গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত নোতুন পৃথিবী পত্রিকার সঙ্গে নাড়ীর যোগ ছিন্ন করে ইহ জগতের কর্ম সমাপন করে সত্যলোকে পাড়ি দিলেন৷ দীর্ঘ ৫৮ বছর তিনি আনন্দমার্গের সঙ্গে জড়িত৷ ১৯৬৩ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি আনন্দমার্গে যোগ দেন৷ তাঁর দীর্ঘ সংঘ জীবনের অধিকাংশ সময় নোতুন পৃথিবীর সম্পাদকের কাজে যুক্ত ছিলেন৷ মাঝে কয়েক বছর জলপাইগুড়ি জেলা থেকে প্রকাশিত ‘সারকথা’ পরবর্তীকালে ‘আলোর পথের নিশানা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন৷ কয়েক বছর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ছিলেন৷ পরে আবার নোতুন পৃথিবী পত্রিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ আমৃত্যু তিনি সেই সম্পাদকের দায়িত্বেই ছিলেন৷
গত ২১শে ফেব্রুয়ারী কলিকাতায় ভি.আই.পি নগর কেন্দ্রীয় আশ্রমে আচার্য সত্যশিবানন্দের সংঘ জীবনে উজ্বল উপস্থিতির স্মৃতিচারণের জন্যে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল৷ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করতে, তাঁর কর্মনিষ্ঠ জীবনের স্মৃতিচারণ করতে ওই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন তাঁর কর্মজীবনের বহু সাথী, আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, নোতুন পৃথিবী পত্রিকার বহু গুণমুগ্দ পাঠক পাঠিকা ও মার্গী ভাইবোনেরা৷
প্রভাত সঙ্গীত, কীর্ত্তন মিলিত সাধনার পর শুরু হয় স্মৃতিচারণ৷ প্রথমেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত তাঁর সংঘে যোগদান, সংঘের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব পালনের তথ্যগুলি তুলে ধরেন৷ এরপর তাঁর কর্মজীবনের সাথী ও গুনমুগ্দদের স্মৃতিচারণায় দীপ্যমান হয়ে উঠে আদর্শে অটল নিয়মনিষ্ঠ জীবনের বিশেষত্ব৷ যখনই যে দায়িত্ব পেয়েছেন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন৷ ব্যষ্টিজীবনের নিয়মানুবর্তিতা, সংঘজীবনের দায়িত্ব পালন কোন কিছুতেই এতটুকু শৈথিল্য তিনি সহ্য করতেন না৷
স্মৃতিচারণা করেন সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা আচার্য ভবেশানন্দ অবধূত, আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত, আচার্য পরিতোষানন্দ অবধূত, আচার্য রবীশানন্দ অবধূত, আচার্য কাশীশ্বরানন্দ অবধূত, আচার্য বীতমোহানন্দ অবধূত, আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা, অবধূতিকা আনন্দ গতিময়া আচার্যা, আচার্য প্রমথেশানন্দ অবধূত ও আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত৷ নোতুন পৃথিবীতে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন ভবেশচন্দ্র বসাক, সুমন শীল তাঁদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে আচার্য সত্যশিবানন্দের আচরণের মানবিকতার দিকটি৷
ব্যষ্টিজীবনে খ্যাতি প্রতিপত্তি ও নিজেকে জাহির করার কোন চিহ্ণ তিনি তাঁর দীর্ঘ সংঘজীবনে রেখে যাননি৷ আচার্য সত্যশিবানন্দের জীবনের সেই দিকটি তুলে ধরেন তাঁর লৌকিক জীবনের আত্মীয় শ্রী সন্দীপ দাশ৷ ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি রাজ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন ও জাতীয় বৃত্তি পেয়েছিলেন৷ ১৯৬৩ সালে কেমিস্ট্রিতে অনার্স নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন ও স্বর্ণপদক পান, ওই বছরেই তিনি সংঘে যোগ দেন৷
