টেলিকম কোম্পানিগুলির শোষণ

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা, রত্নেন্দু দাশ
সময়

সেই দিনগুলির কথা এখনও মনে হয়, যখন আমাদের প্রায় সবারই মুঠো ফোন ছিল টু.জি, আর নেট হল থ্রি.জি. ফোর.জি ছিল না, ছিল কেবল টু.জি৷ আর সেই টু.জি দিয়েই প্রয়োজনে নেট চালাতুম বা টেক্সট করতুম৷ যখন বাজারে জিও কানেকশন এলো, শুরু হয়ে গেল হইচই কারণ প্রথমেই তারা বিনামূল্যে সেবা দিল৷ সবাই সেই জিও সিম নিতেলাগলো৷ বাকী টেলিকম কোম্পানিগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল৷ কারণ তখন জিওই একচেটিয়া ভাবে দেশের বাজার দখল করে নিচ্ছিল৷ টিকে থাকার জন্য তাদের মধ্যেও শুরু হলো প্রতিযোগিতা৷ জিও যেভাবে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছিল তাতে মানুষ ভেবেছিল হয়তো বা এমনইভাবে সারাজীবন জিওর কাছ থেকে ফ্রি নেট পাওয়া যাবে৷ কিন্তু সেটা ছিল মস্ত বড় ভুল চিন্তা৷ প্রথমে জিও ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছিল৷ তারপর বলল, ৯৯ টাকার প্রাইমপ্যাক রিচার্জ করতে হবে যা চলবে একবছর৷ এর কিছুদিন পরেই সেই ফ্রি সার্ভিস বন্ধ করে দিল৷ এটা তখনই দিল যখন মানুষ বলা যেতে প্রায় পুরোপুরি নেট অ্যাডিক্টেড্‌ হয়ে গেছে৷ তখন জিও যে রিচার্জের মূল্য তালিকা বের করেছিল তা মানুষের মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ছিল৷ অল্পদিনের মধ্যেই তারা এই রিচার্জ প্ল্যানিংয়ের পরিবর্তন করলো৷ আর এই পরিবর্তন প্রত্যেকটা টেলিকম কোম্পানি একসাথেই করলো যাতে মানুষ এক কোম্পানির সিম বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানির সিম না নেয়৷ এ থেকে মনে হয় এই সব টেলিকম কোম্পানিগুলি একই স্কুলের ছাত্র, যারা  ছলে-বলে কৌশলে মানুষের পকেট কাটে৷ যদিও মানুষ তখন ফ্রি সার্ভিস পেয়ে খুবই উল্লসিত হচ্ছিল৷ কিন্তু তারা  বুঝতে পারেনি ভিতরের কথা অর্থাৎ পুঁজিবাদী শোষনের ছলা কলা৷ পুঁজিবাদীদের একচেটিয়া শোষনের প্যাঁচ পয়জার৷ পুঁজিবাদী শোষন বলা হচ্ছে এই জন্যই মানুষ কষ্ট পেয়ে মরুক তাতে তাদের কিছু যায় আসে না৷ মুনাফা লাভটাই তাদের কাছে আসল৷

আজকাল অনেকেই প্রশ্ণ করেন, যদি মাস হয় ৩০ বা ৩১ দিনে তবে টেলিকম কোম্পানিগুলি মাস ২৮ দিনে কেন হয়? কেন দুদিন কমিয়ে দেয়৷ দুদিন কমানোতেই তাদের লাভ অনেক বেশি৷ বলছে ফোর জি. পরিষেবা, কিন্তু আসলে দিচ্ছে আসলে থ্রি.জি পরিষেবা৷ আবার কখনোওতো নেটওয়ার্কই থাকে না৷ কোম্পানিতে অভিযোগ জানালে তারা বলে যে গ্রাহক সংখ্যা অধিক হওয়ার জন্যেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ যা খুব স্বল্পদিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে৷ কিন্তু দিনের পর দিন সপ্তাহের পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সমাধান আর হয় না৷ এইভাবে জনগণকে ঠকিয়ে টেলিকম কোম্পানিগুলি নিজেরা মুনাফার পাহাড় তৈরী করছে

এখন প্রশ্ণ হচ্ছে সরকার যদি জনগণকে কম ব্যয় কল ও নেট চালানোর ব্যবস্থা করতো তবে ভাল হত যা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকত৷ কিন্তু সরকার এটা করেনি আর করবেও না৷ সরকার যে পুঁজিপতিদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পায় ভবিষ্যতেও পাবে৷ সরকার নিয়ন্ত্রিত বি.এস.এন.এল এর অবস্থা খুবই খারাপ৷ এরজন্য দায়ী সরকারের ভুল পলিসি, পরিচালন কর্ত্তৃপক্ষের অসততা, পরিচালনার ত্রুটি ও দায়সারা মনোভাব৷ বর্তমানে কেন্দ্রের ‘বেচারাম’ সরকার কষ্ট করে তৈরী করা পূর্বসূরিদের  সরকারী সব সম্পদ পুঁজিপতিদের বেচে দিচ্ছে৷ সরকার যে সবকিছু বেসরকারীকরণ করছে এতে লাভের গুড়ের সিংহভাগ খাবে পুঁজিপতিরা আর বাকী অংশ যাবে সরকারী পার্টির তহবিলে৷ মরবে সাধারণ মানুষ৷