সংকীর্ণ দলবাজীর ঊধের্ব উঠে সর্বাত্মক শোষণমুক্তির আন্দোলন চাই

লেখক
প্রভাত খাঁ

ইতিবৃত্তে উল্লেখ্য সেই ফ্রান্সের সম্রাট পঞ্চদশ লুই অত্যন্ত দুঃখের  সঙ্গে ঘোষনা করেছিলেন - ‘‘আমার পর মহাপ্লাবন৷’’

 দেখে শুণে মনে হচ্ছে ভারতে মোদির পর ঠিক তেমনই অবস্থা হবে নাতো এদেশে? মাত্র বছর তিনেক হয়েছে মোদি কেন্দ্রের শাসনে এসেছেন তাতেই বিজেপি সরকার যে কটি  বিষয়ের উপর হাত দিয়েছেন সেই কটি বিষয়েই মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ রাজতন্ত্র যেমন পৃথিবীতে একসময় ছিল  তারপরই কালধর্মে রাজতন্ত্রের পবিবর্ত্তে নানারূপে দেখা দেয় জনগণের শাসন ব্যবস্থা৷ রাজতন্ত্র ধবংস হয় রাজাদের দম্ভ, অহংকার ও দুর্নীতির কারণে৷  শাসক -এর সংখ্যা ছিল কম৷ রাজাদের অপদার্থতার জন্য  রাজতন্ত্র ধবংস হয় ৷ নামকেওয়াস্তে ইংল্যান্ডে ও জাপানে রাজতন্ত্র আছে  কিন্তু রাজার সেই আগের মতো একচ্ছত্র  প্রতিপত্তি নেই৷ ভারতের গত ৭০ বছরের শাসনে সংসদীয় গণতন্ত্রে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় দলগুলির প্রধানদের  পারিবারিকতন্ত্রের প্রভাবে রাজনীতিতে চরম দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটায় প্রধান রজনৈতিক দলগুলি ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে ফলে দেখা দেয় দলছুটদের প্রভাবিত বহুদলের আবির্র্ভব৷ তাতে দলগুলি রাজশক্তি কব্জা করতে  এতই ব্যষ্টি ও দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে যার দরুণ কোটি কোটি নাগরিক যারা হতদরিদ্র আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে চির বঞ্চিত তাদের ভোটটি পেতে হাজার গন্ডা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে , পেশি শক্তিবলে , ও ছল বল ও কৌশলে ও স্বার্র্থন্বেষী ধনীব্যষ্টিদের  আর্থিক সহায়তায় রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রীরা  শাসন ক্ষমতা কব্জা করে রাজসুখভোগ করে ৷  হতভাগ্য নাগরিকদের কথা ভূলে যায়৷  শাসনে গিয়ে দেখা যায়  শাসকদল ধনীদের  স্বার্থসিদ্ধিতেই  আগ্রহশীল হয়৷ তাই বলা হয় গণতন্ত্র ধনীদের  অর্থেই বেঁচে আছে৷ দেখা যায় ধনীরাই ব্যাঙ্কগুলি থেকে বড় অঙ্কের  ঋণ নেয়৷ কিন্তু ঋণ শোধ অনেকেই করে না  ও সুদ দেয় না৷ সরকার তাদের ঋণ মকুব করে থাকেন আর লোকসান সামাল দেন নিম্মমধ্যবিত্তদের গচ্ছিত টাকার সুদ বছরে বছরে কমিয়ে দিয়ে৷ মোদ্দাকথা  গরিবের  রক্তশোষনই হল গণতন্ত্রের এক দুরারোগ্য ব্যাধি বিশেষ৷

বলা হয় ,গণতন্ত্র জনগণের সরকার কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই সরকার ধনীদের সার্থসিদ্ধিতেই সদা ব্যস্ত৷  চরম দ্রব্যমূল্য  বৃদ্ধি হচ্ছে, চরম বেকার সমস্যা দেশ রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে ৷ মোদির নোট বাতিল , জি.এস.টির মতো নোতুন কর ব্যবস্থায়  গরীবরাই  মরতে বসেছেন৷ তাই দেশে হাহাকার দেখা দিয়েছে প্রচন্ড ভাবেই৷  চাকুরীর কোন দিশাই নেই ৷ কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ কেন্দ্র সরকারের ব্যর্থতায় রাজ্যগুলি পঙ্গু হয়ে পড়ছে৷ এর উপর রাজ্যগুলির কুশাসনে দেশ আরো পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে৷

