জাতিভেদ ও নারীর মর্যাদা হ্রাস
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷
–সম্পাদক)
(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷
–সম্পাদক)
পূর্ব প্রকাশিতের পর,
১৫) শাশ্বতী অঙ্গিরাশি ঃ শাশ্বতী অঙ্গিরাশি ঋষি অঙ্গিরাশ এর কন্যা ছিলেন এবং এই ঋষিকা ঋক্বেদের ৮.১.৩৪ নং সূক্তোটির রচয়িতা,
১৬) রাত্রি ভরদ্বাজী ঃ রাত্রি ভরদ্বাজী ঋষি ভরদ্বাজ এর কন্যা ছিলেন ইনি ঋক্বেদের ১০.১২৭ নং সূক্তোটি রচনা করেন৷
১৭) সিকত নিভাবরী ঃ - সিকত নিভাবরী ঋষি নিভাবরের কন্যা ছিলেন তিনি ঋক্বেদের ৯.৮৬.১১-২০ নং সূক্তোটি রচনা করেন৷
১৮) সূর্য্য সাবিত্রী ঃ --- সূর্য্য সাবিত্রী সবিতার কন্যা, ইনি ঋক্বেদের ১০.৮৫ নং সূক্তোটির রচয়িতা৷
১৯) ঊবর্বশী ঃ ঊবর্বশী ছিলেন পুরুরবার পত্নী তিনি ঋকবেদের ১০.৯৮ নং সূক্তোটির রচয়িতা৷
দিকে দিকে নারী নির্যাতন, নারীর শ্লীলতাহানি, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে সর্বত্রই প্রতিবাদ আন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ থেকে বুদ্ধিজীবী সকলেই এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সরব৷ মৌন মিছিল, মোমবাতি মিছিল থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার সবই হচ্ছে৷ এসব পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদে পাশবিকতার বিরুদ্ধে জনসাধারণের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ নিঃসন্দেহে একটা ভালো দিক৷ মানূুষের এই শুভ উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি কেউই কিন্তু এই ধরণের জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে যে মূল কারণগুলি নিহিত আছে সেগুলির ব্যাপারে বিশেষ আলোকপাত করতে চাইছেন না বা করছেন না৷ আর এখানেই রয়ে যাচ্ছে ত্রুটি৷ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর অপরাধীর
গান্ধারী ছিলেন আফগান মহিলা৷ কান্দাহার (সংস্কৃতে ‘গান্ধার’) নামে এক দেশ ছিল ও গান্ধারী ছিলেন সেই দেশের কন্যা৷ তৎকালীন ভারতীয়রা কান্দাহারকে বলতেন ‘প্রত্যন্ত দেশ’ – সুদূর সীমান্তবর্তী দেশ৷ খাঁটি ভারতবর্র্ষ বলতে যা’ বোঝায় তা’ নয়৷
‘আমি নারী আমরা পারি’--- এই ক্যাচ লাইনটির মধ্যে যে কতখানি না পারার যন্ত্রণাকে আড়াল করা হচ্ছে তার খবর কজন রাখে!
