২৩শে জানুয়ারী সমগ্র বাঙালীস্তানে যথার্থ মর্যাদার সঙ্গে নেতাজী জয়ন্তী পালনের ডাক দিয়ে আমরা বাঙালী কেন্দ্রীয় কমিটির সাংঘটনিক সচিব শ্রী জয়ন্ত দাশ বলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্রের জন্মজয়ন্তী পালন সেদিনই সার্থক হবে যেদিন দেশে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে৷
পৌরুষের বজ্রকৌস্তুভ উল্কার অনল শিখা রাজনীতির জ্বলন্ত ধূমকেতু আপোষহীন সংগ্রামের মূর্ত্ত প্রতীক সন্ন্যাসী সৈনিক অজেয় বীর সুভাষচন্দ্র ছিলেন প্রকৃত মুক্তির উপাসক, আধ্যাত্মচেতনায় যিনি নিজেকে আত্মস্থ করতে পেরেছেন৷ যাঁর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় পূর্ণ মানবত্বের৷ বাঙালী তথা ভারতবাসীর সাবির্বক মুক্তিই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র স্বপ্ণ ও সাধনা, তপস্যা৷ একতা, বিশ্বাস ও বলিদান মন্ত্রের বহিঃ প্রকাশের মধ্য দিয়েই খুঁজে পেয়েছি তাঁর গভীর সংকল্পবোধ ও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস৷
শ্রী দাশ বলেন–বর্ত্তমান ভারত আজ সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে৷ রাজনৈতিক সম্প্রদায়ীকতা যেমন একদিকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তেমনি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি৷ কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অর্থনৈতিক বৈষম্যের পুরোপুরি সুযোগ নিয়ে শোষনের বেড়াজালে জনগোষ্ঠীকে আবদ্ধ করে রেখেছে৷ হিংসা, দ্বন্দ্ব, হানাহানি, বিচ্ছেদ আজ জগদ্দল পাথরের মতন মানুষের সমাজের ওপর চেপে বসেছে৷
সোণার বাঙলা যা একদিন শৌর্যে–বীর্যে, শিক্ষাক্ষেত্রে, অর্র্থনৈতিক সম্পদে, সাংস্কৃতিক গরিমায় সারা পৃথিবীর বিস্ময় ছিল, আজ তা পৌঁছে গেছে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে৷ দেশ আজ পঙ্কিলতার আবর্তে ডুবে গেছে৷ দুর্নীতি ও অবক্ষয়ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে নেতাজীর স্বপ্ণের ভারত৷ এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘প্রাউট’ দর্শন৷ যা কি না, ‘সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়’ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত৷ এই সামাজিক–অর্থনৈতিক দর্শন (প্রাউট)কে বাস্তবের মাটিতে রপ দিতে গেলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন কিছু সৎ, নীতিবাদী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ছেলেমেয়ে৷ যা ছিল নেতাজীর স্বপ্ণ৷
শ্রী জয়ন্ত দাশ বলেন–তাই ২৩শে জানুয়ারী নেতাজী সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনের পূণ্যলগ্ণে আবার ডাক দিয়েছে বাঙালী জনগোষ্ঠীর মূর্ত্ত প্রতীক আমরা বাঙালী অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে নামার৷
আজ দুর্জয় সংকল্পবোধের পরিচয় দিয়ে ভেদবিভেদের প্রাচীরকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ ভবিষ্যৎ ভারত তথা বিশ্বের উত্তরাধিকারী জাতীকে জাগাবার জন্যে আজ সংকল্পবদ্ধ৷ তাই আকাশ বাতাস বিদির্ণ করে শুয়ে বসে না থেকে আবার রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে– ‘মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, আকাশে তুলি, হিন্দু, মুসলমান বিভেদ ভুলি লক্ষ কণ্ঠে তুলি একটি আওয়াজ–বল এ মাটি আমার আমি বাঙলার–বাঙলা আমার’’৷
শ্রী দাশ জানান–বাঙলা–ভারত তথা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীর মহাপুরুষ নেতাজী সুভাষচন্দ্রের জন্ম–বাষির্কী ‘আমরা বাঙালী’ শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছে৷ তিনি বলেন ২৩শে জানুয়ারী পরাক্রম দিবস নয় দেশপ্রেম দিবস হিসাবে পালন করতে হবে৷ পরাক্রম শব্দটা মস্তান মস্তান লাগে৷ এটা পশ্চিমভারতীয় রাজনীতির অঙ্গ৷ সুভাষচন্দ্র কোন পরাক্রম দেখাতে রাজনীতি করেন নি৷ তিনি দেশের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন৷ তাই সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে দেশপ্রেম দিবস পালন করাই সুভাষচন্দ্রকে যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে৷