আনন্দনগর সংবাদ

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

২৪ ঘণ্টা অখণ্ড কীর্তন

গত ২রা ও ৩রা ফেব্রুয়ারী আনন্দনগরের বকুলবিতান আনন্দমার্গ স্কুল প্রাঙ্গণে ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী বাবা নাম কেবলম্ মহামন্ত্রের অখণ্ড নাম সংকীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ এদিন কীর্ত্তনান্তে শ্রী গদাধর গড়াঞঁ-এর নাতনী ও বিমল গড়াঞঁ-এর কন্যার নামকরণ ও অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানও আনন্দমার্গীয় সমাজশাস্ত্রানুসারে অনুষ্ঠিত হয়৷ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন অবধূতিকা আনন্দ অনুময়া আচার্যা৷ শিশুর নাম রাখা হয় জয়তী৷ এরপর আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত ও আচার্য শিবপ্রেমানন্দ অবধূত আনন্দমার্গের সাধনামার্গ ও কীর্ত্তনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন৷

নীলকণ্ঠ দিবস উৎযাপন

১২ই ফেব্রুয়ারী বেলামু পাহাড়ের নিকটে মার্গগুরুভবন মধুমূচ্ছর্নায় অখণ্ড কীর্ত্তনের অনুষ্ঠান হয়৷ এই অখণ্ড কীর্ত্তনে আনন্দনগরের বিভিন্ন গ্রামের আনন্দমার্গীরা যোগদান করেন৷ কীর্ত্তন শেষে মার্গগুরুদেবের প্রবচন পাঠ করে শোনান আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত৷ তারপর মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী আদর্শ ও নীলকণ্ঠ দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত ও আচার্য পূর্ণজ্ঞানানন্দ অবধূত৷

আনন্দমার্গীয় প্রথায় নামকরণ ও অন্নপ্রাশন

এই অনুষ্ঠানের পর চিতমু নিবাসী গোপাল চন্দ্র গোপের মেয়ের নামকরণ ও অন্নপ্রাশন আনন্দমার্গীয় বিধিতে অনুষ্ঠিত হয়৷ এই অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন উমানিবাসের অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা শিশুকন্যার নাম রাখা হয় তনুশ্রী৷

১ম ডায়োসিস পর্যায়ের সেমিনার

1st Diocese seminar ১৭, ১৮, ১৯ ফেব্রুয়ারী পাওয়ারহাউসে আনন্দনগর ১ম ডায়োসিস পর্যায়ের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ এই সেমিনারে মার্গগুরুদেবের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শনের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন আচার্য মোহনানন্দ অবধূত৷ তিনি বলেন---আনন্দমার্গের আদর্শের মূল কথা হল প্রতিটি মানুষকে অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-বাসস্থান ও চিকিৎসার গ্যারাণ্টি দেওয়া ও তার পরে প্রতিটি মানুষের মানসিক তথা আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটিয়ে মানব জীবনকে সার্থক করে তোলা৷

মার্গীয় বিধিতে শ্রদ্ধানুষ্ঠান

১৭ই ফেব্রুয়ারী বারুডি গ্রামে বিশিষ্ট আনন্দমার্গী পাঠক মাহাতর প্রয়াতা মাতৃদেবী নুনীবালা মাহাতর আনন্দমার্গীয় বিধিতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়৷ এই অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা৷ তারপর আনন্দমার্গের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করেন আচার্য শিবপ্রেমানন্দ অবধূত ও আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত৷

