শ্রাদ্ধান্ন

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

শ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে ভোজ কি যুক্তিযুক্ত? বর্তমানে দেখা যায় শ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে চব্যচোষ্য ভোজের আয়োজন করা হয়৷ সকলেই কব্জি ডুবিয়ে খান৷ ‘‘....দাদা আর দুটো ইলিশ পাতুরি দিন তো! অপূর্ব হয়েছে৷ বহুদিন পর এমন রান্না খেলাম  অথবা আহা, সন্দেশটা অসাধারণ!! কোন দোকানের? দাদা ফিস ফ্রাইটা রিপিট করতে বলুনতো!!’’ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ আমার তো মনে হয় বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার মৃত্যু হলেও তাঁর স্ত্রী,স্বামী, সন্তান, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের আনন্দ করার মতো  মানসিকতা কিছুমাত্র থাকে না৷ অনেক দিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যু হলেও অথবা এমন কোনও অসুখ হলে যেটি মানুষটিকে  মৃত্যুর দিকেই টেনে নিয়ে  যাবে সেক্ষেত্রেও তার মৃত্যুর পরেও আমরা শোকার্ত হই৷ মৃত্যুর দশ-বারো--চৌদ্দ দিনের পরেও আমরা সেই শোক ভুলতে পারি না৷

মহাভারতে, অনুশাসন পর্বে লেখা আছে মৃত্যুভোজ কর্মচঞ্চলতা কমিয়ে প্রৌঢ়ত্ব প্রদান করে৷

যে পরিবার মৃত্যু নামক বিপদের সম্মুখীন, সেই প্রবল বিপত্তির  সময় সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ান, টাকা পয়সা থেকে, শারীরিক ও মানসিকভাবে  তাদের সবরকম সাহায্য করুন৷ কিন্তু  এগারো কি তেরো দিনে শ্রাদ্ধ বাড়িতে ভোজ কেন? এ কুসংস্কার পরিত্যাগ করুন৷

মহাভারতের যুদ্ধ আসন্ন৷ শ্রীকৃষ্ণ দুর্র্যেধনের  প্রাসাদে  গিয়ে যুদ্ধ না করার অনুরোধ করেন ও সন্ধির প্রস্তাব রাখেন, কিন্তু দুর্যোধন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে৷ শ্রীকৃষ্ণ মনে কষ্ট পান ও তিনি সেখান থেকে ফিরে যাবার  জন্যে উদ্যত হন৷ সেই সময় দুর্র্যেধন তাঁকে খাবার খেয়ে যেতে অনুরোধ করেন৷ তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন---

‘‘সম্প্রীতি ভোজ্যানি আপদা ভোজ্যানি বা পুনৈঃ....’’  অর্থাৎ যে খাওয়াচ্ছে আর যে খাচ্ছে তাদের মন যদি প্রসন্ন থাকে, তাহলেই খাবার খাওয়া উচিত৷

তাই যিনি খাওয়াচ্ছেন ও যিনি খাচ্ছেন , তাদের মন যদি ব্যথা-বেদনায় পূর্ণ থাকে, সেই পরিস্থিতিতে কখনও ভোজন গ্রহণ করা উচিত নয়৷

যে খাবার মানুষ কান্নাভেজা মনে তৈরি করে, যে খাবার  অশ্রুজলে সিক্ত সেই খাবার  নিকৃষ্ট খাবারের পর্র্যয়ে পড়ে৷ তাই শ্রাদ্ধান্ন অর্থাৎ শ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে ভোজের পক্ষে কোনও যুক্তি নেই৷ এই কুসংস্কারকে বর্জন করা উচিত৷ জন্তু-জানোয়ার থেকেও আমরা শিক্ষালাভ করতে পারি, যারা স্বজন মারা গেলে কোনও খাবার না খেয়ে শোক ব্যক্ত করে৷ মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব৷ কিন্তু  আমরাই আমাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর এগারো বা তেরো দিন পূর্ণ  হবার পরে পাত সাজিয়ে লুচি ছোলার ডাল আর রকমারি খাদ্য আত্মীয়-বন্ধুদের খাওয়াতে বা নিজেরা খেতে তৎপর হয়ে উঠি আর শোক ব্যক্ত করার ভান করি৷ এর চেয়ে বড় নিন্দনীয় কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না৷

যদি আপনি এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন তাহলে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কারুর  মৃত্যুর পরে তার শ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে ভোজে অংশগ্রহণ করবেন না ও এই প্রথাকে রোখবার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন৷ আমাদের মিলিত প্রয়াসেই এই কু-প্রথা ধীরে ধীরে  কিন্তু  একদিন নিশ্চয় সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হতে পারে৷