গত ৩১শে জুলাই কান্দীর আনন্দমার্গ প্রাইমারী স্কুলের উদ্যোগে সকাল দশটায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷ আলোচনার বিষয় ছিল ‘আদর্শ সমাজ ঘটনে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর বহুমুখী অবদান’৷ অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল অতিথি বরণ৷ এই অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন কান্দীর বিশিষ্ট প্রবীন মার্গী সাহিত্যসেবী শ্রী সাক্ষীগোপাল দেব৷ প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন নোতুন পৃথিবী পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷ বিশেষ অতিথি ও সম্মানিত অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন যথাক্রমে মুর্শিদাবাদ জেলার আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের জেনারাল ভুক্তি প্রধান শ্রীংশুমান ঘোষ ও কান্দী আনন্দমার্গ স্কুলের অধ্যক্ষ আচার্য বাণীব্রত ব্রহ্মচারী৷ অতিথিদের পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়৷ এরপরে পরমারাধ্য গুরুদেব ও মহান দার্শনিক শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন সভাপতি শ্রী সাক্ষীগোপাল দেব৷ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করেন৷ প্রধান অতিথি আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷ প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রীমতী অমৃত অধিকারী রায়৷
স্বাগত ভাষণ দেন শ্রী অংশুমান ঘোষ তিনি তার বক্তব্যে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীকে যুগপুরুষ ও বিংশ শতাব্দীর বিষ্ময় বলে উল্লেখ করেন৷ এরপর বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি প্রবীন আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷ প্রথমে তিনি মানবজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন--- মানবজীবনের লক্ষ্য হল আত্মমোক্ষার্থং জগদ্বিতায়চ৷’ শুধু নিজের মুক্তি মোক্ষ নয়, সাতে সাথে জগতের কল্যাণ ও করতে হবে৷ তিনি তার বক্তব্যে বলেন আনন্দমার্গ এক সর্র্বত্মক জীবনাদর্শ৷ আনন্দমার্গ আসারআগে পৃথিবীতে আংশিক তত্ত্ব এলেও সর্বাত্মক বা পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ আসেনি৷ তিনি বলেন বর্তমান সমাজ দুর্নীতির পাঁকে আকন্ঠ ডুবে আছে৷ তাই সর্বপ্রকার শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত আদর্শ মানব সমাজ ঘটন কল্পলোকের কথকথা হয়েই রয়ে গেছে তা বাস্তবে রূপ পরিগ্রহ করেনি৷ সমাজ দেহের প্রতিটি অঙ্গ যথা---ধর্ম, শিক্ষা, সাহিত্য,সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি সমাজনীতি ইত্যাদি আজ ক্ষয়রোগ গ্রস্ত হয়ে পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারিদিকে৷ পুঁজিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট দিশাহারা মানুষ আজ ভোগসর্বস্ব জীবনচর্যার করালগ্রাসে গ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷ হিংসা, অসূয়া, পাশবিকতা, স্বার্থপরতা ও লোভ লালসার অক্টোপাশে পিষ্ট হচ্ছে মানুষের মানবিকতা নৈতিকতা,দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, বিবেকহীন মানুষ ভুলে গেছে মানুষের স্বরূপ কেন তার পৃথিবীতে আগমন? চারিদিকে যখন হতাশা ও নৈরাজ্যের অন্ধকার এমতাবস্থায় আলোর পথের নিশানা দেখালেন বিংশ শতাব্দীর যুগত্রাতা ও মহান দার্শনিক শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী শুধুই তিনি এই সর্বব্যাপী অবক্ষয় থেকে উত্তরণের জন্য মানুষকে শোণালেন মানবতার পাঞ্চজন্য, মানুষকে উপহার দিলেন আনন্দমার্গ পানে যুগান্তকারী এক সর্বাত্মক জীবনাদর্শ৷ তিনি বলেন মানবজীবন ত্রিস্তরীয় সর্বাত্মক জীবনাদর্শ তাকেই বলে যার মধ্যে শারীরিক,মানসিক ও আত্মিক ত্রিস্তরীয় বিকাশের মাধ্যমে মানুষকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সমস্ত উপকরণ মজুত আছে জগতের সার্বিক সমস্যার সমাধানের পথ দিয়েছেন--- একাধারে ধর্মগুরু ও সমাজগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আদর্শ সমাজ ঘটনে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সর্বাত্মক জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক ঙও বহুমুখী অবদান প্রসঙ্গে প্রসূনানন্দজী বলেন শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মানুষের আর্থিক উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যেমন দিয়েছেন আধ্যাত্মিক দর্শন৷ ঠিক তেমনি মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি র উদ্দেশ্যে দিয়েছেন যুগান্তকারী সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউট৷ প্রাউট হল মানুষের আর্থিক মুক্তির তথা মানবমুক্তির দিশারী৷ শুধু তাই নয় নানান বিষয়ে ২০০টির ও ওপর গ্রন্থ রচনা করেছেন৷ প্রচণ্ড কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আটবছরে ৫০১৮ প্রভাত সঙ্গীত রচনা ও সুর সংযোজনা করেন যা সাংস্কৃতিক জগতের অন্ধকার দৃঢ় নোতুন প্রভাতের আগমন বার্র্ত ঘোষণা করছে৷
আনন্দমার্গের সেবা ও কল্যাণের আদর্শ বিশ্বের ১৮২টির বেশী দেশে পৌঁছে গেছে৷ হাজার হাজার ত্যাগব্রতী সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসীনি ও লক্ষ লক্ষ গৃহী ভক্তদের মাধ্যমে আনন্দমার্গের সেবা ও কল্যাণের আদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে, সারা পৃথিবী জুড়ে নব্যমানবতাবাদী ও অধ্যাত্মভিত্তিক এক অখণ্ড মানব সমাজ গড়ার লক্ষ্যে৷ সর্বাত্মক জীবনাদর্শের বিভিন্ন দিক স্বচ্ছতার বহু অবদান ও বিশ্বব্যাপী আনন্দমার্গের সেবাকার্য্যের ব্যাখ্যা করেন৷ পরিশেষে তিনি আদর্শ নোতুন পৃথিবী গড়ার কাজে ব্রতী আনন্দমার্গের সঙ্গে সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান৷ সবশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি শ্রী সাক্ষীগোপাল দেব মহাশয় তার সমাপ্তি ভাষণে বলেন আধ্যাত্মিক মূল্যবোধভিত্তিক জীবনধারাই পারে আজকের অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের সমাজকে আলোর রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে৷