শ্রদ্ধায় নত প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় পাপীর বিনাশে অবিচল বিজনসেতুতে সপ্তদশ দধীচির স্মরণসভা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

।১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল সভ্যতা ও সংস্কৃতির  পীঠস্থান কলিকাতা শহরে বালিগঞ্জ বিজনসেতু ও বন্ডেল গেটে তৎকালীন শাসকদলের ঘাতক বাহিনী আনন্দমার্গের ১৭জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করে৷ হত্যার পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ড যখন শাসকদল ও তার ঘাত বাহিনীর হাতে সংঘটিত হয়েছে তাই সে অপরাধ আজও বিচারহীন৷ হত্যাকাণ্ডের পরও প্রায় ৩০ বছর শাসন ক্ষমতায় ছিল বিজনসেতুর ঘাতক সিপিএম, তাই সেই ৩০ বছরে কোন বিচার আনন্দমার্গীরা পায়নে৷

২০১১ সালে সিপিএমকে  সরিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস৷ নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ছিল---বিজনসেতুর হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে৷ ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি রাখতে প্রাক্তন বিচারপতি অমিতাভ লালার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন  ঘটন করেন৷ ২০১৯ সালের সেপ্ঢেম্বর মাসে সেই তদন্তের  প্রতিবেদন নবান্নে জমা পড়ে৷ কিন্তু তা আজও প্রকাশ করা হয়নে৷ ইতিমধ্যে বিচারপতি লালা পরলোক গমন করেছেন৷

প্রতিবছর এই ৩০শে এপ্রিল আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের পক্ষ থেকে বিজনসেতুতে সপ্তদশ দধীচির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও মর্মান্তিক ঘটনার বিচারের দাবীতে সভা করা হয়৷ এবারও ৩০শে এপ্রিল অপরাহ্ণ ৩ঘটিকায় দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক থেকে আনন্দমার্গীদের একটি মৌনমিছিল বের হয়ে রাসবিহারী এ্যাভিনিউ দিয়ে  গড়িয়াহাট হয়ে বিজন সেতুতে পৌঁছায়৷ মিছিল পৌঁছানোর পর বিজনসেতুর ঘটনাস্থলে রাখা সপ্তদশ দধীচির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সংঘের কর্মকর্তাগণ ও বিশিষ্টজনেরা৷ এরপর প্রভাত সঙ্গীত ও ‘ৰাৰা নাম কেবলম্‌’ মহানাম মন্ত্র  কীর্ত্তন পরিবেশনের পর বৈদিকমন্ত্র পাঠ করে  দধীচীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে উপস্থিত সকলে৷

অনুষ্ঠানের অন্তিমলগ্ণে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার ও অপরাধীদের শাস্তির দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন বক্তা৷ বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে চল্লিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া বিজনসেতুর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বগটুই হাসখালির ঘটনাও৷ আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত বলেন ---বিজনসেতুর পাপ প্রশ্রয় পেয়ে রামপুর হাটের  অখ্যাত গ্রাম বগটুই পৌঁছে গেছে৷ যে হার্র্মদদের হাত থেকে মুক্তির জন্যে মানুষ রাজ্যে পরিবর্তন এনেছে সেই হার্র্মদরাও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে  ঝাণ্ডা বদল করে নিয়েছে৷ তাই বিজনসেতুর পাপ পুনরপি ঘটছে রাজ্যের যত্রতত্র৷ তিনি বলেন প্রাচীন ভারতের প্রজ্ঞা ও  আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়েই সম্ভব সমাজকে এই কলুষ থেকে মুক্ত করা৷ যা একমাত্র আনন্দমার্গের পক্ষেই সম্ভব৷

অবধূতিকা আনন্দ অন্বেষা আচার্যা সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা ও বর্তমানে নারী জাতির প্রতি অন্যায় অত্যাচার অবিচারের প্রতিকারের দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন৷  ডাঃ বিশ্বজিৎ ভৌমিক আনন্দমার্গের পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন একমাত্র আনন্দমার্গের পক্ষেই সম্ভব বর্তমান সমস্যা সংকুল পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করা৷ আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত বলেন---আনন্দমার্গ দর্শন ও তার সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউট মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের অসারতা প্রমাণ করে প্রকৃত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বাস্তবমুখী পথ দেখিয়েছে, তাই সিপিএমের  পক্ষে মানুষকে বোকা বানানো আর সম্ভব নয়৷ সেই কারণেই আনন্দমার্গের ওপর এই আক্রমণ৷ সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আচার্য কাশীশ্বরানন্দ অবধূত ও শ্রী লক্ষ্মীকান্ত হাজরা৷