২৩শে জানুয়ারী বাম, কংগ্রেস, তূণমূল, বিজেপি, আমরা বাঙালীর মত রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও অরাজনৈতিক সংঘটনও সুভাষ বন্দনায় মেতে উঠেছিল৷ কিন্তু সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ণের ভারত গড়ার কথা কারও মুখেই শোণা গেল না৷ ব্যতিক্রম ছিল আমরা বাঙালী৷
১৯৩৮ সালে প্রথমবার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হবার পর সুভাষচন্দ্র লণ্ডনে ভারতীয় ছাত্রদের সামনে ভাষন দেবার সময় বলেছিলেন---‘দেশীয় পুঁজিপতিরা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে শক্তি যোগাচ্ছে৷ এদের বিরুদ্ধেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, মানুষকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও দিতে হবে৷ এরপরের ইতিহাস সবার জানা৷ কংগ্রেসের আপোষপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্রের সংগ্রামে রাম-বাম কোনপক্ষই সুভাষচন্দ্রের পাশে থাকেনি৷ এই দিন অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দাবী তুলে আমরা বাঙালী সংঘটন ঝাড়খণ্ড,পশ্চিমবঙ্গ, শিলচর, ত্রিপুরা রাজ্যে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের ১২৮তম জন্ম দিবস পালন করে৷ কোলকাতায় একটি শোভাযাত্রা ভবানীপুর, বিজলী সিনেমার কাছ থেকে বার হয়ে এলগিন রোডে সুভাষ চন্দ্রের বাড়ীতে এসে পৌঁছায়৷
সেখানে আমরা বাঙালীর নেতৃবৃন্দ সুভাষচন্দ্রের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান৷ এইদিন হুগলী জেলার শ্রীরামপুুরে প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা ও আমরা বাঙালীর প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সচিব শ্রীপ্রভাত খাঁ বলেন--- আজ রাজনৈতিক দলের নেতারা সুভাষ প্রেমে গদ গদ হয়ে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলছেন, কিন্তু সুভাষচন্দ্র যে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ণ দেখেছিলেন সে কথা কারও মুখে নেই৷ রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি সুভাষচন্দ্র অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্বপ্ণ দেখেছিলেন৷ তাই দেশীয় পুঁজিপতিদের কোপে তাঁকে পড়তে হয়েছিল, তিনি কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷ কম্যুনিষ্টরাও সেদিন সুভাষ বিরোধিতায় নামতে বাধ্য হয়েছিল দেশীয় পুঁজিপতিদের তাড়নায় ও অধুনালুপ্ত শোভিয়েত ইয়ূনিয়নের স্বার্থরক্ষা করতে৷ শ্রী খাঁ বলেন--- সমাজতন্ত্রের মুখোশধারী এই কম্যুনিষ্টরাও পুঁজিপতিদের অর্থে পালিত, তাই সুভাষ বিরোধীতায় নেমেছিল, সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছিল দলীয় মুখপত্রে৷এরপর শ্রী খাঁ বলেন সুভাষচন্দ্র যে স্বপ্ণ দেখেছিলেন --- সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়েছেন মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউটে (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব)৷ সেই তত্ত্বকে বাস্তবায়ন করাই আমরা বাঙালীর মুখ্য উদ্দেশ্য৷ তথাকথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোর সঙ্গে আমরা বাঙালীর আদর্শগত পার্থক্য এখানেই৷ আমরা বাঙালী শুধু বাঙালী জনগোষ্ঠীর দল নয়, বিশ্বের প্রতিটি শোষিত নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর আর্থিক মুক্তির আন্দোলন আমরা বাঙালীর আন্দোলন, তাই আমরা বাঙালীর পক্ষেই সম্ভব সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ণ সার্থক করা৷