২০১৮ সালের গোল্ড কোস্ট গেমসে শ্যুটিং থেকে ১৬টি পদক জিতেছিল ভারত৷ এ বার শ্যুটিং ছিল না৷ তাও মোট পদক প্রাপ্তির সংখ্যা প্রায় ধরে রাখল ভারত৷ শেষ হল বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমস৷ পদক তালিকায় চতুর্থ৷ ২০১৮-র গোল্ড কোস্ট গেমসে পদক তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল ভারত৷ ক্রীড়াবিশ্বে কৌলিন্যের বিচারে কমনওয়েলথ গেমসের স্থান অলিম্পিক্স এবং এশিয়ান গেমসের পর৷ আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানির মতো ক্রীড়াবিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলি কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেয় না৷ বিশ্বের প্রথম সারির অনেক ক্রীড়াবিদও অংশগ্রহন করেন না৷ তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ কমনওয়েলথ গেমসে৷ তবু চার বছর অন্তর কমনওয়েলথ গোষ্ঠীর দেশগুলিকে নিয়ে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে৷ বার্মিংহামে পদক সংখ্যার বিচারে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যাণ্ড বাকি সব দেশেরর ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷ ৬৭ টি সোনা,৫৭টি রুপো ও ৫৪টি ব্রোঞ্জ সহ মোট ১৭৮ টি পদক জিতে তালিকার শীর্ষে অষ্ট্রেলিয়া৷ ৫৭টি সোনা,৬৬টি রুপো, ৫৩ টি ব্রোঞ্জ সহ মোট ১৭৬টি পদক নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যাণ্ড৷ তালিকায় তৃতীয় স্থানে শেষ করা কানাডার সংগ্রহ ২৬টি সোনা, ৩২টি রুপো, ৩৪টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৯২টি পদক৷ ভারতের স্থান পদক তালিকায় চতুর্থ৷ ২২টি সোনা, ১৬টি রুপো, ও ২৩টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৬১টি পদক জিতেছেন ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা৷ তালিকার পঞ্চম স্থানে শেষ করা নিউজিল্যাণ্ডের সংগ্রহ ২০টি সোনা, ১২টি রুপো ১৭টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৪৯টি পদক৷ বার্মিংহাম গেমসে শ্যুটিং তিরন্দাজির ইভেন্ট থাকলে পদকতালিকায় আরও উপরে শেষ করার সুযোগ থাকত ভারতের সামনে৷ কমনওয়েলথ দেশগুলির মধ্যে এই দুই খেলতেই ভারত অন্যতম শক্তিশালী৷ বিশেষ করে শ্যুটিং৷ ২০১৮ সালের গোল্ড কোস্ট গেমসে শ্যুটিংয়ে ১৬টি পদক জিতেছিল ভারত৷ তার মধ্যে ছিল ৭টি সোনা, চারটি রুপো ও পাঁচটি ব্রোঞ্জ৷ চোটের জন্য বার্মিংহামে যেতে পারেননি জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়াও৷ গোল্ড কোস্ট গেমসে ভারতের মোট পদক ছিল ২৬টি সোনা, ২০টি রুপো ও ২০টি ব্রোঞ্জ সহ মোট ৬৬টি৷ সেই হিসাবে অন্য খেলাগুলি থেকে এসেছিল ৫০টি পদক৷ এ বার এসেছে ৬১টি পদক৷ তিরন্দাজি অবশ্য গোল্ড কোস্টেও ছিল না৷ এ বারের ৬১টি পদকের মধ্যে লন বোল থেকে একটি সোনা ও রুপো, জুডোয় দুটি ও একটি ব্রোঞ্জ, হকিতে একটি করে রুপো ও ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে৷ রুপো এসেছে প্রথম বার হওয়া মহিলাদের ক্রিকেট থেকে৷ আগের গেমসে এই খেলাগুলিতে কোন পদক ছিল ভারতের৷ লন বোলে যে ভারত অংশ নেয়, সেটাই অনেকে জানতেন না৷ মহিলাদের দল সোনা জেতার পর নিয়মকানুন জানুন শুরু করেছেন অনেকেই৷ রাতারাতি এই খেলার সমর্থকের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে৷
এছাড়া অ্যাথলেটিক্স ৫টি পদক বেড়েছে৷ এই বিভাগটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, এর আগে অ্যাথলেটিক্সের কোনও বিভাগেই ভারত ভাল ফল করতে পারত না৷ এ বার ট্রিপল জাম্পের মতো ইভেন্টে সোনা, রুপো দুটোই জিতেছে ভারত৷ লং জাম্প পদক জিতেছেন মুরলী শ্রীশঙ্কর৷ রেস ওয়াকে দু’টি পদক এসেছে৷ স্টিপলচেজে ১৯৯৮ সাল থেকে প্রথম তিনটি স্থান দখল করে এসেছে কেনিয়া৷ এ বার ভারতের অবিনাশ সাবলে সেই একাধিপত্যে থাবা বসিয়েছেন৷ রুপো পেয়েছেন তিনি৷
এটা মাথায় রেখেও বলা দরকার, অ্যাথলেটিক্স জামাইকা ও আফ্রিকার মতো দেশগুলি অংশগ্রহণ করলেও, তাঁরা দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের এই প্রতিযোগিতায় পাঠায় না৷ এখানে বরং দেখে নেওয়া হয় নতুন প্রতিযোগীদের, যাঁরা আগামী দিনে তারকা হয়ে উঠতে পারেন৷ আসল ক্রীড়াবিদদের রেখে দেওয়া হয় অলিম্পিক্স, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানশিপ বা ডায়মণ্ড লিগগুলির জন্যে, যেগুলির গুরুত্বের বিচারে দেওয়া হয় অলিম্পিক্স, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বা ডায়মণ্ড লিগগুলির জন্যে, যেগুলি গুরুত্বের বিচারে অনেক এগিয়ে৷ ভারত থেকে সেখানে প্রথম সারির ক্রীড়াবিদরাই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন৷ ফলে আরও বেশি কঠিন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে গেলে নিজেদের মান অনেক বাড়াতে হবে৷
প্রতি বছরই খেলার বিভিন্ন ইভেন্টে পারফরম্যান্সের উন্নতি হচ্ছে৷ তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড৷ সেই নিরিখে বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয়দের পারফরম্যান্সকে গোল্ড কোস্ট্রের থেকে ভালই বলা যেতে পারে৷ শ্যুটিং বাদ দিয়ে অন্য খেলাগুলি থেকে আগের বারের তুলনায় ১১টি পদক বেশি এসেছে৷ পদক এসেছে চারটি নতুন খেলায়৷ কৃতিত্ব অবশ্যই ক্রীড়াবিদদের৷ তাঁদের প্রস্তুতি,পরিশ্রম, পদক জয়ের জেদই ক্রীড়াবিশ্বে ভারতকে কিছুটা হলে এগিয়ে দিল৷