থাইল্যাণ্ডের বন্যাপ্লাবিত থাম লুয়াং গুহার ৪ কিলোমিটার ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ১৭ দিন বন্দী থাকার পর নির্র্ঘত মৃত্যুর কবল থেকে শেষ পর্যন্ত ১০ই জুলাই ১২জন কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হ’ল৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সারা বিশ্ববাসী৷
‘ওয়াইল্ড বোয়ার্স’ নামে বাচ্চাদের ফুটবল টীম৷ এই টিমে ছিল ১১ থেকে ১৬ বছরের ১২ জন ফুটবল প্লীয়ার্স ও তাদের কোচ ২৫ বছর বয়সী এক্কাপল চান্ডাবং৷ খেলার বাইরে এই কোচের আর এক পরিচয় হ’ল তিনি একজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও আধ্যাত্মিক সাধক৷ শুধু খেলা নয়, ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক একাগ্রতা, মনঃশক্তি অর্জন ও মনকে কিভাবে বিশুদ্ধ চেতনায় সমর্পণ করে স্থির শান্ত করতে হয়--- এসবও শেখাতেন তিনি৷ এই ১৭দিনের খাদ্যহীন , পানীয় জলহীন অন্ধকার কুঠুরিতে এই সাধনা তাদের মনঃশক্তি ও মনঃসাম্য রক্ষায় যে কাজ করেছিল তা সহজেই অনুমেয়৷ কারণ ইনটারনেটের মাধ্যমে ভিডিওতে দেখছি---গুহার ভেতরে আটকে পড়া ছেলেদের মুখের উপর উদ্ধারকারী দলের ক্যামেরার আলো পড়তেই ভেসে উঠল বাচ্চাদের দু-হাত জোড় করে নমস্কারের মুদ্রায় উদ্বেগহীন প্রশান্ত মুখের ছবি৷ কে বলবে ওরা ১৩/১৪ দিন না খেয়ে আছে! আত্মবিশ্বাস, ধর্মের প্রতি বিশ্বাস, সমর্পণ, বিনম্রতা ও সমবেত শক্তির ওপর বিশ্বাসের জোরে ওরা সুস্থ অবস্থায় ফিরে এল৷
গত ২৩শে জুন কোচ সহ ১২ জন খুদে ফুটবলার এই রহস্যময় অন্ধকার গুহাতে অভিযান চালিয়েছিল৷ গুহার ভেতরে ৪ কিলোমিটারের বেশী পথ ওরা এগিয়ে গেছে৷ এমন সময় প্রচণ্ড বর্ষণের ফলে গুহা ডুবে যায়৷ সেই অন্ধকার গুহায় কোনোরকমে একটা উঁচু পাথরের ওপর গুটিশুটি মেরে সবাইকে আত্মরক্ষা করতে হয়৷ গুহায় ঢোকা ও বেরুনোর পথ খুব সরু৷ তার ওপর প্রাকৃতিক দুর্র্যেগ৷ বন্যার জলে গুহা নিমগ্ণ৷ থাইল্যাণ্ড সরকারের পাঠানো প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী দল উদ্ধার কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ তাদের এই উদ্ধারকার্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের গোচরে এলে কোটি কোটি মানুষ দারুণ উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা নিয়ে প্রতীক্ষা করতে থাকে৷
শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকারীরা পৃথক রাস্তা তৈরী করে ১ম দফার (৮ই জুলাই) ৪ জনকে, ২য় দফায় (৯ই জুলাই) আরও ৪ জনকে, ৩য় দিনে ৩ জনকে ও ৪থ দিনে বাকি ফুটবলার ও কোচকে উদ্ধার করে৷
এই কিশোর ফুটবলারদের উদ্ধারের দিকে তাকিয়ে ছিল সারা বিশ্বের মানুষ৷ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফুটবলার লিয়োনেল মেসি, টেকলুরু এলন মাস্ক সহ বহু তারকা ফুটবলারও তাদের জন্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন৷
উদ্ধার করা সমস্ত কিশোর ও তাদের কোচকে এখন হাসপাতালে রাখা হয়েছে৷ তারা চিকিৎসাধীন৷ তবে বিপন্মুক্ত বলে জানানো হয়েছে৷