আনন্দনগরে গত ৫ই মার্চ দধীচি দিবস পালন করা হয়. ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ আনন্দনগর যখন তৈরী হচ্ছিল সেই সময় সিপিএম ও সিপিআইয়ের দ্বারা নিয়োজিত বিশাল জল্লাদ বাহিনী আনন্দনগরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে .তাদের হিংস্র আক্রমণে প্রাণ দেন অমর দধীচি আচার্য অভেদানন্দ অবধূত, আচার্য সচ্চিদানন্দ অবধূত, অবোধ কুমার প্রভাস কুমার ও ভরত কুমার৷ আনন্দনগরের দধীচি হিলের---যেখানে এই পাঁচজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে প্রতি বছরের মত এবছরেও কীর্ত্তন করতে করতে আনন্দনগরের সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীরা, আনন্দমার্গী ভাইবোনেরা, ছাত্র ও শিক্ষকগণ এখানে উপস্থিত হন ৷কীর্ত্তন শেষে মিলিত সাধনা, গুরুপূজা ও স্বাধ্যায়ের পর দধীচিদের স্মৃতিচারণ করা হয় ৷প্রথমে কলকাতা থেকে আগত আচার্য সুতীর্থানন্দ অবধূত স্মৃতিচারণ করেন এরপর আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত আমরা দধীচি বাহিনী---এই স্বরচিত কবিতাটি আবৃত্তি করেন ৷এরপর আচার্য মোহনানন্দ অবধূত এই দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন তিনি পরমপিতার মহান আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে সবাইকে নতুন করে শপথ নিতে আহ্বান জানান ৷বলা বাহুল্য, এই দিনটি সমগ্র আনন্দমার্গীরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্জলা উপবাস করেন৷ 
৮ই মার্চ ঃ আনন্দনগরের চামচাকা ও মেটালায় আনন্দমার্গ সুকলের ছাত্রছাত্রারা মিলিভাবে মেটালাতে বার্ষিক সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান করে সুকলের কচিকাঁচারা বাংলা ছড়া, ইংরেজী রাইমস্, আবৃত্তি, সাংসৃকতিক শ্লোক, প্রভাতসঙ্গীত, প্রভাতসঙ্গীত অবলম্বনে নৃত্য প্রভৃতি পরিবেশন করে দর্শকদের আনন্দ দেয় ৷এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক তপন চক্রবর্তী মহাশয় ৷ উমানিবাসের রেক্টর অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা ও ডিট এস আচার্য দেবপ্রেমানন্দ অবধূতও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন৷ অধ্যাপক তপন চক্রবর্তী বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আনন্দমার্গের শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা করেন তিনি বলেন আনন্দমার্গের শিক্ষা ব্যবস্থা যথার্থ মানুষ গড়ার শিক্ষা দেয়৷ সভাপতি ছাত্রছাত্রাদের এই অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ মেটালা আনন্দমার্গ সুকলের প্রিন্সিপাল আচার্য শিবপ্রেমানন্দ অবধূত ও আচার্য সত্যসাধনানন্দ অবধূতের মিলিত প্রয়াসের অনুষ্ঠানটি সাফল্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে ৷
১২ই মার্চ ঃ বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে দধীচি হোস্টেলে তিন ঘণ্টা ব্যাপী অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ মিলিত সাধনার পর স্বাধ্যায় করেন আচার্য দেবপ্রেমানন্দ অবধূত৷ এরপর বসন্ত উৎসব সম্বন্ধে বক্তব্য রাখেন আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত৷ এরপর বাবার প্রতিকৃতিতে সবাই আবীর দেন পরে সকলে আবীর খেলা খেলেন ৷হোষ্টেল সুপারিনটেণ্ডেণ্ট সবাইকে মালপোয়া খাওয়ান৷ 
১২ই মার্চ ঃ ভদুয়াডিহি গ্রামের জলধর মাহাতর বাড়ীতে ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী অখণ্ড কীর্ত্তনের আয়োজন করা হয়৷ বোকারো থেকেও মার্গী ভাইবোনেরা এই কীর্ত্তনে যোগ দেন কীর্ত্তন শেষে স্বাধ্যায় করেন আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত৷ শ্রী মনোতোষ মণ্ডল বসন্ত উৎসবের ওপর বক্তব্য রাখেন ৷
২৬শে মার্চ ঃ ঝালদা আনন্দমার্গ স্কুলের সুকল ভবনের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান হয় ২৬শে মার্চ এই অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত৷ আচার্য মোহনানন্দ অবধূত মার্গের আদর্শের ওপরে আলোচনা করেন৷ তিনি এই স্কুল ভবন নির্মাণে আচার্য অনুপমানন্দ অবধূতের কর্মনিষ্ঠার ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ ভক্ত মার্গী শ্রী প্রহ্লাদ মাহাত ও শ্রী রতন মাহাত৷ প্রভাতসঙ্গীতে গৃহপ্রবেশের গানটি পরিবেশন করেছিলেন আচার্য প্রজ্ঞাধীশানন্দ অবধূত৷ 
২রা এপ্রিল ঃ গড়জয়পুর ব্লকের ছটকা গ্রামে ১৯৯০ সালে সিপিএমের হার্মাদরা আনন্দমার্গের প্রবীণ সন্ন্যাসী ও কৃষিবিজ্ঞানী আচার্য অসীমানন্দ অবধূতকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল৷ সেই ছটকা গ্রামে গত ২রা এপ্রিল দুর্গাপদ মণ্ডলের বাড়ীর সামনে ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী অখণ্ড কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ ১ তারিখ বিকেল ৩টা থেকে ২ তারিখ বিকেল ৩টা পর্যন্ত কীর্ত্তন চলে৷ প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী এই কীর্ত্তনে যোগদান করেন মিলিত সাধনার পর স্বাধ্যায় করেন আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত৷  আচার্য অসীমানন্দজীর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনার্থে সবাই এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন৷ এরপর অসীমানন্দজীর স্মৃতিচারণ করেন আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত ও আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত ও অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা ৷প্রসাদ গ্রহণের পরে সবাই নগর কীর্ত্তনে বের হন আচার্য মুক্তানন্দজী বলেন---এখানে পাশে ডিমডিহা পাহাড়ের পাদদেশে আনন্দমার্গের স্কুল খোলা হয়েছে এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখানে পড়াশোনা করে ৷
৫ই এপ্রিল ঃ ডামরুঘুটুর বিশিষ্ট আনন্দমার্গী রাধু সোরেন সবসময় সমাজের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরোধী ছিলেন৷ তাঁকেও সিপিএমের হার্মাদরা ১৯৯১ সালে চোরগালি ও ডামরুুঘুটুর মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল৷ ডামরুঘুটুতে তাঁর স্মৃতিতে একটি ভবন নির্মিত হয়েছে ও সেখানে আনন্দমার্গের স্কুল চলছে ৷এখানে এদিন আনন্দমার্গীরা মিলিত হয়ে অখণ্ড কীর্ত্তন ও মিলিত সাধনা করেন৷ আচার্য মুক্তানন্দ অবধূত, আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত ও স্থানীয় আনন্দমার্গীরা রাধুদার স্মৃতিচারণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন ৷
তত্ত্বসভা
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ ১০ই মার্চ সিধি পঞ্চায়েতের জেলাডি গ্রামে মহিলাদের নিয়ে আনন্দমার্গের এক তত্ত্বসভার আয়োজন করেন পঞ্চায়েত প্রমুখ শ্রী সুরেশ কেওট ও বিশিষ্ট আনন্দমার্গী কৌশিক সিং৷ ওই সভাতে উমানিবাসের রেক্টর অবধূতিকা আনন্দ সুমিতা আচার্যা আধ্যাত্মিক আলোচনা করেন৷ পরে আলোচনার পর তিনি মেয়েদের যোগ সাধনা শেখান৷