শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহাপ্রয়াণের ৩৪বর্ষ পূর্ত্তি উপলক্ষ্যে

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

২৫ অক্টোবর ঃ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী পার্থিব দেহের মহাপ্রয়াণের ৩৪বর্ষপূর্ত্তি উপলক্ষ্যে গত ২১ অক্টোবর থেকে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ছয় দিন ব্যাপী অখণ্ড কীর্ত্তনে দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার আনন্দমার্গী সমবেত হয়েছেন৷ মার্গগুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে, সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আনন্দমার্গীরা এই অখণ্ড কীর্ত্তনে যোগদান করেছেন৷ ‘ৰাৰা নাম কেবলম্‌’ মহামন্ত্রের মধুর ধবনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত৷ আশ্রম প্রাঙ্গণে এক অভিনব ভক্তিভাবমণ্ডিত স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে৷ নানান ভাষাভাষী হাজার হাজার মানুষ এক আনন্দ পরিবারের সদস্য হিসেবে এক সঙ্গে মিলেমিশে ভজন-কীর্ত্তন আহার করছেন৷ মার্গগুরুদেবের মহান আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্যে একসঙ্গে বসে পরিকল্পনা ও কর্মসূচী গ্রহণ করছেন৷ মার্গগুরুদেবের যে মহান বাণী ‘মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য’ তার অবিকল বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে এখানে৷ বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা ভাষাভাষীর হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে ‘বাবা নাম কেবলম্‌’ মহামন্ত্র সব ব্যবধান মুছে দিয়েছে৷ জাত - পাত - বর্ণ-সম্প্রদায় ও ভৌগোলিক সীমারেখা সব ভেদাভেদের ঊধের্ব উঠে এক অনবদ্য স্বর্গীয় পরিবেশে সবাই পরমপুরুষের নাম-গানে আপ্লুত৷

কেন্দ্রীয় ধর্ম প্রচার সচিব আচার্য বিশুদ্ধাত্মানন্দ অবধূত জানান গত ২১শে অক্টোবর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে মার্গগুরুদেবের স্মৃতিসৌধে প্রারম্ভিক অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ প্রারম্ভিক অনুষ্ঠানে প্রভাত সঙ্গীত, কীর্ত্তন, সাধনা ও গুরুপূজার পর ৩টে ৩০ মিনিটে ছ’দিন ব্যাপী অখণ্ড কীর্ত্তনের শুভারম্ভ হয়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনন্দমার্গের পুরোধা প্রমুখ সহ কেন্দ্রীয় সমস্ত কর্মকর্তারা ও দেশ-বিদেশ থেকে আগত আনন্দমার্গীরা যোগদান করেন৷

এরপর প্রতিদিন সময়সূচী অনুসারে কখনও সংঘের সন্ন্যাসী ‘দাদা’রা, কখনও সন্ন্যাসিনী ‘দিদি’রা, কখনও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার আনন্দমার্গীরা, কখনও বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত আনন্দমার্গীরা, কখনও বা বহির্ভারতের মার্গীরা পর্যায়ক্রমে অখণ্ড কীর্ত্তনে অংশগ্রহণ করছেন, পাশাপাশি সংঘের বিভিন্ন সেবামূলক কর্মসূচী নিয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিদিন ভোরে পাঞ্চজন্য (প্রাতঃকালীন বিশেষ কীর্ত্তন), মিলিত সাধনা, ধর্মচক্র ও নগরকীর্ত্তনও হচ্ছে৷

প্রতিদিন রাতে ‘মার্গগুরুদেবের প্রবচনের ও আশীর্বচনের রেকর্ড শোণানো হচ্ছে৷ শেষের কয়েকদিন মার্গগুরুদেবের ধর্মমহাচক্রের প্রবচনের ভিডিও দেখানোরও কর্মসূচী রয়েছে৷

এখানে আনন্দমার্গ পাবলিকেশন, প্রাউট পাবলিকেশন সহ সংঘের বিভিন্ন বিভাগের স্টলও খোলা হয়েছে৷ এই ষ্টলগুলিতে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী রচিত আধ্যাত্মিক বিষয়ক, প্রাউট বিষয়ক ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ক পুস্তক ও বিভিন্ন বিভাগের পত্র-পত্রিকা বিক্রয় হচ্ছে৷

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মহাপ্রয়াণ দিবস পালিত--- গত ২১শে অক্টোবর শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহাপ্রয়াণ দিবস স্মরণে ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আনন্দমার্গের ইয়ূনিটগুলিতে ভাবগম্ভীর পরিবেশে ও মর্যাদার সঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহাপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়৷

ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা, তেলিয়ামুড়া, খোয়াই, কমলপুর, কল্যাণপুর, মাছমারা, চড়িলাম, বাইখোয়া সহ প্রতিটি ইয়ূনিটে প্রভাতসঙ্গীত ও অখণ্ড ‘বাবানাম কেবলম্‌’ মহানাম সংকীর্ত্তন ও ইষ্ট-আদর্শ সম্পর্কে নানা আলোচনার মধ্যে দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করেন৷

আগরতলায় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত বারো ঘন্টা অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ আগরতলা ডায়োসিসের বিভিন্ন ইয়ূনিটের মার্গী ভাইবোনেরা কীর্ত্তনে অংশ গ্রহণ করেন৷ কীর্ত্তন মিলিত ঈশ্বর প্রণিধানের পর ডায়োসিস সচিব আচার্য কৃতাত্মানন্দ অবধূত মহাপ্রয়াণ দিবসের তাৎপর্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন৷