সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় আজ থেকে বহু বছর (১৮৬৫সালে)আগেই বর্ণপরিচয়, ২য়খণ্ড বইতে প্রথম পাঠের প্রথমেই কুবাক্য (কুকথা) প্রসঙ্গে লিখেছেন--- ‘‘কখনও কাহাকেও কুবাক্য কহিও না৷ কুবাক্য কহা বড় দোষ৷ যে কুবাক্য কহে কেহ তাহাকে দেখিতে পারে না৷ কুবাক্যই কুকথা৷ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণপরিচয় পড়েননি এমন বাঙালী হয়তো হাতে গোনা পাওয়া যাবে৷ তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ছোটোদের মধ্যে নীতি শিক্ষা দেবার জন্যই এই ধরনের বাক্যগুলি বর্ণপরিচয়ে লিখে গেছেন৷ অনেকে এই শিক্ষাকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছেন, আবার কেউ কেউ কেবল পড়ার জন্যই শুধু পড়ে গেছে৷ জীবনে এই শিক্ষাকে গ্রহণ করার প্রয়োজন বোধ করে নি৷ বাঙলায় রাজনীতির দেউলিয়াপনা গভীরভাবে প্রকট হচ্ছে৷ নেতা-নেত্রীদের কুকথা বলার প্রবণতা ইদানীং খুব বেড়ে গেছে৷ আগে যে কেউ বলেননি এমন নয়, কিন্তু নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই কুকথায় একজন অপরজনকে টেক্কা দিচ্ছে৷ প্রকাশ্যে সভায় বা ক্যামেরার সামনে যেভাবে বিভিন্ন নেতা কুকথা বলছেন তা শুনে তাদের শিক্ষা দীক্ষা, রুচিবোধ সম্বন্ধে মানুষের মনে প্রশ্ণ জাগছে৷ কুকথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে মানুষের হৃদয়ে এরা আদৌ জায়গা করে নিতে পারেন কিনা জানা যায় না, তবে নেতাজীর মত আদর্শ নেতাদের কথায়, আচরণে ও কাজে মানুষ এতটাই উদ্বুদ্ধ হয় যে তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সর্বস্ব ত্যাগ করতেও পিছপা হন না৷ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তরই বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ এই নির্বাচনগুলিতে পেশীশক্তি ও অর্থ শক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি কুকথার ব্যবহারও ভীষণভাবে বেড়ে গেছে৷ নির্বাচনে পেশীশক্তিকে (গুণ্ডাদের) উদ্বুদ্ধ করার জন্যই নেতারা হয়তো এধরণের কথাবার্র্ত বলতে পছন্দ করেন! পুরুষদের  পাশাপাশি এখন মহিলারাও পিছিয়ে নেই৷ নেতারা এমন ধরনের কুকথা বলছেন যা বাংলার সংসৃকতি বিরোধী৷ জানা নেই এধরনের রাজনীতি কবে বন্‌ধ হবে! নীতি নিয়ে লড়াই হোক৷ মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্ত হয়ে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে সেই দিশা দেখাক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ৷ তার জন্য নিশ্চয়ই কুকথা বলার দরকার হবে না! ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান বা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ব্যাপারে কারও কোনও পরিকল্পনা নেই৷ উল্টে কুকথা ও বিদ্বেষমূলক প্রচার করে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে৷ বাংলা ও বাঙালীর জ্বলন্ত সমস্যাগুলো এড়িয়ে গিয়ে ক্ষমতায় আসার  জন্য বা টিকে থাকার জন্য এসব চলছে৷ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এমন কোনও সদর্থক আলোচনা শোনা যাচ্ছে না৷ বর্তমান নেতৃবৃন্দকে এসব বলে বিশেষ লাভ কিছু হবে বলে মনে হয় না৷ এরা স্বভাব পাল্টাবে না৷ বিদ্যাসাগরের পাঠ  হয় এরা পড়েনি, নতুবা ভুলে গেছে৷ বাঙলার মানুষের উচিত যারা কুকথা বলে বাজার গরম করতে চাইবে তাদেরকে বা সেই দলকে নির্বাচনে ভালোভাবে শিক্ষা দিয়ে দেওয়া৷ যাতে ভবিষ্যতে বাঙলার রাজনীতিতে কেউ আর কুকথা বলার সাহস না দেখায়৷