সপ্তদশ দধীচি লহ প্রণাম - বিজনসেতুতে সন্ন্যাসী হত্যার ৪১তম দিবসে মৌনমিছিল ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সিপিএমের ৩৪ বছরের লাল সন্ত্রাসের নিষ্ঠুরতম নিদর্শন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল কলকাতার বিজন সেতু এলাকায় ও বণ্ডেল গেটে আনন্দমার্গের ১৭জন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সেদিনের শাসক দল সিপিএমের ঘাতক বাহিনী৷ এরই প্রতিবাদে ও সেই সপ্তদশ ‘দধীচি’র প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে---গত ৩০শে এপ্রিল দুপুর ২-৩০ মিনিটে দেশপ্রিয় পার্ক থেকে বিজন সেতুর উদ্দেশ্যে এক মৌন মিছিল বের হয়৷ এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত মৌন মিছিল ও তৎপরে বিজন সেতুর ওপরে প্রতিবাদ-সভায় সমবেত হন হাজার হাজার আনন্দমার্গী ও মানবতাবাদী মানুষ৷ আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের পক্ষ থেকে এই দিন মানবতা বাঁচাও দিবস পালন করা হয়৷

মিছিলটি বিজন সেতুতে পৌঁছলে আনন্দমার্গের কর্মকর্তাগণ ও আনন্দমার্গের মহিলা বিভাগের দিদিরা সপ্তদশ দধীচির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন৷ এরপর অবধূতিকা আনন্দ অভীষা আচার্যা ও অন্যান্য দিদিরা ‘লভি যদি পুনঃ মানব জীবন করিব গো মোরা তোমারই কাজ’---এই প্রভাত সঙ্গীতটি পরিবেশন করেন৷ এরপর কীর্ত্তন, মিলিত সাধনা ও শান্তিবাণী পাঠের মাধ্যমে দধীচিদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়৷ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আচার্য কাশীশ্বরানন্দ অবধূত৷

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিংশ শতাব্দীর এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে দুষৃকতীদের ও তাদের নেপথ্যে থাকা সিপিএম নেতাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবীতে বিভিন্ন বক্তা বক্তব্য রাখেন৷

প্রথমে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সেদিনের ঘটনায় আক্রান্ত আনন্দমার্গী শ্রীবিভাংশু মাইতি৷ এরপর আনন্দমার্গ নারীকল্যাণ বিভাগের সর্বত্যাগী কর্মী অবধূতিকা আনন্দ অন্বেষা আচার্যা এরপর বক্তব্য রাখেন আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত, তারপর একে একে বক্তব্য রাখেন ডাঃ বিশ্বজিৎ ভৌমিক, তপোময় বিশ্বাস ও আনন্দমার্গের ৰরিষ্ঠ সন্ন্যাসী আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷

উদ্বোধনী বক্তব্যে শ্রীবিভাংশু মাইতি সেদিনের ঘটনার  প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে সিপিএমের বর্বরতার ও পৈশাচিকতার নিদর্শন তুলে ধরেন৷ তাঁকেও সিপিএমের হার্মাদরা লোহার রড দিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করে অজ্ঞান অবস্থায় মৃত মনে করে রেললাইনের ওপর ফেলে চলে গিয়েছিল৷ পরে রেল পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে তুলে এন.আর.এস. হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়৷ বিভাংশু মাইতি সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেন ও অপরাধীদের আর অপরাধীদের পেছনে যে সমস্ত নেতারা ছিলেন তাঁদের চিহ্ণিত করে কঠোর শাস্তির দাবী করেন৷  এরপর অবধূতিকা আনন্দ অন্বেষা আচার্যা শুধু বিজন সেতু নয় ৩৪ বছরে সিপিএমের রাজত্বে আনন্দমার্গ ও অন্যান্য বিরোধীদের ওপর নৃশংস অত্যাচারের ঘটনাগুলি তুলে ধরেন৷

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত বলেন---মানুষের আদালতে আজও তার বিচার না হলেও, নিখিলের বিরাট বিধানে তাদের বিচার ইতোপূর্বেই হয়ে গেছে৷ আজ তাই সেই সি.পি.এম ধূলোয় মিশে গেছে৷ কিন্তু আনন্দমার্গ আজ শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতবর্ষ নয়, বিশ্বের ১৮২টি দেশে তার বিজয় পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে৷ আনন্দমার্গ সেদিনও ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে৷  সর্বশেষে আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত সিপিএমের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে অপরাধীদের  শাস্তির দাবী করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে তিনি আনন্দমার্গের সর্বাত্মক শোষণমুক্ত সর্বাঙ্গসুন্দর সমাজ গড়ার আদর্শও তুলে ধরেন৷  অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রী শুভেন্দু ঘোষ ও সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংঘের জনসংযোগ সচিব আচার্য দিব্যচেতনানন্দ অবধূত৷