১০০ দিনের কাজের দিনমজুর এখন ব্রোঞ্জজয়ী অ্যাথলিট

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

দিনমজুরী করে সংসার চালাতেন বাবা৷ সংসার টানতে কখনও ঘরে তৈরি ক্ষোয়া বিক্রি করতেত মা, আজ সেই বাবা-মায়ের সন্তান ব্রোঞ্জজয়ী অ্যাথলিট৷ সবই এখন অতীত৷ যে ছেলের জন্য তাঁর মা-বাবার এত খাটুনি তা আজ সার্থক হয়েছে৷ উত্তরপ্রদেশের সেই রামবাবুর এখন একটাই পরিচয় হয়েছে যে সে একজন অ্যাথলিট৷ বাণিজ্য সফল সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই যেন গতি বদলে গেছে তার জীবনের৷ হতদরিদ্র পরিবার থেকে একেবারে তারকার খ্যাতি লাভ করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না রামবাবুর৷

এই প্রথম ১০০টি পদকের গণ্ডি পার করেছে এ দেশের ক্রীড়াবিদরা৷ মোট ১০৭টি পদকের  মধ্যে ২৮টি সোনা সহ ৩৮টি রূপো ও ৪১টি ব্রোঞ্জ জিতেছেন তারা৷  এই প্রতিযোগিতায় ১৯তম পর্বে এটিই ভারতের সেরা প্রদর্শন৷ আর পদকজয়ীদের মধ্যে ঝলমল করছে রামবাবু৷ এশিয়ান গেমসে ৩৫ কিলোমিটার হাঁটায় মিক্সড টিম ইভেন্টে মঞ্জুরানির সঙ্গেল মিলে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি৷ তারপর থেকে সোনভদ্র জেলার অখ্যাত বেহুরা গ্রামের এই সন্তানকে নিয়ে হইচই পড়ে গেছে৷

এ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ণের পিছু নিতে তাঁকে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল৷ বছর ২৪শের রামবাবু জানান--- ‘‘বারাণসীতে ওয়েটারের কাজও তাকে করতে হয়েছিল৷’’ শুধুমাত্র ট্রেনিংএর জন্য ১৫০০ টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে তাকে থাকতে হয়ে৷ ভোর বেলায় ট্রেনিং ও সারাদিন দোকানে ওয়েটারের কাজ করতে হতো৷ ওয়েটারের কাজে তাকে অনেক অপমানিতও হতে হয়েছে৷ মাত্র তিনহাজার টাকার মাইনের কাজের জন্য সে এই কাজ করেছে৷ শুধুমাত্র নিজের স্বপ্ণের দিকে এক ধাপ এগোবার জন্যে৷

এরপর লক্‌ডাউনে ১০০ দিনের কাজের জন্য সে তাঁর বাবার সঙ্গে রাস্তার তৈরীর কাজেও যোগ দিয়েছে, দিনে ৩০০-৪০০ টাকা রোজগারের জন্য৷ ২০১৯ সালে স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই)-র ভোপাল শাখার এক কোচের কাছে তিনি প্রশিক্ষণ নেন৷ ২০২১ সালের জাতীয়  প্রতিযোগিতায় নিজের ইভেন্টে রূপো জিতে নেন রাম৷ এরপর কোচ বসন্ত রাণার সাহায্যে পুণের আর্মির স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে জায়গা পেয়ে যায় রাম৷ সেনাবাহিনীতে হাবিলদারের পদে এখন নিযুক্ত তিনি৷ পরের মাস পর্যন্ত সেনায় শিক্ষানবিশ থাকবে রাম৷ এখন ১০ হাজার টাকার বেতনও পাচ্ছেন৷ এরপর তিনি পুরো বেতন পাবেন৷ রাম জানায় --- একবার সেনাবাহিনীতে  সম্পূর্ণরূপে নিযুক্ত হয়ে গেলেই আমি বাবা মায়ের দায়িত্ব নিতে পারব৷ অটুট সঙ্কল্প নিয়ে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকাটাই হচ্ছে আসল৷ আর সেটাই করে দেখিয়েছে রাম বাবু৷