নারী কল্যাণ ঃ সমাজে নারীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, একান্তই দুর্বিসহ৷ সংঘের যারা ‘তাত্ত্বিক’, তাদের কর্ত্তব্য হ’ল অনগ্রসর মহিলাদের মধ্যে কল্যাণমূলক কাজ করা, তাদের কুসংস্কার–নিরক্ষর দূর করা, ধর্মচক্রের বন্দোবস্ত করা ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা৷ দেখা যায়, স্বামীর মৃত্যুর পর নারীরা আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হন৷ তাই তাঁরা যাতে স্বাধীনভাবে জীবিকার্জন করতে পারেন সে ধরণের সুযোগ তৈরী করতে হবে৷
এই সমাজে পুরুষেরা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে৷ পুরুষদের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতার জন্যে পরিত্যক্তা নারীদের একাংশ পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে ৰাধ্য হয়৷ যখন সমাজে নারীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান মর্যাদা পাবে তখন এই ধরণের বৃত্তি ৰন্ধ হয়ে যাবে৷ যে সব নারী ওই জঘন্য বৃত্তি পরিত্যাগ করে নিজের চরিত্র শুধরে নেবেন, সেই সব নারীকে উপযুক্ত মর্যাদা সমাজকে দিতে হবে৷ পতিতাবৃত্তি সামাজিক–র্থনৈতিক ব্যবস্থার কুফল৷
এই দশ লাখ বৎসরের মানুষের ইতিহাসে মানুষের প্রতি সুবিচার করা হয়নি৷ মানুষের একটি শ্রেণী, একটি বর্গের প্রতি বেশী বাড়াবাড়ি করা হয়েছে, বেশী আদিখ্যেতা করা হয়েছে, ও তা, করতে গিয়ে অন্যকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে৷ একজন মানুষ লড়াই করল, মরল, আত্মদান দিল, কাগজে বড় করে তা ছেপে দেওয়া হ’ল, আর সে মরে যাওয়ার পর ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলিকে নিয়ে তার বিধবা স্ত্রীকে কী ধরণের অসুবিধায় পড়তে হ’ল সেকথা খবরের কাগজে বড় করে ছাপানো হ’ল না অর্থাৎ একতরফা বিচার করে আসা হয়েছে৷ যদিও ব্যাকরণগত ব্যাপার, আর হঠাৎ বদলানো যায় না, তবু ‘ম্যান’ ‘man’ এই কমন জেণ্ডারের মধ্যে ‘ম্যান’, আর ‘ওম্যান’ •woman— দুই–ই এসে যায়৷ অথচ ‘ওম্যান’ এই কমন জেন্ডার
কতিপয় নারী লোভের বশবর্ত্তী হয়ে অর্থ উপার্জনের জন্যে শরীর বিক্রী করছে–প্রায় নগ্ণ হয়ে৷ প্রাত্যহিক সংবাদপত্রে, বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায়, দূরদর্শনে স্বল্প পোষাকে শরীর দেখিয়ে কিশোর–যুবাদের কাম রিপুকে শুড়শুড়ি দিয়ে যৌন–আবেদনে হাতছানি দিয়ে শরীরে শিহরণ এনে দিচ্ছে৷ এদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়৷ এদের ধ্বংস অনিবার্য৷ এদের কবল থেকে শিশু–কিশোর–যুবা কেউই বাঁচবে না সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে৷ এই সমস্ত নারীরা নিজেরাও মরবে, অন্যদেরও মারবে৷ সংসারে যারা গুরুজন তারা অসহায়ভাবে দেখে যাবে, লালন–পালন করে এই প্রজন্মকে বাঁচাতে পারবে না৷ দর্শক হয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে৷ কেউ সুস্থ শরীর মন নিয়ে ব
সম্প্রতি আমাকে একটি দুরূহ সমস্যার সম্মুখীন হ’তে হয়েছিল৷ সমস্যাটা বা প্রশ্ণটা হয়তো কিছুটা দুরূহ কিন্তু উত্তরটা খুবই সরল৷ প্রশ্ণ ছিল, মহিলারা মুক্তি–মোক্ষের অধিকারী কি না৷
কিছুদিন আগে তোমাদের বলেছিলুম যে তন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘‘দেহভৃৎ মুক্তো ভবতি নাত্র সংশয়ঃ’’৷ আত্মজ্ঞান লাভের নূ্যনতম যোগ্যতা হ’ল এই যে সাধককে মানুষের শরীর পেতে হবে৷ এটাই হ’ল তার নূ্যনতম যোগ্যতা৷ কই, এখানে তো উল্লেখ করা হয়নি যে সে সাধক নারী বা পুরুষ হবে৷ এর থেকে এটাই পরিষ্কার যে নারী–পুরুষ উভয়েই মুক্তি–মোক্ষ লাভের সমান অধিকারী৷