আনন্দমার্গের পুরোধা প্রমুখ আচার্য কিংশুক রঞ্জন সরকার গত ১লা এপ্রিল থেকে পাঁচদিন উত্তর বিহার সফর করেন ও এই এলাকার আনন্দমার্গের বিভিন্ন আশ্রম ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন৷ তিনি সর্বত্র আনন্দমার্গী ও ভক্ত সমাবেশে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মহান আদর্শকে সবার সামনে তুলে ধরে বলেনঃ সকল মানুষের ধর্ম এক, প্রকৃত ধর্ম মানুষে মানুষে বিভেদ আনে না৷ ইষ্টের প্রতি, আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা রেখে মানুষের চলা উচিত৷ সনিষ্ঠ সাধনা ও সেবাই মানুষের ব্যষ্টিগত ও সমষ্টিগত জীবনে শান্তি আনতে পারে৷
১লা এপ্রিল সন্ধ্যায় শ্রদ্ধেয় পুরোধা প্রমুখ কলকাতা থেকে রবানা হন৷ তাঁর সঙ্গে এই সফরে ছিলেন আনন্দমার্গের জেনারেল সেক্রেটারী ও আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ও আনন্দমার্গের মহিলা বিভাগের অনেক সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী৷ ২রা এপ্রিল পুরোধা প্রমুখ দাদা পটনা রাজেন্দ্রনগর টার্মিন্যালে পৌঁছলে পটনা ভুক্তির আনন্দমার্গীরা তাঁকে পুষ্পমাল্য দিয়ে বিপুল সংবর্ধনা জানান৷ ‘আনন্দমার্গ অমর হ্যায়’, ‘মানব মানব এক হ্যায়’,
‘মানবকা ধর্ম এক হ্যায়’ ‘বিশ্ববন্ধুত্ব কায়েম হো’ প্রভৃতি শ্লোগানে গোটা ষ্টেশন এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে৷
এরপর পটনার বিশিষ্ট আনন্দমার্গীরা শ্রদ্ধেয় পুরোধা প্রমুখ ও আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রমের দাদা-দিদিদের নিয়ে মিছিল করে হাজিপুর অভিমুখে রবানা হন৷ প্রথমে সবাই গুরুকুল বিদ্যাপীঠে পৌঁছান৷ গুরুকুলের শিক্ষক, কর্মী ও ছাত্রছাত্রারা তাঁকে বিপুল অভ্যর্থনা জানান৷ এখানে তিনি সবাইকে নিয়মিত সাধনা করতে ও জনসেবা করতে উদ্বুদ্ধ করেন৷ এখান থেকে তাঁরা আসেন হাজিপুরে আনন্দমার্গের জাগৃতিতে (আশ্রম)৷ এখানে বৈশালী ভুক্তির আনন্দমার্গীরা শ্রদ্ধেয় পুরোধা প্রমুখ দাদাকে বিপুল অভ্যর্থনা জানান৷ এখানে প্রথমে কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনা হয়৷ পুরোধা প্রমুখ দাদা সাধনার ওপরে মনোগ্রাহী বক্তব্য রাখেন৷ এরপর তিনি এখানে প্রবীণ আনন্দমার্গীদের সঙ্গে সংস্থার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একান্তভাবে আলোচনা করেন৷ সবাই পুরোধা প্রমুখ দাদার সঙ্গে কথাবার্তা বলে উৎসাহিত হন৷
এখান থেকে পুরোধা প্রমুখ দাদা সিয়ানে ডাঃ বিদ্যানন্দজীর বাসভবনে যান৷ এখানে সিয়ানের কয়েকশত আনন্দমার্গী তাঁকে অভ্যর্থনা জানান৷ এখানে বিহারের বিশিষ্ট প্রবীণ আনন্দমার্গীরা ছিলেন৷ তাঁরা বলেন, আজকের দুনিয়া আনন্দমার্গের মহান আদর্শের দিকে সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্যে তাকিয়ে আছে৷ এখানে মিলিত কীর্ত্তন ও সাধনার পর তিনি ‘ইষ্টনিষ্ঠা ও আদর্শনিষ্ঠা’র ওপর মনোজ্ঞ বক্তব্য রাখেন৷ এরপর বাবার ভিডিও-ও দেখানো হয়৷
পরদিন সকালে এখান থেকে যান গোপালগঞ্জে৷ এখানে আগে থেকে অখণ্ড কীর্ত্তন চলছিল৷ তিনি সবাইকে নিষ্ঠার সঙ্গে ধর্মেরপথ চলার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেন৷ সেখান থেকে পুরোধা প্রমুখ দাদা যান বেতিয়ায়৷ পথে বিভিন্ন আনন্দমার্গী -গ্রামে তাদের গাড়ী আটকিয়ে মার্গীরা তাঁদের অভ্যর্থনা জানান৷ এরপর তাঁরা বেতিয়া জাগৃতিতে পৌঁছান৷ এখানেও যথারীতি তাঁকে সবাই অভ্যর্থনা জানান৷ তিনিও ধর্মের পথে চলতে সবাইকে উৎসাহিত করেন৷ পরদিন সবাই মোতিহারিতে পৌঁছান৷ এখানে পুরাতন ও নতুন মার্গীরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে প্রস্তুত ছিলেন৷ এখানে বাবা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ১৯৬৬ সালে ধর্মমহাচক্র করেছিলেন৷ প্রবীণ মার্গীরা তার স্মৃতিচারণ করেন৷
বলা বাহুল্য সর্বত্রই মার্গী সম্মেলনে পুরোধা প্রমুখ দাদার প্রবচনের পর বাবার ভিডিও দেখানো হয়৷
এখান থেকে সবাই মতিহারিতে আনন্দমার্গের জাগৃতিতে এসে পৌঁছান৷ এখানে অখণ্ড কীর্ত্তন চলছিল৷ সবাই এখানে পৌছে অখণ্ড কীর্ত্তনে যোগ দেন ও মিলিত সাধনা করেন৷ তারপর যথারীতি পুরোধা প্রমুখ দাদা প্রবচন হয়৷
এখানে আনন্দমার্গীরা সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যবস্থা করেছিলেন৷ পুরোধা প্রমুখ দাদার সমস্ত কর্মসূচী বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ দূরদর্শন থেকেও সম্প্রচারিত করা হয়৷
এখান থেকে পুরোধা প্রমুখ দাদা মাঝোলিয়াতে দিদিদের (আনন্দমার্গের মহিলা বিভাগের) আশ্রমে যান৷ এখানে দুই শতাধিক আনন্দমার্গী তাঁকে অভ্যর্থনা জানান৷ পুরোধা প্রমুখ দাদার বক্তব্যে সবাই উৎসাহিত হন৷
এখান থেকে পুরোধা প্রমুখ দাদা পটনায় ফিরে যান ও এখানে বাবা কোয়ার্টার---‘মধুমগধি’তে যান৷ এখানে তখন অখণ্ড কীর্ত্তন চলছিলা৷ কীর্ত্তনের পর দাদাজী কীর্ত্তন মাহাত্ম্যের ওপর ভক্তিভাবাপ্লুত প্রবচন দেন৷
পুরোধা প্রমুখ দাদার সফর সঙ্গী হিসাবে অবধূতিকা আনন্দ অভীষা দিদি ও অন্যান্য সন্ন্যাসিনী দিদিরাও ছিলেন৷ তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় কীর্ত্তন ও প্রভাত সঙ্গীত পরিবেশন করে সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করেন৷
সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়