১৯শে মে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার শপথ গ্রহণের ডাক

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

‘আমরা বাঙালী’ কেন্দ্রীয় কমিটির সচিব শ্রীজ্যোতিবিকাশ সিন্হা এক প্রেসবার্তায় জানান ১৯শে মে ‘আমরা বাঙালী’ পূর্ব ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাঙালী অধ্যুষিত রাজ্যে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার শপথ গ্রহণ করবে৷ তিনি বলেন– ১৯শে মে এক রক্তাক্ত ইতিহাস৷ এই ইতিহাস কোন বাঙালীর পক্ষে ভুলে থাকা সম্ভব নয়৷ ১৯৬১ সালের ১৯শে মে অসমের শিলচরে বাংলা ভাষা আন্দোলনকারী সত্যাগ্রহীদের ওপর নির্মমভাবে গুলি বর্ষিত হয়েছিল৷ তৎকালীন অসমের মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চালিহার পুলিশ বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল বাঙালী আন্দোলনকারীরা৷ তাঁদের দাবী ছিল একটাই৷ অসমের বুকে বিশেষ করে কাছাড় জেলায় যেখানে ৯০ শত াংশ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা–সেই ভাষায় পঠন–পাঠন সরকারী কাজকর্ম সব হত, সেখানে তাঁদের মুখের ভাষা কেড়ে অহমীয়া চাপিয়ে দেওয়ার সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে– এই ছিল আন্দোলনকারীদের দাবী৷ শ্রী সিন্হা বলেন– সেদিন শিলচরে স্বাধীন দেশের সেনা ও পুলিশ বাঙালী জনগোষ্ঠীর ন্যায্য দাবী আদায়ের আন্দোলনকে  দমন করতে যে অত্যাচার চালিয়েছিল তা বিদেশী ব্রিটিশ শাসককেও ম্লান করে দিয়েছে৷

শ্রী সিন্হা বলেন–তৎকালীন অসমের অর্থমন্ত্রী ফকিরুদ্দিন আলি আমেদ ৬০ দশকের শুরু থেকে অত্যাচারের ছক কষতে থাকে৷ বাঙালী খেদাও অভিযানে তিনিও ছিলেন পরোক্ষ মদত দাতা৷ বাংলা ভাষার ওপর ক্রমাগত  আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘কাছাড় সংগ্রাম পরিষদ’ আন্দোলন সংঘটিত করেছিল৷ সত্যাগ্রহী আন্দোলনের প্রথম দিনে সমগ্র কাছাড় জেলা সেনাবাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল৷ ১৯৬১ সালের ১৯ শেমে (বাংলা ১৩৬৮ সালের ৫ই জ্যৈষ্ঠ) শিলচরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ হয়েছিল৷ রক্তে স্নাত হয়েছিল শিলচর ষ্টেশন চত্বর৷ ওই স্থানে ৯ জনের প্রাণ গিয়েছিল ও ৪৪ জন গুরুতর জখম হয়েছিলেন৷ পরে ২ জনের হাসপাতালে প্রাণ যায়৷ শহীদরা হলেন কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র পাল, চন্ডীচরণ সূত্রধর, সুনীল সরকার, সুকোমল পুরকায়স্থ, কানাইলাল নিয়োগী, সত্যেন্দ্র দেব, বীরেন্দ্র সূত্রধর, তরণী দেবনাথ, কুমুদরঞ্জন দাশ, হীতেশ বিশ্বাস৷ 

শ্রী সিনহা দুঃখ করে বলেন– এত অত্যাচারের পরেও স্বাধীন দেশের কেন্দ্র ও অসম রাজ্য সরকারের  বর্বরতা থেমে থাকেনি৷ তাই  অসমে বাঙালী ও  বাংলা ভাষার প্রতি আক্রমণ ১৯শেমে’র পরেও হয়েছে, আজও হচ্ছে৷ ১৯৮৬ সালের ২১শে জুলাই গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে করিমগঞ্জে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বাঙালী ছাত্র–যুবকরা৷ সেই বিক্ষোভ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় দু’জন, বেশ কয়েকজন আহত হয়৷

শ্রী সিন্হা উঃপূর্বাঞ্চলের  বাঙালী জনগোষ্ঠীকে আহ্বন জানিয়ে বলেন–অসমে আজও বিদ্রোহের যে আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছে তা বাংলা ভাষা সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে বাঙালীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে৷ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংঘটিত করার দিন এগিয়ে এসেছে৷ ১৯শে মে শহীদ স্মরণে শপথ নিতে হবে, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গেও বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ানোর আন্দোলনকে সংঘটিত করতে হবে৷