সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

সরকারী নির্দেশ বা আইন উপেক্ষা করাতেই  বোধহয় একশ্রেণীর মানুষ বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন৷ হয়তো তাদের মনে হয় ‘‘আমরা কেমন বাহাদুর দেখো’’---কিভাবে সরকারী নির্দেশকে লঙ্ঘন করলাম৷ এই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়৷ এদের যদি আপনি কিছু বলতে যান, আপনাকে উদ্দেশ্যে করে এমন কিছু মন্তব্য করবে যা আপনার  আত্মসম্মানে লাগবে! কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো নিগৃহীত ও হতে পারেন৷ একারণে বলার  ইচ্ছে থাকলেও অনেক সজ্জন ব্যক্তি নীরবে সরে যান৷ যারা আইন বা সরকারী নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেদের বাহাদুর মনে করে তারা নিজেরাও যে মাঝে মাঝে বিপদে পড়েন না এমন নয়, তখন ও চেষ্টা করে বেআইনী পথে বাঁচার৷

বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ও প্রতিটি রাজ্য সরকার, এমনকি চিকিৎসকগণ আমাদের বারে বারে কয়েকটি নির্দেশ মেনে চলবার জন্য সতর্ক করছেন৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে নির্দেশ তাঁরা দিচ্ছেন তা হোলো -বাড়ির বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরুন ও সামাজিক দূরত্ব (যদিও কথাটি শারীরিক দূরত্ব বললেই ভালো হয়) বজায় রাখুন৷ কিন্তু আপনি রাস্তায় বেরোলে দেখবেন একশ্রেণীর মানুষ কিভাবে এই নির্দেশ কে থোড়াই কেয়ার করে থুতনির তলায় মাস্ক  ঝুলিয়ে বা পকেটে পুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আবার কেউ কেউ মাস্ক ছাড়াই দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ আগে যে বললাম ওরা কাউকেই  তোয়াক্কা করতে চায় না৷ ওরা এভাবে যে শুধু নিজের বিপদ ডেকে আনছে তাই নয়, নিজের পরিবারের সাথে সাথে অন্যদেরও বিপদে ফেলছে৷ কখনও  কখনও  পুলিশকে দেখেছি এদের বোঝাতে, কখনও বা কান ধরে উঠবোস করাতে, আবার কখনও  বা লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করতে৷ ভেবেছিলাম এব্যাপারে বুঝি পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হবে না, কিন্তু এরা সবকিছুর ঊধের্ব! যেখানে সেখানে থুতু বা পান গুটখার পিক ফেলা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ৷ কিন্তু ঐ যে বললাম এক শ্রেণীর পাবলিককে দেখবেন এরা শুধু রাস্তাঘাট নয় খোদ সরকারী হাসপাতালের চতুর্দিকে থুতু আর পানের পিক ফেলে রাঙিয়ে দিচ্ছে৷ এদের কবে চৈতন্যোদয় হবে একমাত্র ঈশ্বরই জানেন! আদৌ হবে কি না তাও বলা যাচ্ছে না৷ জরিমানা  করলেও কাজ হবে  কিনা বলা সত্যিই মুশকিল৷

বঙ্গে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ যখন ঊর্ধমুখী তখন থেকেই তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলো সমস্ত বিধিনিষেধকে উপেক্ষা বা লঙ্ঘন করে চালিয়ে যাচ্ছে মিছিল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, ধর্ণা ইত্যাদি কর্মসূচি৷ আর এই সব কর্মসূচি তে অংশ নেওয়া নেতা কর্মীদের  মাস্ক থুতনির তলায়, আর শারীরিক দূরত্বের কথা নাই বা লিখলাম৷ পুলিশের সাথে ধবস্তাধবস্তি করতেও  দেখা গেছে৷ এঁরা নাকি সাধারণ মানুষের স্বার্থে এই ধরনের কর্মসূচি নিচ্ছেন৷ কিন্তু এরফলে সংক্রমনের হার যে হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে আর সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে সে খেয়াল বোধহয় ওই দলগুলোর নেই৷ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কিভাবে ফায়দা তোলা যায় সেই নিয়েই তারা ব্যস্ত৷ এসব বন্ধ রেখে বরং মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা ফেরা করতে যদি বাধ্য করাতো তাহলে কাজের কাজ হোতো৷ কোভিড যোদ্ধাদের উপর হামলা বা কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে সামাজিক বয়কটের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে  বরং ভালো কাজ হোতো৷ অধিক সংখ্যক মানুষ জমায়েত করে এই ধরনের কর্মসূচি পালন করার উপযুক্ত সময় কী এটা? সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘনকারী এইসব নেতা-কর্মীদের কে শেখাবে মহামারীর সময় এসব বন্ধ রাখুন৷

‘‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’’ এই শ্লোগান বঙ্গের আট থেকে আশি শুনে শুনে সবার বোধহয় মনে গেঁথে গেছে৷ একে কেন্দ্র করে পুলিশী ধরপাকড়, জরিমানা আদায়, লাইসেন্স আটকে রাখা---এসব কম হয়নি৷ কিন্তু আজও অবস্থার উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন হয়েছে কী? হেলমেট বিহীন বাইক চালক এখনও রাস্তায় অনেক দেখতে পাবেন৷ যারা বাইক চালায় তারা যে এটা জানে না তা কিন্তু নয়, এরা কোনো একটা কারণ দেখিয়ে হেলমেট না পরে রাস্তায় বাইক চালাবে৷ আর পুলিশ যদি ধরে তখন বাঁকা পথে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করবে৷ আর আপনি যদি এ ব্যাপারে কিছু বলতে যান তো অবশ্যই উত্তর পাবেন---‘‘জ্ঞান দিতে হবে না, আপনি নিজে ঠিক থাকুন৷’’

বলুন তো এরপরেও যাঁরা আইন মেনে চলবার চেষ্টা করছেন তাঁরা কী সত্যিই ঠিক থাকতে পারবেন?