দেশে দেশে বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু আদর্শবান মানুষ জন্মগ্রহণ করেন (এখানে আদর্শ মানে পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ)৷ যারা ইষ্টকে জীবনের ধ্রুবতারা জ্ঞান করে ও আদর্শকে পাথেয় করে ঝাঁপ দেন কর্মসমুদ্রে৷ আদর্শের পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধরে বিশ্বমানবতার বাণী পৌঁছে দেন মানুষের ঘরে ঘরে৷ আদর্শের জন্যে এরা শত বাধার উত্তুঙ্গ পর্বত শিখরকেও অনায়াসে অতিক্রম করে যান৷ কোন বাধা-বিপত্তি, নির্যাতন এদের দমাতে পারে না৷ আদর্শের জন্যে এরা প্রয়োজনে হাসতে হাসতে মৃত্যুকে বরণ করেন৷ তাইতো তারা ব্যতিক্রমী---মৃত্যুকে বরণ করে তারা হন অমর দধিচী৷ এরকমই আমাদের মাঝে একজন ছিলেন আদর্শের জন্য আত্মত্যাগী অমর দধিচী রবি সরকার৷ কোচবিহার জেলায় দিনহাটার খারু ভাঁজ গ্রামের এই অসম সাহসী যুবক ছিলেন আনন্দমার্গের একনিষ্ট অনুগামী ভক্ত সাধক৷ গত ২৯শে আগষ্ট ছিল তার বলিদান দিবস৷
১৯৩৯ সালের ২৮শে আগষ্ট মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী কোচবিহার এসেছিলেন ধর্মমহাচক্রের জন্য৷ ২৮,২৯,৩০শে আগষ্ট ছিল ধর্মমহাচক্র৷ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মার্গের বহু অনুগামী এসেছিল এই ধর্ম মহাচক্রে তাদের প্রাণ প্রিয় ৰাৰাকে দেখতে, তার প্রবচন শুণতে৷ কিন্তু আনন্দমার্গের এই ধর্মমহাচক্র পণ্ড করতে অন্ধকারের পিশাচ সি.পি.এম তাদের ঘাতক বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে হামলা চালায়৷ ধর্মমহাচক্রে আগত অগণিত ভক্তদের জীবনও সম্পদ রক্ষার্থে আনন্দমার্গের সেচ্ছাসেবক বাহিনী বাঁধা দিতে গেলে গুণ্ডাদের আক্রমণে অনেকে গুরুতর আহত হয়৷ পরদিন শ্রী রবি সরকার মৃত্যুবরণ করেন৷ আহতদের অন্যতম ছিল বিমলেন্দু ভৌমিক (থানেশ্বর), তুলসী সিং (জ্ঞানেশ্বর) ও আরও কয়েকজন৷ আদর্শের জন্য মৃত্যুবরণ করে রবি সরকার আনন্দমার্গের ইতিহাসে অমর দধীচি হয়ে রইলেন৷
রবি সরকারের সেই আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি৷ যে অত্যাচারী সিপিএম এর বিরুদ্ধে লড়াই করে যিনি আত্মত্যাগ করেছেন সেই সিপিএম আজ সারা ভারত ও পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে৷
আজ তার বলিদান দিবসে তার অমর আত্মার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই৷
‘‘প্রাণের প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে
ওই যে ওরা চলে যায়’’