আর্থিক, সামাজিক, দুরবস্থার কারণে রাজ্যগুলিতে বিশেষ করে শাসক দলগুলি  বেকার তরুণ প্রজন্মকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে রাখছে নানা উৎসব হইচই এর মধ্যে৷ সেই তরুণ প্রজন্মকে ওইসমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের দলে টানতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন৷ নোতুন কর্মসংস্থানের কোন পথ এর সন্ধান সরকার দিতে সক্ষম হচ্ছে না৷  বর্তমানে এই রাজ্যের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ৷  এবছর বন্যায় পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷  সম্প্রতি যে শারদীয়া পূজা হয়ে গেল তাতে দেখা গেল কলকাতা ও অন্যান্য শহর গুলিতে থিমের পূজোয় সারা রাজ্য এমন মেতে উঠলো তাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হলো, হই হুল্লোর পূজোয় যে কার্নিভাল হলো তাতে যে কত টাকা খরচ হলো যাঁরা খরচ করলেন তাঁরাই জানেন৷ এদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের তো শেষ নেই৷  পূজোয় তো সরকারী অফিস দীর্ঘদিন ছুটি রহিলো, কাজকর্ম বন্ধ৷ বাজার দর আকাশ ছোঁয়া, ব্যাঙ্ক বন্ধ হওয়াতে দেশে আর্থিক নাভিশ্বাস উঠলো৷ জনগণের কষ্টের সীমা নেই৷  উৎসবে রাজ্য উন্মত্ত৷ এ কেমন ধারা রাজ্য এতে যে দেশের কতটা ক্ষতি হচ্ছে সেটা কি রাজ্য সরকার ও দেশবাসী উপলদ্ধি করছেন না৷ সব ব্যাপারে সংযম থাকাটা কি প্রয়োজন নেই৷  দেখা যাচ্ছে নেতা-নেত্রীদের  উদ্ধত আচরণ ও অহংকার দেশকে  ডোবাচ্ছে!

পশ্চিমবাঙলার পাহাড় এলাকায় যে ভয়ঙ্কর অবস্থা তাকে সামাল দিতে রাজ্য সরকার চেষ্টা করছেন৷ আর বিরোধী বিজেপি দল  এর রাজ্য সভাপতি যে কান্ডটা করলেন  আর যে উক্তি করে মানুষ ক্ষেপালেন  সেটা কি রাজনৈতিক দলের সঠিক কাজ হয়েছে৷ সহ্যের সীমা আছে৷ সেখানকার মানুষ নিজেদের বাঁচার পথ নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন  সেখানে তো সরকার কি কেন্দ্র ও কি রাজ্য দলীয় স্বার্থের কারণে ব্যর্থ বলেই ধরে নেওয়া যায়৷ তাদের কাছে দলই বড় হল এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় শাসন ব্যবস্থার যে কতটা ব্যর্থতা সেটা কিন্তু স্বীকার করতে হবে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারকে ও এরাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল  বিজেপিকেও৷ পশ্চিম বাংলায় বিরোধী তৃণমূল বলেই কি কেন্দ্রের এতো বিরোধিতা?  এটাতো গণতন্ত্রের গঙ্গাযাত্রার  সামিল৷  আজ অত্যন্ত  দুঃখের সঙ্গেই  বলতে হয় যে এদেশে গণতন্ত্র ব্যর্থ৷ জঘন্য দলতন্ত্র দেশকে ধবংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে৷  এটা কিন্তু জনগণকে বুঝতে হবে৷  দলবাজিটাই হলো একচক্ষু বিশেষ ব্যষ্টির সংকীর্ণ মানসিকতার এক করুণ ও অনিষ্ট কর্মের কুফল  যা দেশকে  সমস্যায় সর্বদাই  পতিত করে৷  এই কথাটা বিশেষ করে পশ্চিম বাঙলার  ও ভারতের প্রত্যেক রাজ্যের  জনগণ ও নাগরিকদের বুঝে চলতেই  হবে৷

তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশকে কোনভাবেই বাঁচানো যাবে না৷ ভারতের মধ্যে এই পশ্চিম বাংলার বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার শেষ নেই৷  একে রক্ষা করতে হলে সংকীর্ণ দলের উর্দ্ধে উঠে সকল বঙ্গবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সার্বিক শোষণমুক্তির আন্দোলন করতে হবে সকলের কল্যাণে৷  বিশেষ কোনো দল সকলের কল্যাণ করবে না, করতে পারেনা৷ সংকীর্ণ মানসিকতা ত্যাগ করে, নৈতিকতা ও উদারতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে  সমাজ আন্দোলনে ব্রতী হতেই হবে৷ কাল হরণ করলে  চলবে না৷  ক্ষতি আরো হবে বইকি কমবে না৷ মোদ্দাকথা হলো পশ্চিমবাংলার কল্যাণে বাঙালী জনগোষ্ঠীর সব দলমত ভুলে এক হয়ে কাজ করার সময় এসেছে৷

বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলি নিজ নিজ স্বার্থের কথা ভেবে গদীর লাড়াইয়ে ব্যস্ত৷  অনেক হয়েছে আর নয়৷  ঐক্যবদ্ধ সমাজ আন্দোলনেই সমাাজ বাঁচবে৷  তাই জাত-পাত এর ঊধের্ব উঠে সমস্ত মানুষকে সমাজের সমস্ত সমস্যার সমাধানের জন্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘সমাজ আন্দোলনে’ যুক্ত হতে হবে৷