নোতুন পৃথিবীর সম্পাদক আচার্য সত্যশিবানন্দজীর প্রয়াণে---মর্মাহত দীর্ঘদিনের সহকর্মী প্রভাত খাঁর শোকপ্রকাশ ঃ সর্বজন প্রিয় ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আমাদের নোতুন পৃথিবী পত্রিকার সম্পাদক মাননীয় আচার্য সত্যশিবানন্দজীর অকস্মাৎ তিরোধানে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও বেদনা হত! একসঙ্গে প্রায় জীবনের অধিকাংশটা কাটিয়েছি তাঁর সঙ্গে নোতুন পৃথিবীর সেবায়৷ তিনি চলে গেলেন তাঁর কাজ সাঙ্গ করে৷ আমরা পড়ে রহিলুম! পরমপিতার শ্রীচরণ কমলে প্রার্থনা জানাই তাঁর আত্মা যেন চিরশান্তি লাভ করে তাঁর আশীবর্বাদে৷ তাঁর অসমাপ্ত কাজকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলের অতি প্রিয় নোতুন পৃথিবীকে শত বাধা বিপত্তিকে তুচ্ছ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর বিদেহী আত্মা যেন আমাদের আশীবর্বাদ করেন৷ আমি আমার একজন পরমাত্মীয়কে হারালুম৷ পত্রিকার যেন ইন্দ্রপতন হয়ে গেল৷
১৪ই ফেব্রুয়ারী, শ্রীরামপুর ঃ আনন্দমার্গের ছাতরা ইয়ূনিটে ধর্মচক্রে উপস্থিত আনন্দমার্গের ভক্তবৃন্দ নোতুন পৃথিবী পত্রিকার সম্পাদক আচার্য সত্যশিবানন্দজীর অকস্মাৎ প্রয়াণের সংবাদে সকলে মর্মাহত হন৷ সমবেত সাধক ও সাধিকাগণ ধর্মচক্রের পর তাঁরা তাঁর সম্বন্ধে স্মৃতিচারণ করেন৷ আচার্য সত্যশিবানন্দজী এই ইয়ূনিটে বহুবার এসেছেন ও প্রায় উপস্থিত সকলের সঙ্গে তাঁর আত্মীক যোগসূত্র ছিল৷ তাঁর অমায়িক ব্যবহারের কথা সবাই স্মরণ করেন ও পরমারাধ্য বাবা শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর অত্যন্ত ভক্ত সন্ন্যাসীর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন৷ সমবেত প্রভাত খাঁ ও কল্যাণী খাঁ তাঁর অতি আপনজন ছিলেন৷ তাঁরা তাঁকে সুদীর্ঘ বছর ধরেই চিনতেন৷ কল্যাণী দিদি বলেন যে দাদা প্রথম জীবনে আচার্য বিদ্যাধর ব্রহ্মচারী হিসাবে মার্গের প্রচারক ছিলেন বীরভূম জেলায়৷ সেই ছোট বেলা থেকেই তিনি দাদার অতি পরিচিত৷ তাছাড়া সম্পাদক হিসাবে তাঁদের বাড়ি প্রায়ই আসতেন পরম আত্মীয় হিসাবে ঘরের লোক হয়ে৷ কারণ তাঁর স্বামী প্রভাতদার সঙ্গে নিবীড় সম্পর্ক ছিল নোতুন পৃথিবীর সুবাদে৷ প্রভাত দা তাঁর সম্বন্ধে অনেক কিছু সমবেতদের কাছে বলেন৷ যা শুনে সমবেত ভক্তগণ অভিভূত হন৷ সকলে দু’মিনিট নীরবতা পালন করে বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে৷
বাঙালী সমাজের শ্রদ্ধাঞ্জলী ঃ শ্রীরামপুরে ১৪ই ফেব্রুয়ারী হুগলী জেলার ‘আমরা বাঙালী’ সমাজের এক ঘরোয়া সভার আয়োজন করা হয়েছিল৷ সেই সভায় সমাজের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন৷ জেলা সম্পাদক শ্রী জ্যোতিবিকাশ সিন্হা প্রবীণ প্রাউটিষ্ট শ্রী প্রভাত খাঁ ও মহাদেব কুণ্ডু ও আরো অনেকে৷
সভার শেষে নোতুন পৃথিবীর সম্পাদক আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূতের প্রয়াণের সংবাদে তারা আশ্চর্য হন ও মর্মাহত হন৷ তাঁরা তাঁর বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনায় ২মিনিট নীরবতা পালন করেন৷ আচার্য সত্যশিবানন্দের সম্বন্ধে প্রভাত খাঁ কিছু স্মৃতিচারণ করেন৷