একজনের মুখে কয়েকদিনের না-কামানো দাড়ি৷ গায়ে কালো টি-শার্ট, প্যান্ট ও ফর্ম্যাল জুতো৷ অন্যজন ক্লিন শেভড৷ ফুল্লস্লিভ শার্ট ‘ইন’ (প্যান্টে গুঁজে) করে পরা, হাতা সামান্য গোটানো৷ দু’জনের মুখেই চোস্ত ইংরেজি৷ প্রথমজনের নাম নীতিন চৌধুরী৷ দ্বিতীয়জন শচীন চৌধুরী৷ দুই ভাই৷
প্রাথমিক বর্ণনায় মনে হতেই পারে, এরা বুঝি কোন কর্র্পেরেট চাকুরে৷ শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্য সেরকমই ইঙ্গিত দেয়৷ নীতিন এমবিএ ডিগ্রিধারী৷ শচীন বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর৷ কিন্তু আপাতত দু’জনেই ‘অমৃতসরী খানা’ বিক্রেতা৷ ঠেলায় বিক্রি করছেন পরোটা৷ করোনা মহামারীই এভাবে রাস্তায় বসিয়েছে তাঁদের৷
শ্রমমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনা পূর্ব সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬শে মার্চের আগে সারা দেশে নটি ফর্ম্যাল সেন্টারে কাজ করতেন প্রায় ২ কোটি ১৭ লক্ষ ৮০ হাজার পুরুষ ও ৯০ লক্ষ মহিলা কর্মী৷ কিন্তু লক্ডাউনের পার ২০২০ ১লা জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী তাদের মতোই প্রায় ১৬ লক্ষ পুরুষ ও সাড়ে ৬লক্ষ মহিলা চাকরী হারিয়েছেন৷ এহেন ছবিরই প্রতিফলন যেন দেখা গেল যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের রাস্তায়৷ লক্ডাউনের বছরখানেক পরেই কর্মহারা হয়ে বর্তমানে গাজিয়াবাদের অন্তর্গত জনপদ ইন্দিরাপুরমের রাস্তায় নান-রুটি, লাচ্ছা পরোটা বিক্রি করছেন এমবিএ ডিগ্রিধারী নীতিন৷ সঙ্গী এরকম পাস করা ভাই শচীন৷
৪১ বছর বয়সি নীতিন বলছিলেন, ‘‘২০০৭ সালে এমবিএ পাস করার পর ১৪ বছর বিভিন্ন কর্র্পেরেট সংস্থায় কাজ করেছি৷ কিন্তু ২০২১ সালের ২৩শে ডিসেম্বরের পর থেকে তা আর নেই৷ কর্তৃপক্ষ দাবী করেছিল কোম্পানি ক্ষতিতে চলছে৷ তাই চাকরিটা যায়৷ নিরুপায় হয়ে এই খাবারের দোকান খুলেছি৷’ ভাই শচীনও ইউপিএ জমানায় ২০০৮ সাল থেকে কাজ করেছেন এভিয়েশন সেক্টরে৷ কর্মযোগ্যতায় গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া, দুবাই৷ কিন্তু আচমকা ২০১৯ সালে মোদি জমানায় চলে গেল চাকরিটা৷ শচীন বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে পিএফ, গ্র্যাচুইটি কিছুই মেলেনি৷ তাই একপ্রকার সঞ্চয়হীন অবস্থায় প্রায় রাস্তায় দাঁড়াতে হয়েছিল৷ এখন এই ঠেলায় খাবার বিক্রি করেই ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করছি৷ আশা করি, ভবিষ্যতে আগের মতোই নিজেদের দাঁড় করাতে পারব৷’
দুই সন্তানের বাবা নীতিন কাজ হারিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করলেও কবে যে লাভের মুখ দেখবেন, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে রয়েছে প্রশ্ণ৷ তবুও জীবনজীবিকার লড়াইয়ে হারতে নারাজ বুলন্দশহরের এই বাসিন্দা৷ কাজ হারানো ভাইকে নিয়ে গাজিয়াবাদের রাস্তায় সকাল থেকে সন্ধ্যে ঠায় অপেক্ষা করেন গ্রাহকের৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা বাড়ছেও৷ তাঁদের চোখ হয়তো উৎসাহিত হতে পারেন মোদি জমানায় কাজ হারানো অন্যরা৷ কারণ, লাচ্ছা পরোটা, আলু-নান, ডাল মাখানি, ছোলে-আলুর সঙ্গে মুখরোচক খাবারের থালায় যে আরও একটি জিনিস অজান্তে সাজিয়ে দিচ্ছেন নীতিন, শচীনরা৷ তা হল, স্বপ্ণ!