সেই দিনগুলির কথা এখনও মনে হয়, যখন আমাদের প্রায় সবারই মুঠো ফোন ছিল টু.জি, আর নেট হল থ্রি.জি. ফোর.জি ছিল না, ছিল কেবল টু.জি৷ আর সেই টু.জি দিয়েই প্রয়োজনে নেট চালাতুম বা টেক্সট করতুম৷ যখন বাজারে জিও কানেকশন এলো, শুরু হয়ে গেল হইচই কারণ প্রথমেই তারা বিনামূল্যে সেবা দিল৷ সবাই সেই জিও সিম নিতেলাগলো৷ বাকী টেলিকম কোম্পানিগুলির অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল৷ কারণ তখন জিওই একচেটিয়া ভাবে দেশের বাজার দখল করে নিচ্ছিল৷ টিকে থাকার জন্য তাদের মধ্যেও শুরু হলো প্রতিযোগিতা৷ জিও যেভাবে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছিল তাতে মানুষ ভেবেছিল হয়তো বা এমনইভাবে সারাজীবন জিওর কাছ থেকে ফ্রি নেট পাওয়া যাবে৷ কিন্তু সেটা ছিল মস্ত বড় ভুল চিন্তা৷ প্রথমে জিও ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছিল৷ তারপর বলল, ৯৯ টাকার প্রাইমপ্যাক রিচার্জ করতে হবে যা চলবে একবছর৷ এর কিছুদিন পরেই সেই ফ্রি সার্ভিস বন্ধ করে দিল৷ এটা তখনই দিল যখন মানুষ বলা যেতে প্রায় পুরোপুরি নেট অ্যাডিক্টেড্ হয়ে গেছে৷ তখন জিও যে রিচার্জের মূল্য তালিকা বের করেছিল তা মানুষের মোটামুটি ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই ছিল৷ অল্পদিনের মধ্যেই তারা এই রিচার্জ প্ল্যানিংয়ের পরিবর্তন করলো৷ আর এই পরিবর্তন প্রত্যেকটা টেলিকম কোম্পানি একসাথেই করলো যাতে মানুষ এক কোম্পানির সিম বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানির সিম না নেয়৷ এ থেকে মনে হয় এই সব টেলিকম কোম্পানিগুলি একই স্কুলের ছাত্র, যারা ছলে-বলে কৌশলে মানুষের পকেট কাটে৷ যদিও মানুষ তখন ফ্রি সার্ভিস পেয়ে খুবই উল্লসিত হচ্ছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি ভিতরের কথা অর্থাৎ পুঁজিবাদী শোষনের ছলা কলা৷ পুঁজিবাদীদের একচেটিয়া শোষনের প্যাঁচ পয়জার৷ পুঁজিবাদী শোষন বলা হচ্ছে এই জন্যই মানুষ কষ্ট পেয়ে মরুক তাতে তাদের কিছু যায় আসে না৷ মুনাফা লাভটাই তাদের কাছে আসল৷
আজকাল অনেকেই প্রশ্ণ করেন, যদি মাস হয় ৩০ বা ৩১ দিনে তবে টেলিকম কোম্পানিগুলি মাস ২৮ দিনে কেন হয়? কেন দুদিন কমিয়ে দেয়৷ দুদিন কমানোতেই তাদের লাভ অনেক বেশি৷ বলছে ফোর জি. পরিষেবা, কিন্তু আসলে দিচ্ছে আসলে থ্রি.জি পরিষেবা৷ আবার কখনোওতো নেটওয়ার্কই থাকে না৷ কোম্পানিতে অভিযোগ জানালে তারা বলে যে গ্রাহক সংখ্যা অধিক হওয়ার জন্যেই এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷ যা খুব স্বল্পদিনের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে৷ কিন্তু দিনের পর দিন সপ্তাহের পর সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সমাধান আর হয় না৷ এইভাবে জনগণকে ঠকিয়ে টেলিকম কোম্পানিগুলি নিজেরা মুনাফার পাহাড় তৈরী করছে
এখন প্রশ্ণ হচ্ছে সরকার যদি জনগণকে কম ব্যয় কল ও নেট চালানোর ব্যবস্থা করতো তবে ভাল হত যা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই থাকত৷ কিন্তু সরকার এটা করেনি আর করবেও না৷ সরকার যে পুঁজিপতিদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পায় ভবিষ্যতেও পাবে৷ সরকার নিয়ন্ত্রিত বি.এস.এন.এল এর অবস্থা খুবই খারাপ৷ এরজন্য দায়ী সরকারের ভুল পলিসি, পরিচালন কর্ত্তৃপক্ষের অসততা, পরিচালনার ত্রুটি ও দায়সারা মনোভাব৷ বর্তমানে কেন্দ্রের ‘বেচারাম’ সরকার কষ্ট করে তৈরী করা পূর্বসূরিদের সরকারী সব সম্পদ পুঁজিপতিদের বেচে দিচ্ছে৷ সরকার যে সবকিছু বেসরকারীকরণ করছে এতে লাভের গুড়ের সিংহভাগ খাবে পুঁজিপতিরা আর বাকী অংশ যাবে সরকারী পার্টির তহবিলে৷ মরবে সাধারণ মানুষ৷