সপ্তদশ দধীচি লহ প্রণাম  বিজন সেতুতে সপ্তদশ দধীচির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, মৌন মিছিল ও প্রতিবাদ সভা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

Bijan Setu১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল কলকাতার বিজন সেতু এলাকায় ও বণ্ডেল গেটে আনন্দমার্গের ১৭জন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ও সেই সপ্তদশ ‘দধীচি’র প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে---গত ৩০শে এপ্রিল দুপুর দু’টোয় দেশপ্রিয় পার্ক থেকে বিজন সেতুর উদ্দেশ্যে এক মৌন মিছিল বের হয়৷ সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত মৌন মিছিল ও তৎপরে বিজন সেতুর ওপরে প্রতিবাদ-সভায় সামিল হন কলকাতার বহু বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সহ হাজার হাজার আনন্দমার্গী ও মানবতাবাদী মানুষ৷

মিছিলটি বিজন সেতুতে পৌঁছলে ওই সমস্ত বুদ্ধিজীবীগণ ও আনন্দমার্গের কর্মকর্তাগণ ও আনন্দমার্গের মহিলা বিভাগের দিদিরা সপ্তদশ দধীচির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন৷ এরপর অবধূতিকা আনন্দ অভীষা আচার্যা ও অন্যান্য দিদিরা ‘লভি যদি পুনঃ মানব জীবন করিব গো মোরা তোমারই কাজ’---এই প্রভাত সঙ্গীতটি পরিবেশন করেন৷ এরপর কীর্ত্তন, মিলিত সাধনা ও শান্তিবাণী পাঠের মাধ্যমে দধীচিদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়৷ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আচার্য কাশীশ্বরানন্দ অবধূত৷

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শতাব্দীর এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে দুষৃকতীদের ও তাদের নেপথ্যে থাকা নেতাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবীতে বিভিন্ন বক্তা বক্তব্য রাখেন৷

প্রথমে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত৷ এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন আই.এস.অফিসার বলাই চক্রবর্ত্তী, মৌলানা আজাদ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক পুলক নারায়ণ ধর, সেদিনের সি.পি.এম. হার্মাদদের আক্রমণের শিকার বিভাংশু মাইতি ও আনন্দমার্গের রিষ্ঠ সন্ন্যাসী আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷

উদ্বোধনী বক্তব্যে আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত প্রথমে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি লাইন তুলে বলেন---

‘একের স্পর্ধারে কভু নাহি দেয় স্থান

দীর্ঘকাল নিখিলের বিরাট বিধান৷’

সিপিএম সেদিন অহমিকার চরম শিখরে উঠে ১৭ জন সন্ন্যাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল৷ তারপরেও তাদের চরম স্পর্ধাভরে বলতে শোণা গেছে---‘‘আবার মারব, শেষ করে দেব’’৷ মানুষের আদালতে আজও তার বিচার না হলেও, নিখিলের বিধানে তাদের বিচার ইতোপূর্বেই হয়ে গেছে৷ আজ তাই সেই সি.পি.এম ধূলোয় মিশে গেছে৷ কিন্তু আনন্দমার্গ সেদিনও ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে৷ ক্রমশঃ সমগ্র বিশ্বজুড়ে এর বিপুল বিস্তার হচ্ছে ও হতে থাকবে৷

প্রাক্তন আই.এ.এস. অফিসার বলাই চক্রবর্ত্তী ও ডঃ পুলক নারায়ণ ধরও সিপিএমের গুণ্ডা বাহিনীর এহেন নৃশংস আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেন৷ তাঁরা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন৷

পরবর্তী বক্তা শ্রী বিভাংশু মাইতি সেদিন আক্রান্ত আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গেই ছিলেন৷ তাঁকেও সিপিএমের হার্মাদরা লোহার রড দিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে অজ্ঞান অবস্থায় মৃত মনে করে রেললাইনের ওপর ফেলে চলে গিয়েছিল৷ পরে রেল পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে তুলে এন.আর.এস. হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়৷ বিভাংশু মাইতি সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেন ও অপরাধীদের আর অপরাধীদের পেছনে যে সমস্ত নেতারা ছিলেন তাঁদের চিহ্ণিত করে কঠোর শাস্তির দাবী করেন৷

সর্বশেষে আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত সিপিএমের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে অপরাধীদের  শাস্তির দাবী করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনি আনন্দমার্গের সর্বাত্মক শোষণমুক্ত সর্বাঙ্গসুন্দর সমাজ গড়ার আদর্শও তুলে ধরেন৷

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রী অসীম বিশ্বাস ও সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংঘের জনসংযোগ সচিব আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত৷