যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র রাজ্য দ্বন্দ্ব সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলই সমাধানের পথ

সংবাদদাতা
পি.এন.এ .
সময়

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্জাব অসম ও পশ্চিমবঙ্গে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এলাকা ১৫ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিমি করার৷ অসমে ডবল ইঞ্জিন সরকার (কেন্দ্র ও রাজ্যে) বিজেপি সরকার থাকায় কোন বিরোধ নেই৷ কিন্তু পঞ্জাব পশ্চিমবঙ্গের সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ দুই রাজ্যের বিধানসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রস্তাবও পাশ হয়েছে৷

শুধু বি.এস.এফের এলাকা বৃদ্ধি নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে বিশেষ করে ভিন্ন দল ক্ষমতায় থাকলে৷ বহু দলীয় গণতন্ত্রে ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় কেন্দ্র ও রাজ্যে ভিন্ন দলের শাসন থাকাটাই স্বাভাবিক, তাতে বিরোধ বাধার কথা নয়৷ কিন্তু শাসক দলের উদ্দেশ্য যদি সু-শাসন ও জনকল্যাণ না হয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত  করা হয় ও রাজ্যে বিরোধী দল ক্ষমতায় থাকলে তাকে জব্দ করার একটা প্রচেষ্টা থাকে৷ বিরোধ তখনই বাধে৷ স্বাধীনতার  জন্মলগ্ণ থেকেই ভারতবর্ষে এই জিনিসটাই হয়ে আসছে৷ বর্তমান শাসক দলনেতা যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মানতেই চায় না৷ তারা কথায় কথায় এক রাষ্ট্র-একভাষা-এক রেশন কার্ড এক শিক্ষানীতি ইত্যাদি নানা ইস্যুতে রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করতে চায়৷

ভারতবর্ষ বহু ভাষাভাষী, কৃষ্টি-সংস্কৃতি সম্পন্ন বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মিলিত যুক্তরাষ্ট্র৷ ব্রিটিশ দেশ-শাসনের ও শোষনের সুবিধার্থে তার-নীতি নির্দ্ধারন করেছিল৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীন ভারতও সেই নীতি মেনেই চলছে৷ সার্বিক জনকল্যাণের ভাবনা দেশের কোন শাসকই স্বাধীনতার পর থেকে নেয়নি৷ বরং রাজ্য গুলিতে বিরোধী দল শাসন ক্ষমতায় থাকলে তাকে নানাভাবে বিব্রত করা ও কেন্দ্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজ্যে সরকার ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসন করার চেষ্টা করে বা করে থাকে৷ তার নজীরও আছে৷

আসলে স্বাধীনতার নামে যা হয়েছে সেটা হ’ল রাজনৈতিক ক্ষমতার হস্তান্তর৷ স্বাধীনতার সংগ্রামের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকা উচিৎ ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন৷ কিন্তু ভারতবর্ষের তৎকালীন রাষ্ট্র নেতারা সে পথে যাননি৷ একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সুভাষচন্দ্র৷ তাই তার শেষ পরিণতি আজও অজ্ঞাত৷ আসলে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুখ্যভূমিকা নিয়েছিল যে কংগ্রেস তার নিয়ন্ত্রণ ছিল দেশীয় পুঁজিপতিদের হাতে৷ তাই তৎকালিন কোন নেতাই ভুলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা বলেন নি৷  আর স্বাধীনতার পর তো রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে অবাধে অর্থনৈতিক শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে দেশীয় পুঁজিপতিরা৷ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের হাতের পুতুল মাত্র৷ এই অবস্থায় কেন্দ্র রাজ্যের দ্বন্দ্বও সেই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করেই৷

এই দ্বন্দ্ব তখনই থামবে যখন রাজ্যগুলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে৷ কিন্তু ভারতে পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় তা কোনমতেই সম্ভব নয়৷

এসম্পর্কে প্রাউট প্রবক্তা তাঁর অর্থনৈতিক তত্ত্বে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশনা দিয়েছেন৷ সামাজিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর ভাষা কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে সমমর্যাদা দিয়ে রাজ্যগুলির সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে এক একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে ও স্থানীয় সরকারের হাতে তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ অর্থাৎ অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণও স্থানীয় সরকারের হাতে থাকবে৷ এইভাবে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কেন্দ্র রাজ্য সুষ্ঠু সমন্বয় গড়ে উঠবে৷ তখনই প্রকৃত সমৃদ্ধ ভারত গড়ে উঠবে৷ তার আগে নয়৷