১৭০৪ সালে লেখা চিঠিতে নিউটন লিখেছিলেন যে, ২০৬০ সালে অর্থাৎ আজ থেকে মাত্র ৩৫ বছর পর পৃথিবী ধবংসস্তূপে পরিণত হতে পারে এক গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষে৷ তবে পরিস্থিতির নিরিখে সেই তারিখে হেরফেরও হতে পারে৷
নিউটন জানিয়েছিলেন, এর আগেও পৃথিবী ধবংসের সম্ভাবনা রয়েছে৷ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, ওয়াইআর৪ ২০২৪ গ্রহাণু যা ‘সিটি কিলার’ নামে অধিক পরিচিত, তার সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটে, সে ক্ষেত্রে পৃথিবীর আয়ু আরও তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে পারে৷ জ্যোর্তিবিদদের অধিকাংশের দাবি, ‘সিটি কিলার’-এর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা ১ থেকে ২ শতাংশ৷ ফলে তা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ আজ থেকে মাত্র সাত বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০৩২ সালে ‘সিটি কিলার’-এর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটতে পারে৷ শুধু পৃথিবী নয়, এই সংঘর্ষের ফলে পুড়তে পারে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদও৷ আইজ্যাকের লেখা চিঠিটি বর্তমানে জেরুসালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির সংগ্রহশালায় সুরক্ষিত রয়েছে৷ কিন্তু পৃথিবী কবে ধবংস হতে পারে তা কী ভাবে নির্ধারণ করেছিলেন তিনি?
নিউটন জানিয়েছিলেন, বাইবেলের ‘বুক অফ ড্যানিয়েল’-এ উল্লেখ করা তারিখ এবং সময় গণনা করে তিনি নির্দিষ্ট বছরটি নির্ধারণ করতে সফল হয়েছিলেন৷
নিউটনের মতে, রোমান সাম্রাজ্য পতনের ১২৬০ বছর পর পৃথিবী ধবংসের লীলাখেলায় মেতে উঠতে পারে৷ নিউটন যে সময় এই গণনা করেছিলেন, সেই সময় দাঁড়িয়ে এই সময়কে অনেক মনে হয়েছিল৷ তিনি ভেবেছিলেন যে, কয়েক বছরের মধ্যেই এ সব নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়ে যাবে৷ এই গণনা বাস্তবে ফলবে কি না তা জানা নেই৷ তবে বিজ্ঞানীদের অধিকাংশের দাবি, মহাকাশে যে ধরনের গ্রহাণু ঘুরে বেড়ায় তাদের বেশির ভাগের আকার বড় জোর একটি গাড়ির মতো৷ পৃথিবীর কাছে পৌঁছতে না পৌঁছতেই সেই গ্রহাণুগুলি পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ নাসার তরফে জানানো হয়েছে, ১০০ বছর পর পর মাঝারি আকারের গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়৷ বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে তাতে আগুন ধরে যায়৷ খুব কম অংশ জল অথবা স্থলভাগে এসে পড়ে৷ তীব্র গতিবেগে আসার ফলে সেখানকার এলাকায় গ্রহাণুর ওজনের কারণে গর্ত তৈরি হতে পারে৷ বিশালাকার গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম৷ এমনটাই দাবি করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা৷ তাঁদের দাবি, পাঁচ থেকে দশ লক্ষ বছরে এক বার এমন ঘটনা ঘটতে পারে৷
হ্যালিফ্যাক্সের ইউনিভার্সিটি কিংস কলেজের অধ্যাপক স্টিফেন ডি স্নোবেলেনের মতে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বিজ্ঞানী নন, নিউটন ছিলেন ‘প্রাকৃতিক দার্শনিক’৷
অধ্যাপকের দাবি, আইজ্যাক ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মধ্যে কোনও বাধা দেখতে পাননি এবং তিনি সারা জীবন ঈশ্বরের সত্য আবিষ্কারের জন্য পরিশ্রম করেছিলেন৷ বাইবেল এবং সহজ পাটিগণিতের ব্যবহার করেই নাকি গণনা করেছিলেন তিনি৷
তবে নিজের গণনার প্রতি প্রশ্ণও তুলতে পিছপা হননি আইজ্যাক৷ তাড়াহুড়ো করে ভবিষ্যদ্বাণী করা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন তিনি৷ চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘সঠিক সময় কেবল ঈশ্বর জানেন৷’’