমাজকে সমস্ত বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্ত করতে প্রাউট-প্রবক্তা তিনটি প্রধান দাবী রেখেছেন৷ সেগুলি হ’ল--- (১) বিশ্বের সমস্ত দেশে সমস্ত নারীর জন্যে সর্বস্তরে শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে হবে৷ (২) সামাজিক, শিক্ষাগত ও ধর্মমতের ক্ষেত্রে সর্বপ্রকার বৈষম্যের অবসান করতে হবে ও (৩) সমস্ত নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে৷
প্রকৃতপক্ষে এই দাবীগুলি পূর্ণ করলে তবেই নারী জাতি আবার সু-উচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে৷
ডঃ উমা চট্টোপাধ্যায়ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা কীভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন, কীভাবে তাঁদের ন্যায্য অধিকারকে পদদলিত করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেন ও বলেন---মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার নারীকে আবার পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান৷
সভাপতি ডঃ পূরবী রায় তাঁর ভাষণে বলেন---এর আগে কোনও ধর্মগুরু নারীর ন্যায্য অধিকারের স্বীকৃতি দেননি বা পুরুষের সঙ্গে নারীর সমান অধিকার মেনে নেন নি৷ ধর্মগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী একমাত্র ব্যতিক্রম৷
অবধূতিকা আনন্দ গতিময়া আচার্যা গার্ল্স প্রাউটিষ্টের আদর্শ ও কর্মধারার ওপর আলোকপাত করেন৷
আলোচনার মাঝে নরেন্দ্রপুর আনন্দমার্গের শিশুসদনের মেয়েরা প্রভাতসঙ্গীত অবলম্বনে নৃত্য প্রদর্শন করে৷ তৃণা চট্টোপাধ্যায় তাঁর সমধুর কণ্ঠে সভার উদ্বোধনী ও সমাপ্তি সঙ্গীত পরিবেশন করে দর্শকদের আনন্দ দেন৷ হলভরা দর্শকগণ বক্তাদের বক্তব্য শুণে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন৷ সভার পরে অনেকেই জি.পি.-র কেন্দ্রীয় সচিব, জেলা সচিব প্রমুখের সঙ্গে দেখা করে এই আদর্শের জন্যে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷
অবধূতিকা আনন্দ রেখা আচার্যা, স্থানীয় বিশিষ্ট আনন্দমার্গী রবীন্দ্রনাথ সেন, অরূপ চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সাফল্যমণ্ডিত হয়৷