গত ২৪শে জানুয়ারী শিলিগুড়ি আনন্দমার্গ আশ্রমে ভাবগম্ভীর পরিবেশে আনন্দমার্গের সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী আচার্য অজিতানন্দ অবধূতের প্রয়ান দিবস পালিত হয়৷ মার্গের অনুগামীগণ প্রথমে প্রভাত সঙ্গীত, কীর্ত্তন, সমবেত সাধনা ও গুরুপূজা করেন ও পরে অজিতানন্দজীর স্মৃতিচারণ করেন প্রবীন মার্গী ভাইবোনেরা৷ শিলিগুড়ি আনন্দমার্গ শিশুসদন পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন আচার্য অজিতানন্দ অবধূত৷ স্থানীয় সহানুভূতিশীল মানুষের সাহায্যে তিনি শিশুসদন সুন্দরভাবে চালানোর সঙ্গে সঙ্গে আনন্দমার্গ ভাগবত ধর্মের প্রচার ও সেবামূলক কাজ করছিলেন৷ তার কর্মনিষ্ঠা ও তৎপরতার ফলে আনন্দমার্গের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল যা তৎকালীন সিপি.এম পরিচালিত সরকারের চক্ষুশূলের কারণ হয়৷ জড়বাদী ও মানবতা বিরোধী ফ্যাসিস্ট কম্যুনিষ্টদের সঙ্গে আনন্দমার্গের আদর্শগত লড়াই দীর্ঘবছরের৷ ঈশ্বরে অবিশ্বাসী নাস্তিক কম্যুনিষ্টদের পিতৃভূমি ও মাতৃভূমি তৎকালীন সোভিয়েত ইয়ূনিয়ন ও লাল চীনের স্বৈরাচারী শাসনের মডেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় তাদের শাসনকালে বিরোধীদের ওপর নারকীয় অত্যাচার সর্বজনবিদিত৷
আধ্যাত্মিকতার ওপর আধারিত আনন্দমার্গের সর্বাত্মক জীবনাদর্শ পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ও প্রবীনদের আকর্ষণ করে৷ তারা অনুপ্রাণিত হয় আনন্দমার্গের যোগসাধনা শিখে আধ্যাত্মিক জীবনচর্যার অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার সাথে আর্ত ও নিপীড়িত মানুষদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে৷ আশির দশকে ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আনন্দমার্গের শত শত সর্বত্যাগী তরুণ সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনী ভাগবত ধর্মের ব্যাপক প্রচার করে৷ তারা ব্লকে ব্লকে স্কুল, শিশুসদন দাতব্য চিকিৎসালয় খুলে জনসেবার ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করে যা তৎকালীন রক্তখেগো কম্যুনিষ্টদের শিরপীড়ার কারণ হয়৷ তারা আনন্দমার্গের ক্রমশ বাড়তে থাকা ব্যাপক জনপ্রিয়তায় ভীত হয়৷ কম্যুনিষ্টরা আনন্দমার্গের সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শন ‘প্রাউটকে’ কোনভাবেই ভুল আদর্শ প্রতিপন্ন করতে না পেরে আনন্দমার্গ সংঘটনকে ধবংস করার জন্য শুরু করে মিথ্যা অপবাদ, ষড়যন্ত্র ও অত্যাচার৷ ১৯৬৭ সালে পুরুলিয়ায় আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রম আনন্দনগরে ৫জন সন্ন্যাসীকে হত্যা করে৷ ১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল কলকাতার প্রকাশ্য দিবালোকে ১৭জন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীকে নারকীয়ভাবে হত্যা করে৷
আনন্দমার্গের আদর্শ ও সেবাকার্যে অনুপ্রাণিত হয়ে শিলিগুড়িতে বহু মানুষ যোগসাধনা শেখে ও আনন্দমার্গের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তারা একাত্ম হতে শুরু করে যা মোটেই ভালচোখে দেখেনি সেই সময়ের শিলিগুড়ির কম্যুনিষ্ট প্রশাসন৷ তারা ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আচার্য অজিতানন্দ অবধূতকে গ্রেপ্তার করে ও থানায় অমানুষিক অত্যাচার করে৷ এই দীর্ঘ দেহি সুঠাম ও সুদর্শন তরুণ সন্ন্যাসীকে হত্যা করে৷ কিন্তু আনন্দমার্গের ওপর অত্যাচার করে সন্ন্যাসী হত্যা করে আনন্দমার্গকে দমানো বা আটকানো যায় না যাবেও না৷ আনন্দমার্গের প্রবক্তা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ভাষায় ‘‘মেঘ সূর্যকে বেশীক্ষণ ঢেকে রাখতে পারে না৷ অন্ধকারের জীবেরা চায় না মানুষের সামূহিক অভ্যুত্থান হোক, তবু মানুষ এগিয়ে যাবে৷ কেউ তার গতিরোধ করতে পারবে না৷
অন্ধকার যতই ঘন হোক না কেন, তারপর প্রভাত আসবেই আসবে৷ অন্ধকারের পিশাচ যতই অট্টহাসি হাসুক না কেন সূর্র্যেদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার সব কিছু শূন্যে মিলিয়ে যাবেই যাবে৷’’ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী বাণীর কথাই বাস্তবায়িত হয়েছে৷ মানবতার শত্রু কমিউনিষ্টরা শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা থেকেই নয় সারা বিশ্ব থেকেই উৎখাত হয়েছে৷ মার্ক্সের অপাংক্তেয় অকাল মৃত কমিউনিজমের স্থান হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে৷ অপরদিকে আনন্দমার্গ বিশ্বের ১৮২টির ও বেশী দেশে তার সেবাকার্য ও সর্বাত্মক আদর্শের জন্য সমাদৃত৷