বর্তমান বিশ্বে যতগুলি জীবিত ভাষা আছে, বাংলাভাষা তার মধ্যে অন্যতম প্রধান ভাষা৷ আর এই প্রাধান্যের কারণঃ---
১) এই ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা
২) এই ভাষার গ্রহণীয় মানসিকতা
৩) এই ভাষার সমৃদ্ধ শব্দভান্ডার
৪) এই ভাষায় ললিত-মধুর গীতিধর্মীতা
৫) এই ভাষায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বিখ্যাতকবি প্রতিভারজন্ম
৬) এই ভাষা আন্তর্জাতিকমাতৃভাষারমর্যাদা পাওয়া,
৭) এই ভাষা পৃথিবীর বৃহত্তম পঞ্চম জনগোষ্ঠীরমানুষেরমুখের ভাষা৷
সুতরাং এই ভাষায় কথা বলার মধ্যে একটি গোত্র-গৌরব আছে৷ কিন্তু ইদানিং কর্র্পেরেট পুঁজিবাদের প্রভাবে এক শ্রেণীর মানুষ সেই গোত্র-গৌরব ভুলে বাংলার ভাষা ও শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে উন্নাসিকতা প্রকাশ করছেন৷ মাতৃভাষা ভুলেবিজাতীয়ভাষা ব্যবহারেবেশী অহমিকাবোধ করছেন৷ ! বিদেশি ভাষার অন্ধ অনুকরণ করতেগিয়ে অনেকক্ষেত্রে নগ্ণতাকে বাইরে টেনে আনছে৷এক্ষেত্রে উদাহরণেরশেষ নেই৷ আজকের নিবন্ধে আমি বাংলা ভাষার সম্বোধনের ক্ষেত্রে যে ‘আপনি’ ‘তুমি’ ‘তুই’ ব্যবহার হয়, শুধু সেই সম্বোধনসূচক ‘আপনি’ ‘তুমি’ ‘তুই’ নিয়ে আলোচনা করবো৷
বাংলা ভাষায় সম্বোধনের ক্ষেত্রে---
১) সম্মানসূচক-‘আপনি’
২) ভালোবাসার সঙ্গে মান্যতার ক্ষেত্রে-‘তুমি’
৩) ভালোবাসার সঙ্গে স্নেহের ক্ষেত্রে ‘তুই’--- এই তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়৷
ইংরেজীতে এর প্রতিশব্দ হিসেবে---
১) সম্মানসূচক-‘You’
২) ভালোবাসারসঙ্গে মান্যতারক্ষেত্রে---‘Thou’
৩) ভালোবাসার সঙ্গে স্নেহের ক্ষেত্রে---‘Thee’---এই শব্দগুলিব্যবহৃতহয় বা হত৷
আধুনিক ইংরেজিভাষায় সম্বোধনেরক্ষেত্রে প্রায় সর্বত্রই‘You’ (সম্মানসূচক অর্থে)ব্যবহৃত হচ্ছে৷
নগ্ণ অনুকরণপ্রিয় তথাকথিত কিছু শিক্ষিত বাঙালিকে ইদানিং দেখছিঅনুকরন করতে গিয়েসম্বোধনেরক্ষেত্রেসম্মান-অসম্মানেরধার না ধেরেসকলকেইবাংলায় ‘তুমি’ বলতে শুরু করেছেন৷ ছাত্র শিক্ষককে তুমি বলছে৷ অপরিচিত অল্প বয়সের মানুষ তার চেয়ে বেশি বয়সের মানুষকেতুমি বলছে৷ যাঁকে বলছেন,তাতে তাঁর (ওইব্যষ্টির)সম্মতিআছে কী না তাজানারও প্রয়োজন বোধ করছে না৷ জানি না এ কেমন বেয়াদপি৷ আরবেয়াদপিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা ও বক্তা উভয়েইসমান দোষী৷
ইংরেজিতে ‘ ইউ’, দো, থি-র ক্ষেত্রে যদি শুধু ‘ইউ’ রাখা হয় তাহলেদোষেরকিছু থাকে না৷ কেননা ইংরেজরা সম্বোধনের ওই তিনটি শব্দের ক্ষেত্রে সম্মানসূচক ‘ইউ’ শব্দটিকে রেখেছে৷আমরা বাঙালিরা যদি ‘আপনি’ ‘তুমি’ তুই এই তিনের জায়গায় একটিকে রাখতে চাই, তা হলেসম্মানসূচক ‘আপনি’ নয় কেন? কেন শুধু তুমি?
‘তুমি’ শব্দটি ভালোবাসার হলেও পরিচিত, অপরিচিত সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য কি? বিষয়টা ভেবে দেখার!
ভাষার যদিও ব্যাকারণেরনিয়মে চলে না, তবে আজকেরএই ভাষা বিজ্ঞানেরযুগে ভাষা ব্যবহারেক্ষেত্রে যুক্তিনিষ্ঠ শব্দ প্রয়োগটাও দরকার৷তাতে করে ভাষার ক্ষতি তো হয়ই না, বরং ভাষার গোত্র-গৌরব বাড়ে৷
তাছাড়া কোনো ভাষা সমৃদ্ধ হয়, তার শব্দ ভাণ্ডারের কারণে৷ যে ভাষায় মনের বিভিন্ন ভাবপ্রকাশের জন্য যতবেশি প্রতিশব্দ শব্দ থাকে সে ভাষাকে ততবেশি সমৃদ্ধভাষা বলা হয়৷ বাংলায় যেমন মামা, কাকা, জেঠা,পিসা প্রভৃতির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা শব্দ আছে, ইংরেজিতে তেমন নেই৷ইংরেজদের এত কিছুর জন্যএকটি মাত্র ‘আঙ্কল’ শব্দটি ব্যবহারকরেইকাজ চালাতে হয়৷ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে এটি দুর্বলতা৷ সম্বোধনের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় ‘আপনি’ ‘তুমি’ এতগুলো শব্দ থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র ‘তুমি’ দিয়ে কাজ চালানোর অপচেষ্টা কেন? এতে যে শুধু করে ভাষারই সম্মানহানী হয় তা নয়, যাঁকেউদ্দেশ্য করে সম্বোধন করা হয় বয়স ভেদে তাঁদেরও সম্মানহানী হয়৷বাংলা ভাষারসম্মান আছে৷ গোত্র-গৌরব আছে, কেবলমাত্র গুটিকয়েক কর্র্পেরেট পুঁজিবাদের তল্বিবাহকের হাতেবাংলা ভাষার এতবড় ক্ষতি হতে দেওয়া কি ঠিক?বাংলা ভাষা প্রেমিদের বিষয়টি ভেবে দেখতে বলবো!
- Log in to post comments